চোখে জল নিয়ে গাভি মাঠ ছাড়ার সময়ই বোঝা যাচ্ছিল চোট খুব মারাত্মক। পরিস্থিতি কতটা খারাপ বোঝার জন্য রাতেই বার্সেলোনা পাঠানো হয়েছে তরুণ এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে। তবে প্রাথমিকভাবে লম্বা সময়ের জন্য তাকে হারানোর শঙ্কায় কোচ ও সতীর্থরা।
ইউরো বাছাইয়ের ম্যাচে রোববার জর্জিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করেছে স্পেন। ম্যাচের প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময় বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সময় বাজেভাবে পড়ে গিয়ে ডান হাঁটুতে চোট পেয়েছেন গাভি।
সাইপ্রাসকে হারিয়ে গত শুক্রবারই ইউরোর চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিশ্চিত করে স্পেন। ‘নিয়মরক্ষার’ ম্যাচে নয় পরিবর্তন আনেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তা। টিকে যাওয়া দুই খেলোয়াড়ের একজন গাভি।
ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়ায় স্প্যানিশ কোচ জানান, এই তরুণের চোটে এই জয় বিস্বাদ লাগছে তাদের কাছে।
“প্রাথমিকভাবে চোট খুব গুরুতর মনে হচ্ছে। সে খুবই উদ্বিগ্ন। আমার জীবনে এটাই সবচেয়ে তেতো জয়।”
“আমরা পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করছি। আরও পরীক্ষার জন্য স্পেনের স্পোর্টিং ডিরেক্টর আলবের্ত লুকের সঙ্গে সে এখন বার্সেলোনায় যাচ্ছে। আমরা বিধ্বস্ত। যেন আমরা ম্যাচ হেরেছি।”
বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ইএসপিএন জানিয়েছে, বার্সেলোনার ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার এসিএলে (এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট) চোট পেয়েছেন।
মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরেও থামছিল না গাভির কান্না। দে লা ফুয়েন্তে জানালেন, মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় নেই এই তরুণ।
“গাভি ভেঙে পড়েছে, পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ওর সঙ্গে এমন কিছু হতে ও চিন্তাও করতে পারেনি। অবশ্যই সে বিমর্ষ, আমরা সবাই ভেঙে পড়েছি। জীবনে যখন এগুলো ঘটে তখন এর কোনো ব্যাখ্যা থাকে না। হ্যাঁ, এটাই… এই খেলায় এটি আমার সবচেয়ে কঠিন ও বিষাদময় দিন।”
সতীর্থরাও বুঝতে পারছিলেন গাভির চোটের ধরন ভালো নয়। দলকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে নেওয়া গোলটি গাভির নয় নম্বর জার্সি তুলে ধরে উদযাপন করেন বার্সেলোনা সতীর্থ ফেররান তরেস।
“বাছাই পর্ব ভালোভাবে শেষ করার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা তবে। তবে এই জয়ের পর গাভির চোট যেন আমাদের জন্য হরিষে বিষাদ।”
“আশা করি সে এই ধাক্কা যতটা দ্রুত সম্ভব কাটিয়ে উঠবে। চোট পরিস্থিতি আমরা এখনও পুরোপুরি জানি না। সামনের দিনগুলোতে আমাদের দেখতে হবে, কী হয়। তবে গাভিকে আমি জানি, সে একজন যোদ্ধা, তবে আমাদের ধারণা এই চোট গুরুতর হতে পারে।”
এই মৌসুমে বার্সেলোনা ও স্পেনের হয়ে নিয়মিত খেলছেন গাভি। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার জন্য ক্লাবের হয়ে কেবল দুটি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। কেউ কেউ মনে করছেন, গাভির চোটের পেছনে অতিরিক্ত খেলার একটা ভূমিকা থাকতে পারে। তবে এই অভিযোগ মানছেন না স্পেন কোচ।
“এটা একটা দুর্ঘটনা, এটা দুর্ভাগ্য। এর সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলার কোনো সম্পর্ক নেই। সে খুব ভালো অবস্থায় ছিল। নিষেধাজ্ঞার জন্য আন্তর্জাতিক বিরতির আগে সে খেলেনি। সে সতেজ এবং খুব ভালো অবস্থায় ছিল। কোনো সমস্যা ছিল না।”
পেদ্রি ও ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের চোটের কারণে বার্সেলোনা কোচ শাভি এর্নান্দেসের কাছে গাভির গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছিল। তরুণ এই মিডফিল্ডারকে তিনি দেখছিলেন বার্সেলোনার ‘প্রাণ’ হিসেবে।
আন্তর্জাতিক বিরতির আগে ফিরেছেন পেদ্রি, এই সপ্তাহে ফিরতে পারেন ডি ইয়ং। এর মাঝেই গাভিকে হারানোর দুঃসংবাদ শুনলেন শাভি।
সামনে পোর্তো, আতলেতকি মাদ্রিদ ও লিগের শীর্ষ দল জিরোনার বিপক্ষে খেলবে বার্সেলোনা। এই ম্যাচগুলো চলতি মৌসুমে দলটির গতিপথ ঠিক করে দিতে পারে। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই সব লড়াইয়ে হয়তো দর্শক হয়ে থাকতে হতে পারে গাভিকে।