সূচক কমেছে ২৬ পয়েন্ট, দর হারিয়েছে ২৬৬টি কোম্পানির শেয়ার।
Published : 10 Jul 2024, 05:44 PM
টানা ছয় দিন উত্থানের পর বিক্রির চাপে সূচক পতন দেখল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, দর হারাল লেনদেনে থাকা দুই তৃতীয়াংশ শেয়ার।
বুধবার সকালে লেনদেন শুরুর পর কেনাবেচার প্রবণতার মধ্যে এ বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। এক পর্যায়ে সূচক ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্ট অতিক্রম করে।
কিন্তু শেষ বেলায় শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেলে লেনদেন শেষ হয় সূচকের ঘরে ৫ হাজার ৫৬৮ পয়েন্ট নিয়ে, যা আগের দিনের চেয়ে ২৬ পয়েন্ট কম।
এর আগে গত ১৩ মে ডিএসইএক্স ৫ হাজার ৬৬৬ পয়েন্ট অতিক্রম করেছিল। মাঝের সময়টায় সূচক নেমেছিল ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্রদের ডাকা অবরোধের কারণে কিছু বিনিয়োগকারী বাজারে আসতে পারেননি, এটা ঠিক। তবে এখন অনলাইনে লেনদেন হওয়ায় অবরোধ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি পুঁজিবাজারে। মূলত মূনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় ছয় দিন পরে দর সংশোধনের গেল বাজার।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই দর সংশোধনের বৃত্তে থাকা পুঁজিবাজার ২০২২ সালের শুরুর দিকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু ওই বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা, দেশে রিজার্ভে পতন, ডলার সংকটসহ নানা কিছুর প্রভাব পড়ে বাজারে।
এর মধ্যে নতুন অর্থবছর থেকে পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকা মূলধনি মুনাফায় কর বসানোর প্রস্তাব ও পরিচালকদের শেয়ার হস্তান্তরে উৎসে কর বাড়ানোর খবরে আবার দরপতন শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী বাজেটে এই বিষয়টি ফিরিয়ে আনেন।
বাজেট প্রস্তাবের দ্বিতীয় সপ্তাহের গত ১২ জুন থেকে পুঁজিবাজারে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে, শেয়ারগুলো হারানো দর একটু একটু করে ফিরে পেতে থাকে।
নতুন অর্থবছরের গত ৬ কর্মদিবসেই সূচকে ২৬৬ পয়েন্ট যোগ হওয়ার পরে সপ্তম দিনে এসে সংশোধন হল। তাতে গত সাত দিনে সূচকে মোট যোগ হল ২৪০ পয়েন্ট।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে কেনার দিকে আগ্রহ ছিল বিনিয়োগকারীদের। এ কারণে প্রথমভাগে লেনদেন বেড়েছিল। সূচকও বাড়ছিল।
“কিন্তু তারপরই বিক্রি করতে শুরু করেন বড় একটি শ্রেণি। তারা মুনাফা তুলেছেন আজ। এতে শেষবেলায় বিক্রির চাপ বাড়লে সূচক পড়ে যায়। এটি বাজার সংশোধন, ভয়ের কিছু নেই।’’
দিন শেষে ৯৬৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে ডিএসইতে। আগের দিন হাজার কোটি টাকার ঘর পার হয়েছিল।
লেনদেনে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ২৬৬টির। ৩০টি কোম্পানির শেয়ার আগের দরে লেনদেন হয়েছে।
এদিনের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ঔষধ ও রসায়ন খাত। মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশের সামান্য বেশি ছিল ৩৩টি কোম্পানির। মুনাফা তুলে নেওয়ায় এ খাতের ২৪টি কোম্পানিই দর হারিয়েছে, বেড়েছে ৯টির।
দিনের লেনদেনে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতের অবদান সাড়ে ১১ শতাংশ। এ খাতের ২১টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়ে কমেছে ১৫টির। আর তৃতীয় অবস্থানে নেমেছে আগের দিনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বস্ত্র খাত।
একক কোম্পানি হিসেবে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড, এরপরই ছিল ওরিয়ন ফার্মা।
দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা বা ১০ শতাংশের মত দর বেড়েছে বিতর্কিত জিকিউ বলপেনের শেয়ারের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ দর বেড়েছে দেশবন্ধু পলিমারের। এছাড়া দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে নাম লিখিয়েছে ইন্ট্রাকো, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস-জিএইচএল।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন কোনো কোম্পানির শেয়ারদর ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। এদিন সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস-বিবিএস ও লিন্ডে বিডি।