বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় টানা ৩১ ম্যাচের অজেয় যাত্রা থামল অস্কার ব্রুসনের দলের।
Published : 03 Feb 2024, 07:31 PM
নিজেদের অর্ধ থেকে বল পায়ে ছুটলেন মিনহাজুর আবেদিন রাকিব। সামনে-পেছনে তখন পাহারায় কিংসের তিন ডিফেন্ডার। সামনে থাকা বিশ্বনাথ ঘোষ চার্জ করতে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই রাকিব শট নিলেন বাঁ পায়ে। লাফিয়ে ওঠা গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোকে ফাঁকি দিয়ে বাতাসে ভেসে বল খুঁজে নিল জাল। এই গোলেই শেষ পর্যন্ত লেখা হলো মোহামেডানের দারুণ জয়।
সাধারণ কোনো জয় এটি নয়। চলতি মৌসুমে তো বটেই, সব মিলিয়েই নিজেদের আঙিনায় বসুন্ধরা কিংসের প্রথম হারের তেতো গল্প রচিত হলো রাকিবের ওই গোলে।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শনিবার কিংসকে ১-০ গোলে হারায় মোহামেডান। ৪০তম মিনিটে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া গোলটি করেন রাকিব।
নিজেদের মাঠে কিংসের ৩১ ম্যাচের অজেয় যাত্রা থামল এতে। চলতি প্রিমিয়ার লিগে টানা পাঁচ জয়ের আত্মবিশ্বাসে উড়তে থাকা অস্কার ব্রুসনের দলের প্রথম হারে জমে উঠল টেবিলের লড়াইও।
ছয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা, কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোহামেডান এখন তাদের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট পিছিয়ে।
ম্যাচে অবশ্য কখনই পিছিয়ে ছিল না মোহামেডান। শুরু থেকেই কিংসকে চাপে রাখতে শুরু করে তারা। চতুর্থ মিনিটে দারুণ সুযোগও পেয়ে যায় সাদা-কালো জার্সিধারীরা। আক্রমণের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মানিক হোসেন মোল্লা। রবসন দি সিলভা রবিনিয়োর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে এক ছুটে বক্সে চলে যায় মানিক। এরপর বড়িয়ে দেন ডান দিকে ফাঁকায় থাকা সুলেমানে দিয়াবাতেকে। কিন্তু অধিনায়কের শট চলে যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে।
মোহামেডানের দুয়ারে সুযোগ আবারও কড়া নাড়ে ২০তম মিনিটে। কিন্তু মুজাফ্ফর মোজাফ্ফরভের ফ্রি কিক ডান পোস্টে ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। তবে গোল না পাওয়ার হতাশা সঙ্গী হলেও মোহামেডান ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রাখে শক্ত করে।
৪০তম মিনিটে রাকিবের ওই দৃষ্টিনন্দন গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান। নিজেদের অর্ধ থেকে দিয়াবাত স্রেফ ছোট পাসে বল তুলে দিয়েছিলেন এই মিডফিল্ডারের পায়ে। বাকি কাজটুকু একেক প্রচেষ্টায় সারেন রাকিব।
বিরতির আগে মোহামেডানের জমাট রক্ষণ ভাঙতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন রবিনিয়ো। কিন্তু এই ব্রাজিলিয়ানের একটি শট বাইরের জাল কাঁপায়, অন্যটি উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম ভালো সুযোগ তৈরি করে কিংস। ৬২তম মিনিটে মিগেল দামাশেনোর ক্রসে বক্সে ফাঁকায় থাকা দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তোর বুলেট গতির হেড যায় পোস্টের বাইরে।
৭০তম মিনিটে রাকিবের ক্রসের নাগাল পেতে মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন ও কিংসের দোরিয়েলতন একই সঙ্গে লাফিয়ে উঠলে সংঘর্ষ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়া সুজন কিছুক্ষণ চিকিৎসা নিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ লাগিয়ে খেলা চালিয়ে যান।
দিয়াবাতে ৮২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতেন। কিন্তু ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা মালির এই ফরোয়ার্ডের শট পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে রুখে দেন জিকো। কিংসের ম্যাচের ফেরার আশা বেঁচে থাকে।
৮৯তম মিনিটে সুজনকে তুলে পোস্টের দায়িত্ব সাকিব আল হাসানকে দেন মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণের উপর দিয়ে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয় কিংস।
ম্যাচে দুই পক্ষের দফায় দফায় মেজাজ হারানো আর সুজনের চোটের কারণে যোগ করা সময়ের খেলা হয় ১৩ মিনিট। শুরুতেই রবিনিয়োর শট আটকে সামর্থ্যের জানান দেন সাকিব। ১০০তম মিনিটে দামাশেনোর ফ্রি কিকে রবিনিয়োর শট এক হাতে ফিস্ট করে ফেরান এই তরুণ গোলরক্ষক। এরপর দোরিয়েলতনের হেডও সাকিব গ্লাভসে জমানোর একটু পরই বাজে রেফারির শেষের বাঁশি। দুর্দান্ত এক জয়ের উৎসবও শুরু হয় মোহামেডানের ডাগআউটে।