নেদারল্যান্ডস ম্যাচে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের লাগাম মুঠোয় রাখার দায়িত্ব থাকবে ২৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের কাঁধে।
Published : 08 Dec 2022, 12:05 PM
সৌদি আরব, মেক্সিকো ম্যাচে তার পারফরম্যান্স বড্ড সাদামাটা। পোল্যান্ড ম্যাচে দেখালেন কিছুটা ঝলক। শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিরলেন চেনা রদ্রিগো দে পল। উপহার দিলেন আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স। কাতার বিশ্বকাপের পথচলায় ২৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ফিরে পেতে শুরু করেছেন নিজের হারানো ছন্দ; ফিরছেন পুরান আস্থার জায়গায়। তাতে স্বস্তির সুবাতাস বইছে আর্জেন্টিনা শিবিরেও।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শুক্রবার সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। এ ম্যাচের আগে অবশ্য চাউর হয়েছে দে পলের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের খবর। আতলেতিকো মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দিয়েছেন সুখবর-সবকিছু আছে ঠিকঠাক।
গ্রুপ পর্বের শুরুর দিকে অবশ্য ঠিকঠাক ছিল না তার পারফম্যান্স। সৌদি আরবের বিপক্ষে লিওনেল মেসি দশম মিনিটে দলকে এগিয়ে নিলেও মাঝমাঠে পায়ের নিচে যেন মাটি খুঁজে পাননি দে পল। লেয়ান্দ্রো পারেসেদের সঙ্গে জমেনি তার জুটি। তাই মধ্যমাঠের লাগামটা ঠিক থাকেনি আর্জেন্টিনার মুঠোয়। দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে সৌদি আরবের বিপক্ষে ধরাশায়ী হয়ে মাঠ ছাড়ে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
মেক্সিকোর বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়েও মাঝমাঠের মধ্যমণি হতে পারেননি দে পল। আক্রমণ শুরুর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বারবার তান কেঁটে যাওয়ায় আর্জেন্টিনার গোল পাওয়ার অপেক্ষা বিরতি পেরিয়ে চলে যায় দ্বিতীয়ার্ধে। তবে মেসি ও এনসো ফের্নান্দেসের গোলে জিতে স্কালোনির দল। জয়ের আনন্দ আর সৌদি ম্যাচের হারে জেগে ওঠা শঙ্কার মেঘ কেঁটে যাওয়াটা কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দেয় দে পলের বিবর্ণতা।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে হারানো ছন্দ কিছুটা ফিরে পান আতলেতিকো মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার। ‘বক্স টু বক্স’ ছোটাছুটি করে আক্রমণের বলের যোগান দিতে পারেন মোটামুটি। আলেক্সিস মাক আলিস্তের ও হুলিয়ান আলভারেসের গোলে আর্জেন্টিনা জিতে যায়। পার হয় গ্রুপ পর্বের বৈতরণী।
পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা না থাকলেও দে পলে আস্থা রাখেন স্কালোনি। অবশেষে আর্জেন্টিনা কোচ প্রতিদানও পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে। প্রতিপক্ষের দ্রুতগতির খেলোয়াড়দের নিয়ে ম্যাচের আগে সতর্কতার কথা বলেছিলেন দে পল নিজেই, কথাও রাখেন লেকি-মুইদের খেলায় জায়গা কখনও সংকুচিত করে, কখনও তান কেটে দিয়ে। আর্জেন্টিনাও মরুর বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো প্রথমার্ধে পায় গোলের দেখা। ২-১ ব্যবধানের জয়ের হাসি নিয়ে উঠে যায় কোয়ার্টার-ফাইনালে।
দে পলের সামনে এবার ডাচ পরীক্ষা। গত চার ম্যাচের সবগুলোতে পুরো নব্বই মিনিট খেলা এই মিডফিল্ডারকে সামলাতে হবে ‘টোটাল ফুটবল’-এর উত্তরসূরি ফ্রেংকি দি ইয়ং, ডেভি ক্লাসেনদের। গত চার ম্যাচে কখনও দি ইয়ং, ক্লাসেন নিজেরা গোল করেছেন, কখনও মেমফিস ডিপাই, ডালে ব্লিন্ডদের আক্রমণ শুরুর পথটা রেখেছেন মসৃণ। তাই পাসিংয়ে গতি, স্কিলের পসরা মেলে ধরার সঙ্গে দেল পলকে কার্যকারীও হতে হবে আগের মতো।
সে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন দে পল। চোটের খবর উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “চলো আর্জেন্টিনা, একসঙ্গে এগিয়ে যায়।” ১৯৮৬ সালের পর আরেকটি বিশ্বকাপের জন্য এক বুক হাহাকার নিয়ে মরুভূমিতে আসা আর্জেন্টাইন সমর্থকরা সামনের কঠিন পথে আস্থা রাখতেই পারেন ৪৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই মিডফিল্ডারের উপর।
কেননা, চড়াই-উৎরাই পেরুনোর শিক্ষা, দুঃসময়ে সবকিছুর লাগাম মুঠোয় রাখার বিদ্যা কিন্তু তিনি রপ্ত করেছেন শৈশবেই। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর দে পল যে তার মা’কে দেখেছেন দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংসারের ঘানি টানতে, পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে। তিনিও তো আর্জেন্টাইনদের মুখে হাসি ফোটাতে মরিয়া।