স্প্যানিশ ফুটবল
লা লিগার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে স্পেনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল রেয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।
Published : 26 Oct 2024, 08:21 AM
সবশেষ তিন ম্যাচে জয়ের পথে ১২ গোল। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে কতটা ছন্দে আছে বার্সেলোনা। কম যাচ্ছে না রেয়াল মাদ্রিদও, সবশেষ তিন ম্যাচে তাদের গোল ৯টি। দারুণ ফর্মে থাকা দল দুটির সামনে এবার কঠিন পরীক্ষা। মুখোমুখি যে তারাই!
ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মর্যাদার লড়াইয়ে মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোয় শনিবার মুখোমুখি হচ্ছে স্পেনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে লা লিগার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়।
দুই দলই নিজেদের সবশেষ ম্যাচে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জার্মান ফুটবলের দুই শক্তিশালী দলকে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত মঙ্গলবার বের্নাবেউয়ে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৫-২ ব্যবধানের জয় তুলে নেয় রেয়াল। চমৎকার এক হ্যাটট্রিক উপহার দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিউস জুনিয়র।
পরদিন আরেক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া দারুণ হ্যাটট্রিক করেন বার্সেলোনার হয়ে। বায়ার্ন মিউনিখকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দলটির বিপক্ষে প্রায় এক দশক পর জয়ের স্বাদ পায় কাতালান দলটি।
ঘরোয়া লিগে ১০ ম্যাচে ৯ জয়ে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মাদ্রিদে যাচ্ছে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে ৭ জয় ও ৩ ড্রয়ে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রেয়াল। গতবারের চ্যাম্পিয়ন রেয়ালের সামনে সুযোগ ব্যবধান ঘুচিয়ে দেওয়ার, আর বার্সেলোনার ৬ পয়েন্ট এগিয়ে যাওয়ার।
লামিনে ইয়ামাল, রবের্ত লেভানদোভস্কি ও রাফিনিয়াকে নিয়ে গড়া বার্সেলোনার আক্রমণ ত্রয়ী দারুণ ছন্দে আছে। এই মৌসুমে লা লিগায় এখন পর্যন্ত দলের ৩৩ গোলের ২১টিই করেছেন তারা তিন জন মিলে।
১০ ম্যাচে ১২ গোল নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন পর্যন্ত লেভানদোভস্কি। পোলিশ স্ট্রাইকারের ধারেকাছে কেউ নিয়ে। তার অর্ধেক ৬ গোল করে যৌথভাবে দুইয়ে রেয়ালের কিলিয়ান এমবাপে ও ভিয়ারেয়ালের আয়োসে পেরেস।
তরুণ সেনসেশন ইয়ামাল স্পেনকে ইউরো জেতানো ফর্ম ধরে রেখেছেন ক্লাবে ফিরেও। এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৩ ম্যাচে ৫টি গোলের পাশাপাশি তিনি অ্যাসিস্ট করেছেন ৭টি।
তবে সব সতীর্থকে ছাপিয়ে গেছেন রাফিনিয়া। এবার মৌসুমের শুরু থেকে একের পর এক আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছেন তিনি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৩ ম্যাচে ৮ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৮টি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দলের জেতা দুটি ম্যাচেই ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ হয়েছেন ২৭ বছর বয়সী ফুটবলার।
বায়ার্ন ম্যাচের পর তার প্রশংসায় কোচ হান্সি ফ্লিক তো বলেই দেন, ‘আমি কখনও তার মতো খেলোয়াড় পাইনি।’
তাদের সবার জন্য মৌসুমের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলা যায় এবার। সামনে যে রেয়াল!
সবশেষ চারটি ক্লাসিকোতেই জিতেছে রেয়াল। গত মৌসুমে লিগ শিরোপা জয়ের পথে বার্সেলোনাকে দুবার হারায় তারা ২-১ ও ৩-২ গোলে। এছাড়া জানুয়ারিতে সৌদি আরবে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে কাতালানদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে রেয়াল উঁচিয়ে ধরে ট্রফি।
এই মৌসুমে পিএসজি থেকে এমবাপের আগমনে তাদের শক্তি বেড়েছে আরও। বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসি ফরোয়ার্ডের প্রথম ক্লাসিকো হতে যাচ্ছে এটি।
ভিনিসিউস, রদ্রিগো, জুড বেলিংহ্যামরা তো আগে থেকেই আছেন। ক্লাসিকো মানেই ভিনিসিউসের জ্বলে ওঠা এখন যেন অবধারিত। বার্সেলোনার বিপক্ষে সবশেষ ৪ দেখায় ৭ গোলে (৫ গোল, ২ অ্যাসিস্ট) সম্পৃক্ত ছিলেন আগামী সোমবার ব্যালন দ’র জয়ের জন্য সবচেয়ে এগিয়ে থাকা এই তারকা।
এক বছরের বেশি সময় ধরে লা লিগায় রেয়ালকে কেউ হারাতে পারেনি। আরেকটি ম্যাচে হার এড়াতে পারলে স্পেনের শীর্ষ লিগে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড স্পর্শ করবে তারা।
আর এই রেকর্ডটি বার্সেলোনার! এর্নেস্তো ভালভের্দের কোচিংয়ে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত লিগে টানা ৪৩ ম্যাচ অপরাজিত (৩৪ জয়, ৯ ড্র) ছিল তারা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে আতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠে ৩-১ গোলে হারের পর থেকে লিগে ৪২ ম্যাচ অপরাজিত (৩১ জয়, ১১ ড্র) আছে রেয়াল।
এবার বার্সেলোনার রেকর্ড ছোঁয়ার হাতছানি তাদের সামনে। এই লড়াইয়ে অবশ্য তারা পাচ্ছে না প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে। ডর্টমুন্ড ম্যাচে পায়ে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন তিনি। চোটে বাইরে আছেন রক্ষণের সেনানী ও অধিনায়ক দানি কারভাহালও।
চোট সমস্যা আছে বার্সেলোনা শিবিরেও। মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন গুরুতর চোটে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে গেছেন গত মাসেই। নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার রোনাল্দ আরাউহো বাইরে আছেন অনেক দিন ধরে। সম্প্রতি গাভি, ফ্রেংকি ডি ইয়ং, দানি ওলমো, ফের্মিন লোপেসের চোট কাটিয়ে ফেরাটা তাদের জন্য স্বস্তির।
বায়ার্নের বিপক্ষে মাঝমাঠের সুরটা দারুণভাবে বেঁধে দিয়েছেন পেদ্রি, ফের্মিন, মার্ক কাসাদোরা। দৃঢ়তায় রক্ষণ সামলেছেন জুল কুন্দে, পাউ কুবার্সি, ইনিগো মার্তিনেস, আলেহান্দ্রো বাল্দে। এবার ভিনিসিউস-এমবাপেদের আটকে রাখার চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে।
চ্যালেঞ্জ বার্সেলোনা কোচ ফ্লিকের জন্যও। বায়ার্নের বিপক্ষে তার ‘হাই প্রেসিং’ কৌশল বেশ কাজে দিয়েছে। এতে সফল হওয়ার বিপরীতে ঝুঁকিও থাকে বেশি। তবে দলের ওপর আস্থা রাখছেন ফ্লিক।
“আমাদের অনেক কোচ আছেন, যারা এই বিষয়ে মনোযোগ দিচ্ছেন, কিন্তু বলসহ কিংবা বল ছাড়া, যতটা সম্ভব চাপ দেওয়াই আমাদের দর্শন। আমরা যা করেছি, তা দুর্দান্ত, বিশেষ করে বায়ার্নের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে। এটির অনুশীলন করানো সহজ ব্যাপার নয়। খেলোয়াড়রা চমৎকার কাজ করছে এবং মানিয়ে নিয়েছে। তারা ম্যাচেও মানিয়ে নিচ্ছে।”
“আমি দলের ওপর বিশ্বাস রাখি। আমাদের দলে অনেক মান রয়েছে এবং সেটাই আমরা দেখতে চাই। সবাই নিজের সেরাটা দিয়ে খেলছে এবং একে অপরকে সাহায্য করছে। আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ থাকি, তখন সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
শাভি এর্নান্দেসের কোচিংয়ে গত মৌসুমটা শিরোপাহীন কাটে বার্সেলোনার। ক্লাবের সাবেক এই মিডফিল্ডারকে সরিয়ে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয় বায়ার্ন মিউনিখ ও জার্মানির সাবেক কোচ ফ্লিককে। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে তার প্রথম ক্লাসিকো হতে যাচ্ছে এটি। সেই রোমাঞ্চও ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে।
“জার্মানিতে আমাদের অনেক দ্বৈরথ আছে, তবে এল ক্লাসিকোর মতো কিছুই নেই। আমার তর সইছে না।”
তার বিপরীতে ডাগআউটে দাঁড়াবেন যিনি, সেই কার্লো আনচেলত্তির সামনে আরেক অর্জনের হাতছানি। তৃতীয় কোচ হিসেবে টানা পাঁচ বা এর বেশি ক্লাসিকো জয়ের কীর্তি গড়ার সুযোগ অভিজ্ঞ ইতালিয়ান কোচের।
সব মিলিয়ে ধ্রপদি এক লড়াইয়ের অপেক্ষা।