গুজবের ধাক্কা শেষে পুঁজিবাজারে বীমা খাতের রমরমা

সংশোধন কাটিয়ে স্বরূপে ফিরল বীমা খাত। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ২০টি কোম্পানির ১৮টিই এই খাতের। লেনদেনেও সবাইকে ছাড়িয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2023, 09:32 AM
Updated : 7 June 2023, 09:32 AM

বড় দরপতন হারিয়ে ফেলা সূচকের অর্ধেকটা উদ্ধার হলেও দুই সপ্তাহের সর্বনিম্ন লেনদেন দেখল দেশের পুঁজিবাজার।

বুধবার যতগুল কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে, বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।

দর হারিয়েছে ৪৭টি কোম্পানি, বেড়েছে ১২৩টির। ১৭৮টি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।

দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২২ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৭৮০ কোটি টাকার কিছু বেশি।

গত ২২ মের পর এত কম লেনদেন হয়নি। বরং নিয়মিত বাড়তে বাড়তে চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে তা ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচক দেখে বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে আশাবাদী হয়ে উঠতে থাকেন। 

তবে মঙ্গলবার আসে ধাক্কা। বেশিরভাগ বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার মধ্যেও সূচক ৪০ পয়েন্ট পড়ে যায়। ২৫টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছিল ১৫৭টির দর।

পরে প্রকাশ পায়, পুঁজিবাজারে ব্যক্তি শ্রেণির মূলধনী আয়ের ওপর কর বসছে, এমন একটি গুঞ্জনে প্রভাবিত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

গত বছরও বাজেট প্রস্তাবের পর এমন গুজবে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। পরে প্রকাশ পায় মূলধনী আয়ের ওপর এই কর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য।

তবে এবারের বিষয়টা একটু অন্য রকম বলে জানিয়েছেন ডিএসইর স্টক ব্রোকারদের সমিতি ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অর্থবিলে আয়কর অধ্যাদেশের ৮৪ ধারা বাতিলের কথা বলা হয়েছে। সেটি বাতিল হলে ২০১৫ সালে এনবিআরের দেওয়া এসআরওর কী হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই এসআরও দ্বারাই ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের মূলধনী আয় করমুক্ত করা হয়।

“কেউ কেউ বলছে, মূল আইন বাতিল হয়ে গেলে এসআরও বাতিল হয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলছে, এমনটা হওয়ার কারণ নেই। মূল কথা হল আমরা নিজেরাও বিভ্রান্ত। বিনিয়োগকারীরাও বিভ্রান্ত। এ কারণেই আজ লেনদেন কমেছে বলে মনে হয়।”

এ বিষয়টার ব্যাখ্যা কারা দেবে- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা এনবিআর দেবে। কারণ, আমরা বা ডিএসই দিলে তো এটা হবে না। তাদেরকে নানাভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। একটা ব্যাখ্যা এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

বীমা খাতের দল বেঁধে উত্থান

এদিনও লেনদেনের শীর্ষে বীমা খাত। এর মধ্যে আবার জীবন বীমা কোম্পানিতেই বিনিয়োগগকারীদের আগ্রহ বেশি।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকাতেও এ খাতের প্রাধান্য। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির ৯টি এবং ২০টি কোম্পানির ১৮টি এবং ৩০টি কোম্পানির ২৫টিই বীমা খাতের।

মোট লেনদেনের ৩৪ শতাংশই হয়েছে এই একটি খাতে। এর মধ্যে জীবন বীমায় হয়েছে ২৩ শতাংশের বেশি, সাধারণ বীমায় ১১ শতাংশের কাছাকাছি।

জীবন বীমার ১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টি, একটি হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দরে। এসব কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১৭০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ৫টি কোম্পানির দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে, আরও একটির দর ৯ শতাংশের বেশি, একটির দর ৮ শতাংশের বেশি, দুটি সাত শতাংশের বেশি, একটি করে কোম্পানির দর ৬, ৫, ৩ ও ২ শতাংশ বেড়েছে।

সাধারণ বীমায় বেড়েছে ৪০টি কোম্পানির দর। দুটি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে। লেনদেন হয়েছে প্রায় ৭৯ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সাতটি কোম্পানির দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। তিনটির দর ৮ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৭ শতাংশের বেশি, চারটি করে কোম্পানির দর ৬ ও ৫ শতাংশের বেশি, পাঁচটির দর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য খাতে লেনদেন হয়েছে ১১ শতাংশ। দর বেড়েছে ১১টি কোম্পানির। ৫টির দর ছিল অপরিবর্তিত, ৫টির দর কমেছে।

তৃতীয় অবস্থানে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। যেখানে দর বেড়েছে ৭টির, ১২টি আগের দিনের দরে এবং তিনটি দর হারিয়ে হাতবদল হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি, প্রকৌশল, ওষুধ ও বিবিধ খাত ছিল এর পরের পর্যায়ে। ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে এখনও আগ্রহ পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা।

শীর্ষ দশে বঙ্গজ ছাড়া সবই বীমার

সবচেয়ে বেশি ১০ শতাংশ দর বেড়েছে খাদ্য খাতের বঙ্গজ এবং বীমা খাতের ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের।

সোনালী লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্সুরেন্স ছিল পরের অবস্থানে। এগুলোর দর একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ছিল, বেড়েছে ততটাই।

সূচকের উত্থানে দরপতন যেগুলোর

সবচেয়ে বেশি ৬.৮০ শতাংশ দর হারিয়েছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। শীর্ষ দশের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ন্যাশনাল টি কোম্পানি দর হারিয়েছে ২.৩৫ শতাংশ।

বাকি আটটি কোম্পানির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি। এগুলো হলো সিলকো ফার্মা, সোনালী আঁশ, রেকিট বেনকিনজার, খান ব্রাদার্স পিপিওভেন, আরগন ডেনিম, মেট্রো স্পিনিং মিলস, আরামিট সিমেন্ট ও হাওয়েল টেক্সটাইল।

এগুলোর দর ১.২২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১.৮৬ শতাংশ কমেছে।