ফিনল্যান্ডের মতো বাংলাদেশেও ‘সুখী’ তারিক

লাল-সবুজের জার্সিতে প্রথম গোল করাটা বিশেষ কিছু, বললেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই বাংলাদেশি ডিফেন্ডার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2023, 02:17 PM
Updated : 26 March 2023, 02:17 PM

কদিন আগে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ফিনল্যান্ড শীর্ষে। তালিকার ১৩৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে, ১১৮তম। তবে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান যতই নিচের দিকে থাক না কেন, ফিনল্যান্ড প্রবাসী ডিফেন্ডার কাজী তারিক রায়হান এখানে মোটেও ‘দুঃখী’ অনুভব করেন না। বাংলাদেশ তার কাছে সুখী দেশ।

২২ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ফিনল্যান্ডে। খেলেছেন দেশটির বয়সভিত্তিক দলেও। কিন্তু তার শেকড় পোতা বাংলাদেশে। তাই লাল-সবুজের জার্সিই বেছে নিয়েছেন তিনি। ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশের রক্ষণও সামলাচ্ছেন দারুণ নির্ভরতায়।

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে দলের রক্ষণ আগলে রাখার পাশাপাশি হেডে গোলও করেন তারিক। তার গোলটিই শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে নির্ণায়ক। সিশেলসকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে শুভ সূচনা করে বাংলাদেশ।

সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ মাঠে গড়াবে আগামী মঙ্গলবার। এ ম্যাচ সামনে রেখে রোববার জেলা স্টেডিয়ামেই প্রস্তুতি সেরেছে বাংলাদেশ। অনুশীলন শেষের আলাপচারিতায় তারিক জানালেন জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোলের অনুভূতি, বাংলাদেশের মানুষের মুখে জয়ের হাসি ফোটানোর তৃপ্তির কথা।

“(গোল পাওয়া) বিশেষ মুহুর্ত! বিশেষ মুহুর্ত! খুবই আনন্দিত। আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তাই আমি খুবই আনন্দিত। প্রতি ম্যাচেই আমার মূল লক্ষ্য থাকে গোল হজম না করা। তবে যদি ম্যাচে গোল পেয়ে যাই, এটা আমার জন্য একটা বাড়তি পাওয়া।”

“বাসায় কথা হয়েছে; তারা সকলেই আমার জন্য আনন্দিত। বাংলাদেশের জার্সি আমার কাছে বিশেষ কিছু। দলের জন্য কিছু করতে পারলে সকলেই আনন্দিত হয়। আমি যখন এখানে এসেছিলাম সবছিু আমার কাছে অপরিচিত ছিল। এখন আমি সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছি। এখন সবকিছু আগের চাইতে আমার জন্য অনেক সহজ মনে হচ্ছে। এছাড়া যখন ফুটবলের মধ্যে থাকি, তখন অন্য কিছু নিয়ে ভাবার সময় থাকে না।”

প্রথম ম্যাচে তারিক হয়ে উঠেছিলেন দলের ত্রাতা। কিন্তু গোল এনে দেওয়া যাদের দায়িত্ব সেই ফরোয়ার্ডরা ছিলেন বিবর্ণ। লম্বা সময় পর দলে ফেরা আমিনুর রহমান সজীব, সিলেটের ‘লোকাল বয়’ মতিন মিয়া কিংবা রাকিব হোসেন পাননি জালের দেখা। তারিক অবশ্য আক্রমণভাগের সতীর্থদেরও আগলে রাখলেন। জানালেন জয়ের ধারায় থাকার লক্ষ্যও।

“ফুটবল এখন অনেকটাই বদলে গেছে। এখন যে কেউই গোল করতে পারে। সেট পিস কিংবা ওপেন প্লে থেকে যে কারোরই গোল করার সুযোগ রয়েছে। আমি মনে করি না গোলটা আমি ভাগ্যের জোরে পেয়েছি। এটা পরিকল্পনার অংশ ছিল এবং আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।”

“আমরা আগের ম্যাচের ভুলগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী ম্যাচে আরও ভালো কিছু করতে চাই। জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।”

রক্ষণে সব পজিশনেই খেলতে পারদর্শী তারিক। প্রথম ম্যাচে তপু বর্মনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামলেছেন দলের ডিফেন্স। তপুর সঙ্গে বোঝাপড়া দারুণ বলে জানালেন তিনি।

“তপু ভাইয়ের সাথে এর আগেও সেন্টার-ব্যাক পজিশনে খেলেছি। তার সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা দারুণ। আমি জানি, সে কি চায় এবং সেও জানে আমি কি চাই। সেন্টার-ব্যাকদের মধ্যে এই বোঝাপড়াটা খুবই জরুরি। এটা আমাদের মধ্যে রয়েছে।”

“কোন পজিশনে খেলছি, এটা আমার কাছে বড় বিষয় না। যেই পজিশনেই খেলি আমি দলকে আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি। এছাড়া পজিশন বদলে খেলতে আমার তেমন কোনো সমস্যা মনে হয় না। সেন্টার-ব্যাক, লেফট ব্যাক কিংবা রাইট-ব্যাক সব পজিশনেই আমি দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি।”

শুরুতে বাংলাদেশে মানিয়ে নেওয়া ছিল কষ্টকর। কিন্তু এখন তারিক পিতৃভূমিতেও অনুভব করেন ফিনল্যান্ডের মতোই সুখ, স্বস্তি, আনন্দ।

“আমি এখানে সুখী। প্রতিদিনের জীবনযাপনে আমি সুখ অনুভব করি। আমার চারপাশের যে মানুষগুলো থাকে তারা আমাকে আনন্দ দেয়, সুখ অনুভব করায়, আমার কাছে বাংলাদেশ সুখী জায়গা।”