বাফুফের করা তদন্ত কমিটি আবু নাঈম সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন সালাম মুর্শেদী।
Published : 17 Apr 2023, 08:23 PM
আর্থিক কেলেংকারি এবং বিল-ভাউচার জালিয়াতির দায়ে ফিফার নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আবু নাঈম সোহাগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তার সঙ্গে আর কেউ এই অপকর্মে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটি।
জরুরি সভা শেষে সোমবার বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। এক মাসের মধ্যে নিজেদের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সালাউদ্দিন।
যে ঘটনা নিয়ে দেশের ফুটবলে এখন টালমাটাল অবস্থা, সেই কেলেংকারির দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মুর্শেদী। তার কমিটিতে কোনো ‘দুর্নীতি’ হয়নি বলে জোর দাবিও করেছেন তিনি।
দুই বছরের জন্য সোহাগ নিষিদ্ধ হওয়ায় নতুন সাধারণ সম্পাদকের খোঁজে নেমেছে বাফুফে। আপাতত ইমরান হোসেন তুষারকে তিন মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে জরুরি সভায়।
দুর্নীতির বিষয়ে বাফুফেকে নিজেদের মতো করে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সালাউদ্দিন জানালেন, ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি করার কথা। সেখানে চার সহ-সভাপতি, নির্বাহী কমিটির তিন সদস্য সত্যজিৎ দাস রুপু, ইলিয়াস আহমেদ ও জাকির হোসেনের সঙ্গে আছেন অডিট কমিটির তিন জন।
“সোহাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা নতুন করে জিএস নেব। তার আগে আমরা ভারপ্রাপ্ত একজনকে দায়িত্ব দেব। এটাই সভার মূল আলোচ্য ছিল, আমরা একটা কমিটি করেছি। যা হয়েছে এবং কেন হয়েছে সেটা তদন্তের জন্য। সাত জনের কমিটি করেছি এবং আমাদের অভ্যন্তরীন কমিটি আছে একটা। অডিট কমিটি আছে। এই দুইটা মিলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে একটা রিপোর্ট দেবে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কি হয়েছে এবং কেনো হল তা আপনাদের জানাতে চাই। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এই ব্যাপারটা যেনো আগামীতে পুনরায় আর নেই।”
এতদিন বাফুফের কর্তারা আগলে রেখেছেন সোহাগকে। কিন্তু এখন আর নিষিদ্ধ এই কর্মকর্তার পাশে থাকছেন না কেউ। ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া এই সাধারণ সম্পাদকের জন্য বাফুফের দুয়ার চিরতরে বন্ধ বলে জানালেন মুর্শেদী। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানালেন তিনি।
“পরবর্তীতে এই ফেডারেশনে যেন আর অংশ নিতে পারে এবং কাজ করতে না পারে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে ব্যর্থতা, স্বার্থকতা নাই। জেনারেল সেক্রেটারি সর্বোচ্চ পোস্ট। আমার কাছে প্রায় চিঠি আসে। শুধু এটা নয়, প্রতিটি খরচের ব্যাপারে নিয়মিত চিঠি আসে এবং আমরা যার যারটা, উত্তর দেই। হয়ত এই জিনিসটা ওইভাবে পড়ে নাই, এজন্য। সে যেহেতু তার ক্ষমতাটা সঠিকভাবে ব্যবহার করে নাই, সে কারণে এই পদে তাকে আর কখনও স্থাপিত করা হবে না। সে ব্যাপারে আজকে বোর্ডে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
“আজকের এই জরুরি সভায় ১০ সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কি হয়েছে, সে জিনিসটা দেখে…আসলেই যদি তাকে বা অন্য কাউকে আমরা এ ধরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত দেখি, তাহলে আমরা অবশ্যই যদি প্রয়োজন মনে করি, প্রয়োজন মনে হয়, ব্যবস্থা নিতেও কার্পণ্য করব না।”
উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য এগুলো করেছি-সোহাগ যদি এই অভিযোগ করেন? এমন প্রশ্নের বিষয়ে মুর্শেদী বলেন তাদের বিপক্ষে কেউ অভিযোগ করলে তা হতে হবে ‘সুনির্দিষ্ট’।
“যদি বলে কোনো কথা নেই। এটা হতে হবে খুব স্পেসিফিক। যেহেতু এখানে ইন্টিগ্রেটির বিষয় আছে। যদি আমাদের সেটা না থাকত, তাহলে আমাদের নাম থাকত (ফিফার প্রতিবেদনে)। এখন থেকে আমাদের ফুটবল ফেডারেশনে অ্যাটেন্ডেড মেশিন থাকবে, আমাদের যাওয়া-আসা সবকিছু লিপিবদ্ধ থাকবে। আমাদের যে ভুল আমরা দেখেছি বা করেছি, সেটা যাতে ভবিষ্যতে না হয়, অবশ্যই আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।”
এই কেলেংকারিতে ফাইন্যান্স কমিটির দায়ও দেখছেন না মুর্শেদী। পুরো দায় তিনিও চাপিয়ে দিয়েছেন সোহাগের কাঁধে।
“দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। প্লিজ উইথড্রো ইউর ল্যাংগুয়েজ। দুর্নীতি বলতে একটা বিষয়…সেটা খুবই স্পেসিফিক কেইস, একটা কমপ্লাইন্স, কোনো একটা জিনিস খরিদ করতে সে প্রোপার কমপ্লাইন্স অনুসরণ করেনি, যেটা ৫১ পাতার রিপোর্টে কিন্তু লেখা আছে। সেজন্য কোনো দুর্নীতি হয়নি। দুর্নীতি বলতে, একটা জিনিস ক্রয় করতে যদি ১০ লাখ টাকার নিচে লাগে তাহলে কোটেশনের মাধ্যমে প্রকৃত সাপ্লাইয়ার এবং দশ লাখের উপরে লাগে তাহলে টেন্ডারের মাধ্যমে পেপারে দিয়ে ক্রয় করতে হয়, সেটা হয়ত প্রোপারলি হয় নাই। একারণে সেটার তদন্ত হয়েছে।“
“ফিফা ও এএফসি থেকে অনেকবার টিম এসেছে, তারা যেখান থেকে ক্রয় করা হয়েছে, সেটা দেখেছেন, সে কোম্পানি দেখেছেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন দেখেছেন, তাদের ব্যবসায়িক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছেন, তা দেখে তারা সন্তুষ্ট হননি বলেই এই কমপ্লাইন্সের কারণে তারা এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। না, না, আমরা কোনো দায় নিব না। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ফাইন্যান্স কমিটির এটা কোনো দায় না। আমরা বলব, সে প্রোপার প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করেনি, কমপ্লায়েন্সটা অনুসরণ করেনি।”
আর্থিক কোনো লেনদেনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ফাইন্যান্স কমিটি। এই কমিটির অগোচরে কোনো লেনদেন সম্ভব কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে মুর্শেদী তুলে ধরেছেন সোহাগের ব্যক্তিগত দায়ের কথাই।
“জালিয়াতি হলে তিনি (সোহাগ) সেটা ব্যক্তিগতভাবে করেছেন। তিনি একটা অর্থ বা টাকা দিয়েছেন, সেটা। তিনি বলেছেন, তিনি একটা ডলার বা অর্থ এক জায়গায় পাঠিয়েছেন, সেটা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের এইটা না। সেটা তার ব্যক্তিগত। এখানে ফাইন্যান্স কমিটির কোনো জালিয়াতি নেই। (আমাদের কনসার্ন ছাড়া) সে পাঠিয়েছে বলেই তো নিষিদ্ধ হয়েছে। সে যদি সঠিকভাবে করত, তাহলে ব্যান হতো না।“
সোহাগের দুর্নীতির বিষয়টি বাফুফে সভাপতি হিসেবে কিভাবে নিচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন নিজের দায় দেখছেন না। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে সোহাগ শাস্তি পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
“আমার অফিসার ভুল করেছে-বিষয়টাকে আমি এভাবে দেখছি এবং নিচ্ছি। আমি তো ক্লার্ক হিসেবে এগুলো দেখতে পারব না। এটা সাধারণ বিষয় যে, ফিফা তাকে নিষিদ্ধ করেছে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে। তো এটা তার দায়।”