মিনোরির দুই কোম্পানির মধ্যে এমারেল্ড অয়েলের দর ৯.৫৫ শতাংশ ও ফু ওয়াং ফুডসের ৬.৭৫ শতাংশ কমেছে।
Published : 18 Jul 2023, 03:49 PM
ছয় কর্মদিবস পর লেনদেন আবার হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়ালেও বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগ হতাশ।
সপ্তাহের শুরুতে উত্থান হলেও টানা দুই দিন সূচকের পতন হল, সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার পতনের পরিমাণ আরও বেশি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১১৬টির দর। সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স কমল ১০ পয়েন্ট। আগের দিন ৮৩ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছিল ১১৩টি।
সবচেয়ে বেশি ১৯২টি কোম্পানির দর ছিল ফ্লোর প্রাইসে আগের দিনের দরে। ঈদুল ফিতরের পর থেকে পুঁজিবাজার একটু একটু করে গতি ফিরে পেতে থাকলেও এখনও প্রায় অর্ধেক কোম্পানিই সর্বনিম্ন শেয়ারদরে পড়ে আছে।
এদিন সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৪ কোটি ৫৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১০৮ কোটি টাকা বেশি।
গত ১০ জুলাই এক মাস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও ঢালাও দরপতন হয়। এর দুইদিন পরই লেনদেন ছয়শ কোটির ঘরে নেমে আসে। পরে বীমা খাত ঘুরে দাঁড়ালে লেনদেন আবার বাড়তে থাকে।
আগের দিনের মতই বড় মূলধনী কোম্পানি স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জ হোলসিম, মিডল্যান্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকের ক্রেতা দেখা গেছে। ব্যাংক খাতের আরও কিছু কোম্পানিতে একটু একটু করে বাড়ছে আগ্রহ।
ফের লেনদেনে সেরা খাদ্য
পুঁজিবাজারে এখন সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে খাদ্য খাতে। মঙ্গলবারও লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে এই খাতটিই। মোট লেনদেনের ২২.৫৩ শতাংশই হয়েছে একটি খাতে।
২১টি কোম্পানির ২০১ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেও ৫টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৩টির দর। বাকি তিনটি ছিল আগের দিনের দরে।
সবচেয়ে বেশি পতন হওয়া তিনটি কোম্পানির মধ্যে দুটিই এ খাতের।
দ্বিতীয় অবস্থানে আগের দিনের মতই বীমা খাত। লেনদেন হয়েছে প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে জীবন বীমায়, সাধারণ বীমার লেনদেন ছিল ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
টানা দরপতনে থাকা জীবন বীমায় একটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১০টির দর। তিনটি ছিল আগের দিনের দরে, একটির লেনদেন হয়নি।
সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানির মধ্যে দর বৃদ্ধি ও কমার সংখ্যা সমান, ১৫টি করে। ১১টি ছিল আগের দিনের দরে, একটির ক্রেতা ছিল না।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে হাতবদল হয়েছে ৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ১২টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৯টির, ১৮টি ছিল আগের দিনের দরে।
চতুর্থ স্থানে থাকা বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা, ছয়টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৯টির দর, আগের দিনের দরে ছিল ৪০টি কোম্পানি, তিনটির লেনদেন হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে চাঙা হয়ে ওঠা ওষুধ খাতে লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৩টির দর, ১৬টি ছিল আগের দিনের দরে।
বিবিধ ও এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬৪ লাখ করে এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। বাকি সব খাতে লেনদেন ছিল ৫০ কোটি টাকার কম।
মিনোরির দুই কোম্পানির শেয়ারের বড় পতন
আগের দিনের ধারাবাহিকতায় এমারেল্ড অয়েল ও ফু ওয়াং ফুডসের শেয়ারে দরপতন হয়েছে। পতনের হার এদিন ছিল আরও বেশি।
এর মধ্যে তুমুল আলোচিত এমারেল্ড অয়েলের দর কমেছে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে প্রায় ১০ শতাংশ।
মার্চের শেষে এই কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩০ টাকা, গত সপ্তাহে তা উঠে যায় ১৮৮ টাকায়।
পাঁচ বছর পর উৎপাদনে ফিরে শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা এবং পরে ৫০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণার আগে-পরে হয় এই উত্থান।
২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর যখন এমারেল্ডের রমরমা ছিল, তখনও শেয়ারদর এতটা বাড়েনি।
কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৭ টাকা কমে স্থির হয়েছে ১৫৪ টাকায়। আগের দিনও কমেছিল ৫ টাকা ২০ পয়সা।
মিনোরির নিয়ন্ত্রণে থাকা ফুওয়াং ফুডস দর হারিয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ, যা আগের দিন দর হারায় ৮ শতাংশের কিছুটা বেশি।
গত ২ জুলাইও দর ছিল ফ্লোর প্রাইস ২৫ টাকা ২০ পয়সায়, রোববার হয়ে যায় ৪৬ টাকা ৯০ পয়সা, তবে দিন শেষে স্থির হয় ৪৩ টাকা ৫০ পয়সায়। দুই দিনের পতনে শেয়ারদর নেমে এল ৩৭ টাকা ৩০ পয়সায়।
১ কোটি ৭১ লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে এদিন।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা
এই তালিকায় প্রাধান্য ছিল প্রকৌশল খাতের। ১০টি কোম্পাটির চারটিই এক খাতের। দুটি কোম্পানি ছিল খাদ্য খাতের, বাকিগুলো বীমা, ব্যাংক, কাগজ ও বস্ত্র কোম্পানি।
সবচেয়ে বেশি ৯.৯৫ শতাংশ দর বেড়েছে সাধারণ বীমা কোম্পানি এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের।
প্রকৌশলের চার কোম্পানির মধ্যে সার্কিট ব্রেটার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে লোকসানি আজিজ পাইপস ও খান ব্রাদার্স, দুর্বল কোম্পানি দেশবন্ধু পলিমার এবং স্বল্প মূলধনী কে অ্যান্ড কিউ।
খাদ্য খাতের আরডি ফুড সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে এবং বিট হ্যাচারি সার্কিট ব্রেকার ছুঁলেও সেখান থেকে কিছুটা কমে শেষ করে লেনদেন।
মিডল্যান্ড ব্যাংক টাকা দুই দিন লেনদেন শেষ করল সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে। ৯.৫৫ শতাংশ বেড়েছে বন্ধ কোম্পানি খুলনা পেপারের শেয়ারদর।
বস্ত্র খাতের সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর বেড়েছে ৭.৯১ শতাংশ।
পতনের শীর্ষে যারা
এই তালিকার শীর্ষে ছিল ঠিক ঠিক ১০ শতাংশ দর হারনো রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমারেল্ড অয়েলের দর কমেছে ৯.৯২ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি দর কমতে পারত না কোম্পানিটির। তৃতীয় অবস্থানে ছিল ফু ওয়াং ফুডস।
গত সপ্তাহে লাফ দেওয়া ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও ডেল্টা লাইফের অবস্থান ছিল এর পর। দুটি কোম্পানিই দর হারিয়েছে ৫ শতাংশের বেশি।
পরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ওরিয়ন ইনফিউশন, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল ফিড মিলস, লুব রেফ ও ফার ক্যামিকেলস। প্রতিটি কোম্পানিই দর হারিয়েছে ৪ শতাংশের বেশি।