পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে লড়াকু ফুটবল খেলে চমকে দেওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের।
Published : 11 Sep 2022, 06:45 PM
মাঠে কেউ কেউ রিকভারি সেশনে ব্যস্ত। এর ফাঁকেই মূল মাঠের পাশে গোলাপের গাছ থেকে সাবধানে ফুল ছিঁড়ছেন সাবিনা খাতুন-আখিঁ খাতুনরা। কানে গুজে ছবিও তুলছেন হাসি মুখে। কেউ কেউ পায়চারি করছেন বৃ্ত্তাকার টার্ফে। কেউ কেউ গ্যালারিতে, কোচ-খেলোয়াড়দের বসার স্ট্যান্ডে গল্পে মগ্ন। খন্ড-খন্ড দৃশ্যগুলোয় যেন নির্ভার এক বাংলাদেশ দলের ছবি ফুটে উঠল।
অথচ দুদিন পরই শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ সেরা হওয়ার মহারণে নামতে হবে। ম্যাচটি সামনে রেখে রোববার কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের পাশে আর্মি হেডকোয়াটার মাঠে হালকা প্রস্তুতি নিল দল। অনুশীলনের চেয়ে পাকিস্তান ম্যাচ খেলাদের রিকভারিতে মনোযোগী ছিলেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।
বাংলাদেশ, ভারত-দুই দলই টানা দুই জয়ে নিশ্চিত করেছে সেমি-ফাইনাল। পয়েন্ট সমান হলেও গোল পার্থক্যে বাংলাদেশের চেয়ে (+৯) এগিয়ে ভারত (+১২)। গ্রুপ সেরা হতে তাই আসছে দ্বৈরথে জয়ের বিকল্প নেই সাবিনাদের।
‘বি’ গ্রুপের সেরা হওয়ার সম্ভাবনায় আছে স্বাগতিক নেপাল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদেরকে এড়াতে চাইছে বাংলাদেশ। এ কারণে ভারতকে রুখে দিয়ে ‘এ’ গ্রুপের সেরা হওয়ার লক্ষ্য দলের।
মালদ্বীপকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর ভারত কোচ সুরেন কুমার ছেত্রি বলেছিলেন, গ্রুপের শেষ ম্যাচে চাপে থাকবে বাংলাদেশ। তার কথার সূত্র ধরে কোচ ও খেলোয়াড়দের কাছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর একই প্রশ্ন ছিল-বাংলাদেশ কি চাপে থাকবে? ছোটন-সাবিনা-মারিয়ারা দৃপ্ত কণ্ঠে উড়িয়ে দিলেন চাপ-তত্ত্ব!
ভারতের বিপক্ষে কখনও জেতেনি বাংলাদেশ। ১০ ম্যাচে ২০১৬ সালের আসরে গ্রুপ পর্বে করা ড্রই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। এই পরিসংখ্যানও বাংলাদেশ কোচ ছোটনের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারছে না একটুও।
“আমি তো মনে করি যে…আমাদের মেয়েরা গত দুই ম্যাচে যে ফুটবল খেলেছে, তাতে যেকোনো টিমই আমাদের নিয়ে উল্টো চাপে থাকবে। তবে এ নিয়ে মেয়েরা কোনো আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে না। আমাদের মূল মনোযোগ এখন রিকভারির দিকে। মেয়েরা দুইটা কঠিন ম্যাচ খেলেছে, কঠোর পরিশ্রম করেছে, এখন তাদের জন্য রিকভারি করা জরুরি।”
গত দুই ম্যাচে মাঝমাঠের সুর বেঁধে দেওয়া মারিয়া মান্দা অযথা বাড়তি চাপ নিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা নষ্ট করতে চান না। ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার আঁটঘাঁট বেঁধে নিচ্ছেন লড়াইয়ের প্রস্তুতি।
“আমরা জানি ভারত শক্তিশালী দল, আমরাও শক্তিশালী দল। তাদের বিপক্ষে সেভাবে লড়াই করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা এতটা চাপেও নেই; কেননা, এত চাপ নিলে তো নিজেদের খেলা খেলতে পারব না। আমাদের চেষ্টা থাকবে তাদের বিপক্ষে লড়াই করে লক্ষ্য পূরণ করার।”
আরেক মিডফিল্ডার সানজিদা খাতুন ভারত নিয়ে নয়, ভাবছেন কেবল নিজেদের সেরাটা দেওয়া নিয়ে।
“কোনো চাপ নেই, নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলে যাব, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। প্রতিপক্ষ ভারত বলে বাড়তি কোনো টেনশন নেই; তবে ওদের বিপক্ষে ভালো খেলতে হবে-এটা নিয়ে যা একটু টেনশন আছে।”
আক্রমণভাগের খেলোয়াড় তহুরা খাতুন প্রত্যয়ী কণ্ঠে উড়িয়ে দিলেন ভারত ভীতির প্রসঙ্গ।
“আগে যখন আমরা বয়সভিত্তিক দলে ছিলাম, বয়সে অনেক ছোট ছিলাম। এখন আমরা বড় হয়েছি। পরিণত হয়েছি। এখন এটাই সত্যি যে, চাপে থাকব, ভয়ে থাকব-এগুলো এখন আর আগের মতো নেই।”
পাকিস্তান ম্যাচে ডান পায়ে একটু ব্যথা পেলেও ভারতের বিপক্ষে খেলার ব্যাপারে আশাবাদী আঁখি খাতুন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এই ডিফেন্ডারও ভারত ম্যাচের চাপ ইস্যুতে সুর মেলালেন কোচের সঙ্গে।
“চাপ নেওয়ার তেমন কিছু নেই। আমরা বাংলাদেশে যেটা করে এসেছি (প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি), এখানে এসে দুটি ম্যাচ খেলে ফেলেছি, এই দুইটা ম্যাচে যেভাবে খেলেছি, ভারতের বিপক্ষেও সেভাবেই খেলব। শুধু আমরাই যে চাপে থাকব, তা নয়, ভারতও চাপে থাকবে।”
এদিনের হালকা মেজাজের প্রস্তুতিতে দলকে নির্ভার দেখা গেলেও অধিনায়ক সাবিনা দৃঢ় কণ্ঠে তুলে ধরলেন ভিন্ন এক বাংলাদেশকে! চলতি সাফে গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে থাকা এই ফরোয়ার্ডের (৫টি গোল) দাবি, তার দল নেই আগের মতো।
“একটু চাপ তো আমাদের উপর থাকবেই। কেননা, ভারত পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রি-ম্যাচ কনফারেন্সেও তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে অতি-আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছিল। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলে যাব, বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। আসলে আমাদের ওরকম চাপ নেওয়ার কিছু নেই। চাপ নেওয়ার দিন শেষ। চাপ নেওয়ার ওই ফুটবল বাংলাদেশ এখন আর খেলে না।”