কুয়েতের কাছে হেরে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পথচলা থেকে যাওয়ার পর গত ম্যাচগুলোয় নিজেদের পারফরম্যান্সে পিছু ফিরে তাকালেন তরুণরা; সুন্দর আগামীর আশাবাদও সোহেল, ফাহিম, হৃদয়রা জানালেন আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে।
Published : 02 Jul 2023, 08:43 PM
স্বপ্নভঙ্গের বিষাদ নিয়ে সোমবার ধরতে হবে দেশে ফেরার বিমান। তাই রোববার দুপুরেই খেলোয়াড়রা কেউ অটোরিকশাতে করে, কেউ ক্যাবে চেপে বের হলেন কেনাকাটা সারতে, ঘোরাঘুরি করতে। চোখেমুখে হতাশার ছাপ থাকল যদিও। তবে তার আগে টিম হোটেলের লবিতে বসে মোহাম্মদ সোহেল রানা, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, মোহাম্মদ হৃদয় -এই তিন ফুটবলার বাংলাদেশ দলের সামনের পথচলা নিয়ে শোনালেন দারুণ আশাবাদ।
এবারের বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দুই অতিথি দল লেবানন ও কুয়েতের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশ। যদিও হার দুই ম্যাচেই। লেবাননের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শুরুতে, কুয়েতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালের মহারণে। এই দুই ম্যাচে মাঝে মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও দারুণ জয় তুলে নেয় দল।
দুটি করে জয় ও হার দিয়ে সাফ শেষ করা বাংলাদেশ চার ম্যাচেই খেলেছে অভাবনীয়, গোছালো ফুটবল। জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মনদের মতো অভিজ্ঞদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দলকে টেনেছেন তরুণরা। গত সাফের দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি মোহাম্মদ হৃদয়। ২১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের এবার প্রথম পা পড়ল দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের আঙিনায়। আগামী দিনে দলের মাঝমাঠের নির্ভরতা হয়ে ওঠার বার্তা দিয়েছেন হৃদয়।
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজেদের উপর বিশ্বাস ধরে রাখা। কোচের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমরা। যখন আমরা খেলা উপভোগ করি এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলি, কিছুটা একটা ঘটে। যদি আমরা কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে অবশ্যই সামনের দিনে প্রতিদান পাব।”
ফাহিমেরও এই প্রথম সাফে খেলতে নামা। ২১ বছর বয়সী এই তরুণ আক্রমণভাগে ছিলেন দারুণ সক্রিয়। তিনি এখন বেঙ্গালুরুতে মেলে ধরা পারফরম্যান্স টেনে নিয়ে যেতে চান সামনের দিনগুলোতে।
“ভালো ফল নিয়ে দেশে ফেরার লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম। বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দেশের ফুটবলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি আমরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হলো না। তাই কিছু ফল নিয়ে আমি খুশি, কিন্তু সার্বিক ফল নিয়ে খুশি নই।”
“এই স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখা এবং ধারাবাহিকভাবে পারফরম করে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব। কেননা, আমরা সবাই পেশাদার খেলোয়াড়। সাফে আমরা যে কমিটমেন্ট দেখালাম, সেটা ধরে রাখলে এই পর্যায়ের পারফরম করা আমাদের পক্ষে খুবই সম্ভব।”
সোহেলের হয়েছে প্রথমবারের মতো সাফে খেলার অভিজ্ঞতা। কুয়েতের বিপক্ষে হার এখনও মেনে নিতে পারছেন না ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।
“ম্যাচের ফলটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। যদি জিততাম, তাহলে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে পারতাম। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ অন্যরকম ব্যাপার। আমরা আসলেই আশা করেছিলাম ফাইনাল খেলব।”
“ক্লাব পর্যায়ে আমরা বিভিন্ন কোচের অধীনে বিভিন্ন কৌশলে খেলি। কাবরেরা চেয়েছিল আমরা যেন পাসিং ফুটবল খেলি। পাল্টা আক্রমণনির্ভর ফুটবল খেলি এবং চার ম্যাচে আমরা যে এই কৌশলে ভালো খেলতে পেরেছি এটা কোচের কৃতিত্ব। সৌদি আরবে গিয়ে কোচ মূলত এই পাসিং ফুটবল নিয়ে কাজ শুরু করেন। আগের ম্যাচগুলোতেও ওই কৌশলে সফল হয়েছি আমরা। শেষ ম্যাচে যদি ফলাফলটা আমাদের পক্ষে থাকত!”
কিন্তু এই আক্ষেপটুকু এখন একপাশে সরিয়ে রাখছেন সোহেল। বর্তমান পারফরম্যান্স, ফিটনেস ধরে রেখে পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে পারলে বাংলাদেশ দারুণ থেকে দুর্দান্ত দল হয়ে উঠবে, তা নিয়ে একটুও সংশয় নেই তার।
“এই পারফরম্যান্স নিয়ে পরের সাফে, সামনের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আমরা ভালো করতে পারব বলে আশা করি। তবে অবশ্যই আমাদের আরও উন্নতি করার আছে। তাহলে দেখা যাবে, যে ভুলগুলোর কারণে আমরা গোল হজম করেছি, সেটা আগামীতে করব না।”
“এখান থেকে যাওয়ার যখন ক্লাব লেভেলে আমাদের সব প্লেয়ার খেলার সুযোগ পাবে, তখনই এই লেভেলের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবে। বাংলাদেশ আরও ভালো খেলতে পারে এবং আপনারা দেখবেন, বাংলাদেশ সামনে আরও ভালো খেলবে।”