মেয়েদের লিগে বসুন্ধরা কিংস দল না গড়ায় সাবিনারা এবার পাড়ি জমিয়েছেন নাসরিন স্পোর্টস একাডেমিতে।
Published : 31 Mar 2024, 08:32 PM
মেয়েদের ফুটবল লিগে এবার অংশ নিচ্ছে না বসুন্ধরা কিংস। ঘরোয়া ফুটবলের বড় ক্লাব আবাহনী, মোহামেডান, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নেই নারী ফুটবল দল। তাই লিগের দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা সারতে এসে আক্ষেপের সুরে কিংসের অনুপস্থিতিতে নাসরিন একাডেমিকে যোগ দেওয়া নিয়ে অনেক কথা বললেন সাবিনা খাতুন।
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে ক্লাবগুলোর উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ, অসন্তোষ কোনোটাই আড়াল করলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক।
২০২১-২২ মৌসুমে সবশেষ হয়েছিল মেয়েদের লিগ। সেবার টানা তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতেছিল বসুন্ধরা কিংস। সাবিনা, কৃ্ষ্ণা, মাসুরা- বলতে গেলে জাতীয় দলের সিংহভাগ খেলোয়াড়ের ঠিকানা ছিল কিংস। কিন্তু তারা এবার সরে দাঁড়ানোয় সাবিনারা যোগ দিয়েছেন নাসরিন একাডেমিতে; গত লিগে দলটি হয়েছিল ষষ্ঠ।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে এসে রোববার দলবদলের কার্যক্রম শেষ করেছে ৯টি দল। আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব, উত্তরা ফুটবল ক্লাব, সিরাজ স্মৃতি সংসদ, নাসরিন স্পোর্টস একাডেমি, সদ্যপুস্করিনী জেএসসি, জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশ, ঢাকা রেঞ্জার্স, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব।
সাবিনাসহ জাতীয় দলের ১৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে দল গুছিয়েছে নাসরিন একাডেমি। শেষ মুহূর্তে দল পাওয়ার স্বস্তি আছে এই তারকা ফরোয়ার্ডের, কিন্তু মেয়েদের ফুটবল নিয়ে সবার উদাসীনতায় হতাশ তিনি।
কিংসের কাছে মেয়েদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক চাওয়া নিয়ে ওঠা গুঞ্জনও উড়িয়ে দিলেন সাবিনা। ছেলেদের ফুটবলারদের পাওয়া পারিশ্রমিকের প্রসঙ্গ টেনে তুলে ধরলেন নিজেদের নির্মম বাস্তবতাও।
“এই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, কিন্তু আমারও প্রশ্ন- কোন খেলোয়াড়টা বেশি টাকা দাবি করেছে। একটা বিষয় হচ্ছে, মেয়েরা যখন ভালো করছে, সেটাকে যদি আপনারা সাধুবাদ দেন, একইসাথে ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব মেয়েদের আর্থিক সমর্থনটুকু দেওয়া, পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ এবং বাংলাদেশের যে সকল ক্লাব আছে…আপনি একজন ছেলে খেলোয়াড়কে যত টাকা দেন, এই টাকা দিয়ে আপনি খুব সহজভাবে একটা মেয়েদের দল চালাতে পারবেন।”
“আমার মনে হয় না, মেয়েরা এমন আকাশচুম্বি কোনো টাকা চেয়েছে। হতে পারে, আমি যদি ১৫ লাখ টাকা দাবি করি, আপনি নিবেন না (দলে)। কী কারণে ওরা (বসুন্ধরা কিংস) দল গড়ন করল না, সেটা নিয়ে ওদের ব্যক্তিগত অবজারভেশন আছে। আমি তো তিন বছর খেলেছি, আমার মতো বাকিরাও আশা করেছিল, এবারও ওদের দলেই খেলবে। কেন করেনি (দল গড়েনি), এটা ওরাই ভালো বলতে পারবে।”
যদিও পারিশ্রমিকের অঙ্ক খোলাসা করলেন না সাবিনা, তবে নাসরিন একাডেমি থেকে যা পাচ্ছেন, তাতেই খুশি বলে জানালেন তিনি। এ কথা বলতে গিয়েও ছেলেদের ফুটবল টেনে আনলেন সাবিনা।
“এখানেও পারিশ্রমিক ভালো, খারাপ না। বসুন্ধরা কিংসও ভাবতে পারে, শুধু তারাই কেন খেলবে? বাকি বড় বড় ক্লাব যারা আছে, তারা কেন দল গড়বে না। ওরা যেহেতু এফোর্ট দিচ্ছে, ওভাবে বাকি ক্লাবগুলোও যদি এফোর্ট দেয়, তাহলে মেয়েরা খেলার মধ্যে থাকবে, লিগ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, মেয়েরাও আর্থিকভাবে সমর্থন পাবে, ফেডারেশনের জন্যও সবকিছু সহজ হবে।”
ক্ষোভ-আক্ষেপের পাশাপাশি নতুন মিশন নিয়েও ভাবছে মেয়েরা। গত দুই লিগের রানার্সআপ আতাউর রহমান ভুঁইয়াতে যোগ দেওয়া তহুরা খাতুন যেমন জানালেন এবার ঘোচাতে চান দলটির শিরোপা খরা।
“এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই দলে আমি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৯ এর খেলোয়াড় আছে। এর আগেও টিম দুইবার আশা জাগিয়েছিল, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এবার আমাদের চেষ্টা থাকবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
“সাগরিকা, প্রান্তি, সুরমা, স্বপ্না (জুনিয়র), সোহাগী কিসকু, আকলিমা, শাহেদা আক্তার রিপা-আরও অনেকেই আছে এই দলে। (পারিশ্রমিক) এটা বলাই ভালো… এটা আসলে খুশি-অখুশির বিষয় না। খেলতে পারছি, এটাই বড় কথা। ক্লাবগুলোকে তো আর জোর করে আনা যায় না; ফেডারেশন চেষ্টা করেছিল তাদের আনার।”
বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের কণ্ঠেও বড় দলগুলোর কাছ থেকে সাড়া না পাওয়া নিয়ে ঝরল অসহায়ত্ব।
“আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি, চাপ বা বাধ্য করতে পারি না। অনুরোধের চেয়ে বেশি কিছু করার নেই।”
অথচ করার ছিল অনেক কিছুই। ২০২২ সালে মেয়েরা প্রথমবারের মতো জিতেছিল সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। সেই জোয়ারে নতুন বাতাস লাগবে কোথায়, সেখানে এখন ভাটার টান!