প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ার পর দারুণ খেলে সমতায় ফিরল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। দ্বিতীয়ার্ধে ফের আবাহনী এগিয়ে গেল, শেষ দিকে সমতায় ফিরে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে গেলো শেখ রাসেল। সেখানে নাটকীয়তার পর নাটকীয়তা। শেষ পর্যন্ত ৩০ শটের শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে জিতে গ্রুপ সেরা হয়ে ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল শেখ রাসেল।
Published : 29 Dec 2021, 05:53 PM
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বুধবার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচটি টাইব্রেকারে ১৩-১২ ব্যবধানে জিতে শেখ রাসেল। দুই দলের নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়েছিল ২-২ সমতায়।
নির্ধারিত পাঁচ শটের টাইব্রেকারে আবাহনীর দোরিয়েলতন গোমেস নাসিমেন্তো, রাফায়েল অগাস্তো সান্তোস দি সিলভা, ইমন মাহমুদ ও দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরা লক্ষ্যভেদ করলেও দ্বিতীয় শট নিতে আসা নাবীব নেওয়াজ জীবন পোস্টে মেরে বসেন।
এ পর্বে শেখ রাসেলের এইলতন মাচাদো, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, আইজার আখমাতোভ, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী আগেই গোল করায় ইসমায়েল রুটি দি সিলভার সামনে সুযোগ ছিল ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়ার, কিন্তু তিনি মারেন ক্রসবারের উপর দিয়ে। ফলে নির্ধারিত পাঁচ শটের টাইব্রেকার শেষ হয় ৪-৪ সমতায়।
এরপর চলতে থাকে একের পর এক স্পট কিক। আবাহনীর মিলাদ শেখ সুলেমানির গোলের পর সোহেল রানার শট ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকান শেখ রাসেল গোলরক্ষক। মোহাম্মদ জুয়েলের গোলের পর সাদউদ্দিনে শট ক্রসবারের উপরের দিকে লেগে বাইরে গেলে ৫-৫ সমতা।
এরপর আবাহনীর নুরুল নাইম ফয়সাল, মুনীর আলম, রেজাউল করিম ও গোলরক্ষক মাহফুজ হাসান প্রীতম এবং শেখ রাসেলের রহমত মিয়া, মোহাম্মদ খালেকুরজ্জামান, মানিক হোসেন মোল্লা, গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা লক্ষ্যভেদ করলে দুই দলের ২২ জনের কোটা শেষ হয়।
এরপরের ধাপে আবাহনীর দোরিয়েলতন, জীবন, রাফায়েলের গোলের পর ইমনের দুর্বল শট ফেরান রানা। শেখ রাসেলের এইলতন, হেমন্ত, আইজারের গোরেল পর নাসিরউদ্দিন লক্ষ্যভেদ করলে গ্রুপ সেরা হওয়ার উচ্ছ্বাসে মাতে শেখ রাসেল।
টার্ফের মান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে উত্তর বারিধারা সরে দাঁড়ানোয় আবাহনী ও শেখ রাসেলের সেরা আটে খেলা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াই।
চতুর্থ মিনিটে কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে হেডে নিজেদের জালেই বল জড়াতে বসেছিলেন শেখ রাসেলের আইজার আখমেতোভ, অনেকটা লাফিয়ে গ্লাভসের টোকায় বল ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন রানা।
চার মিনিট পরই এগিয়ে যায় প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১১বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। এ গোলে অবশ্য শেখ রাসেলের মানিকের দায় আছে; তিনি ঠিকঠাক বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি, ছুটে গিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন দোরিয়েলতন। পরের মিনিটে এইলতন মাদাচোর হেড ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকে শেখ রাসেলকে হতাশ করেন গোলরক্ষক প্রীতম।
২০তম মিনিটে সমতায় ফিরে ২০১২-১৩ মৌসুমে প্রথম এবং সবশেষ এই শিরোপা জেতা শেখ রাসেল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এইলতনের নিচু ক্রসে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ইসমায়েল তারারেজের শট প্রীতিম ফেরালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি; ফিরতি শটে জাল কাঁপান মান্নাফ রাব্বী।
তিন মিনিট পর দুরূহ কোণ থেকে শেখ রাসেলের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার চিয়াগো এদুয়ার্দো দো আমারালের বাঁ পায়ের কোনাকুনি শট অল্পের জন্য দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়।
৫৪তম মিনিটে আবাহনীর দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরার কর্নারে মিলাদ শেখ সুলেইমানির হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট। চার মিনিট পর কলিনদ্রেসের ভলি ফিস্ট করে ফেরান রানা, এরপর জুয়েলের ছোট পাসে জীবনের শট ব্লক করেন এক ডিফেন্ডার।
দুই ব্রাজিলিয়ানের বোঝাপড়ায় ৬১তম মিনিটে এগিয়ে যায় আবাহনী। রাফায়েল ক্রসে গোলমুখে থাকা দোরিয়েলতন হেডে লক্ষ্যভেদ করেন। ৮৪তম মিনিটে হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসের হেড পাসে এইলতনের ভলিতে সমতায় ফিরে শেখ রাসেল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে অবিশ্বাস্য শিহরণের রেনু ছড়িয়ে জিতে শেখ রাসেল।