লেনদেনে সব খাতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকাতেও দেখা গেছে এই খাতকে।
Published : 15 May 2023, 03:16 PM
মাসের পর মাস ফ্লোর প্রাইস বা আশেপাশে লেনদেন হওয়া সাধারণ বীমা খাতের ঝলক দেখা গেল পুঁজিবাজারে।
আগের দুটি কর্মদিবসেই এই খাতের ‘আড়মোড়া ভাঙার’ ইঙ্গিত মিলেছিল। সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার দেখা গেল এই খাতের কোম্পানিগুলোর উল্লম্ফন।
লেনদেনে সব খাতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকাতেও দেখা গেছে এই খাতকে।
সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে– এমন ১০টি কোম্পানির আটটিই সাধারণ বীমা খাতের। শীর্ষ ২০ কোম্পানির মধ্যে একটি খাতেরই কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি।
২০২০ সালের জুলাই থেকে এক বছরেরও বেশি সময় চাঙা থাকার সময় এমন চিত্র দেখা যেত। সে সময় দল বেঁধে সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানির দর বৃদ্ধির পর অবশ্য ভুগেছেন বিনিয়োগকারীরা।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দল বেঁধেই কমতে থাকে এ খাতের শেয়ারদর। দেড় বছরের কিছু বেশি সময়ে এই খাতের কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটি দর হারিয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।
চাঙা থাকার সময় যে খাতে এক দিনে সাতশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন দেখা গেছে, সেই খাতে লেনদেন নেমে আসে ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার মধ্যে।
তবে পাঁচ বছর পর যানবাহনে তৃতীয় পক্ষের বীমা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ বীমা খাতে ৬৭ কোটি টাকার লেনদেন হতে দেখা যায়। এর মধ্যে ৩৮ কোটি ছিল সাধারণ বীমায় আর ২৯ কোটি টাকা ছিল জীবন বীমায়।
রোববার খাতটি লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে। এদিন জীবন বীমায় লেনদেন হয় প্রায় ৫২ কোটি টাকা, আর সাধারণ বীমায় ৩০ কোটি টাকার বেশি।
সোমবার সাধারণ বীমা এককভাবে ছাড়িয়ে গেল সব খাতকে। সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৮৩ কোটি টাকার বেশি। জীবন বীমায় আরও প্রায় ৪৩ কোটি মিলিয়ে খাতটিতে মোট লেনদেন ১২৬ কোটি টাকার বেশি।
ঈদের আগে চাঙ্গা হয়ে ওঠা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৮০ কোটি টাকার বেশি আর তথ্য প্রযুক্তি খাতে লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি টাকার বেশি। বস্ত্র খাত ছিল চতুর্থ অবস্থানে। লেনদেন হয়েছে ৫১ কোটি টাকার বেশি।
সাধারণ বীমার এমন উত্থানের দিনও পুঁজিবাজারে কমেছে সূচক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৩ পয়েন্ট হারানোর মধ্য দিয়ে টানা তিন দিন নেতিবাচক থাকল পুঁজিবাজার। বৃহস্পতিবার ৬ পয়েন্টের পর রোববার ডিএসইএক্স কমে ৯ পয়েন্ট।
তবে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সারা দিনে হাতবদল হয়েছে ৬৫৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা, আগের দিন যা ছিল ৬৩৬ কোটি টাকার কিছু বেশি।
এদিন বেড়েছে ৭০টি কোম্পানির দর, কমেছে ৮৪টির আর ১৯০টি কোম্পানির শেয়ার আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে কেবলই বীমা খাত
দেড় মাসের মধ্যে শেয়ারদর প্রায় তিন গুণ হয়ে যাওয়া এমারেল্ড অয়েলের দর আবারও সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি গিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। সেটি হল এমারেল্ড অয়েল।
শীর্ষ দশের মধ্যে আটটিই সাধারণ বীমার আর একটি জীবন বীমা খাতের, যেটি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর টানা তিন দিন দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে।
এর মধ্যে ১০ শতাংশ দর বেড়েছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বেড়েছে ৯.৯১ শতাংশ।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ও ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি।
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের দর ৮ শতাংশের বেশি, এশিয়া প্যাসিফিক ও কর্ণফুলীর দর বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি।
একাদশ থেকে বিংশতম স্থানে থাকা দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৬ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি।
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, বিজিআইসি, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।
সাধারণ বীমা খাতের আরও তিনটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি এবং সাতটির দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
সব মিলিয়ে এই খাতে দর বেড়েছে ৩৫টি কোম্পানির, ৫টি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে আর একটি দর হারিয়েছে।
জীবন বীমা খাতে ৫টির দর বেড়ে, ৬টির দর অপরিবর্তিত থেকে এবং তিনটি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে।
জেমিনি এখন উল্টো দৌড়ে
পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে ৪৫৬ টাকা থেকে ৯৬১ টাকায় উঠে যাওয়ার পর তদন্তের ঘোষণায় জেমিনি সি ফুডের দর কমছেই।
এক দিনে সাড়ে ৭ শতাংশ দাম কমা সম্ভব ছিল কোম্পানিটির। কমেছে ততটাই। আগের দিনের চেয়ে ৬৩ টাকা ২০ পয়সা হারিয়ে দর স্থির হয়েছে ৭৮০ টাকা ৫০ পয়সায়।
ব্যাংক খাতে প্রায় সব কোম্পানির ঘুমিয়ে থাকার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ দর বেড়ে চমক দেখানো মিডল্যান্ড ব্যাংকের দরও কমেছে অনেকটাই এরই হারে।
দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রায় সব কোম্পানিই স্বল্প মূলধনী। বাকি দুটি দুর্বল কোম্পানি।
এর মধ্যে জুন স্পিনার্স ৭.১১ শতাংশ, সোনালী আঁশ ৬.৫৪ শতাংশ, ইস্টার্ন কেবলস ৫.৩৪ শতাংশ, এপেক্স ফুডস ৪.৩২ শতাংশ, এপেক্স স্পিনিং মিলস ৪.২৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।
লোকসানী কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ৫.৩০ শতাংশ, দেড় বছরেও বেশি সময় ধরে প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ৪.৮৭ শতাংশ এবং জুনে মেয়াদ শেষ হতে চলা জিবিবি পাওয়ারের দর কমেছে ৪.৩৪ শতাংশ। হঠাৎ লাফ দিয়ে ২০ শতাংশের বেশি দর বেড়ে যাওয়ার পর আবার ফ্লোরের কাছাকাছি নেমে এল জিবিবির দর।