দীর্ঘ ২৭ বছর পর দেশে ফিরে পুরনো বন্ধু-সতীর্থদের কাছে পেয়ে ফুটবল কিংবদন্তি এনায়েতুর রহমান খান যেন চার-পাঁচ দশক পেছনে ফিরে গেলেন। সব যেন তার চোখের সামনে ভাসছে; স্পষ্ট ছুটতে দেখছেন কোনো এক সতীর্থকে, মনের কোণে তখন আবার উঁকি মারছে আরেকজন। একে একে বললেন সবার কথা। স্মৃতির অতলে ডুব দিয়ে তুলে আনলেন কত গল্প!
Published : 11 Dec 2021, 08:28 PM
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য এনায়েতের সঙ্গে শনিবার আড্ডার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিএসজেএ)। এতে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরা ও গোলাম সারোয়ার টিপু।
আড্ডা পরিণত হলো মিলনমেলায়। সাবেক ফুটবলার, সংগঠকরা ছাড়াও ছিলেন প্রবীণ-নবীন সাংবাদিকরা। সবার মাঝে পাদপ্রদীপের সবটুকু আলো কেড়ে আসরের মধ্যমণি হয়ে ছিলেন এনায়েত।
বিজি প্রেস, ওয়াবদা, ইপিআইডিসি (দেশ স্বাধীনের পর বিআইডিসি), বিজেএমসি, মোহামেডান, রহমতগঞ্জে খেলা এই ফরোয়ার্ড ১৯৯৪ সালে এক বুক অভিমান নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বেশ কয়েক বছর লরি চালান। পরে থিতু হন কানাডায়। গত ১৮ নভেম্বর ফিরেন দেশে। আড্ডায় এনায়েত প্রত্যেক খেলোয়াড়ের প্রাপ্য মূল্যায়ন করার তাগিদ দিলেন।
“আমি খুবই সাধারণ একজন খেলোয়াড়। আপনাদের এই ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। বিএসজেএ’র শুরু থেকেই আমি ছিলাম। এখানে যারা আছে, তারা সবাই অনেক বড় মাপের ফুটবলার। বিশেষ করে আসলাম (শেখ মোহাম্মদ)। অনেকের অনেক গোল আছে, কিন্তু আসলামের গোলগুলো বিশেষ। কারণ তার গোলে দল জিতেছে অধিকাংশ সময়। চুন্নু (আশরাফ উদ্দিন আহমেদ) ছিল একটা ম্যাজিক। বল পায়ে নিলে মুহুর্তেই প্রতিপক্ষের দুজনকে হাওয়া করে দিত। খুরশিদ বাবুল অত্যন্ত পরিশ্রমী ফুটবলার। এত দৌড়াতে আমি কাউকে দেখিনি।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল গাফফার, শেখ আসলাম, হাসানউজ্জামান খান বাবলু, ওয়াসিম ইকবাল, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, আব্দুস সালাম, খন্দকার রকিবুল ইসলামের মতো সাবেক ফুটবলাররা। নিজেদের মধ্য গল্পে মেতে ছিলেন তারা। ফাঁকে ফাঁকে শুনিয়েছেন মজার সব স্মৃতি। তাদের কারো চোখে এনায়েত বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়দের একজন, কারো চোখে তিনিই সেরা।
সাবেক ফুটবলার টিপু বলেন, “এখনকার ফুটবলারদের রানিং, পাসিং অনেক, কিন্তু তারা মেধাশূন্য। আর মেধা ও সাহসী খেলোয়াড় ছিলেন এনায়েত।”
আব্দুল গাফফার চান দেশের ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকুক এনায়েতের।
“এনায়েত ভাই বিদেশে যাওয়ার পর আমি অনেকভাবে এনায়েত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। দেশের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা অনেক। অনেক অনুরোধ করে তাকে দেশে আনা হয়েছে। বিদেশে যাওয়ার পর তাকে আমি অনেক বলেছি, দেশে আসতে হবে, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠাতে হবে। উনি বার বার বলেছেন, ‘এগুলো করে কী হবে?’ দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনেক উদ্বুদ্ধ করে দেশে এনেছি। তাকে এই দেশের ফুটবলে অনেক প্রয়োজন।”
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন ও তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে একঝাঁক স্বাধীনতাকামী ও সাহসী ফুটবলার ও ফুটবল কর্মকর্তা একটি দল গঠন করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যাচ খেলেছিলেন ১৬টি। সেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সবার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা চুন্নুর।
বিসিবি পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি স্মারক হিসেবে টাই তুলে দেন এনায়েতের হাতে।
সিনিয়র ক্রীড়া সংবাদিক মোহাম্মদ কামুরুজ্জামানের চোখে সব্যসাচী এনায়ত তার চোখে সেরা।
“সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন এনায়েত। এনায়েতের মতো বল প্লেমেকার আমি আর দেখিনি। দুই-তিন জনকে কাটিয়ে গোল দিত। দুই পায়-ই রকেটের মতো চলত। ঢাকার ফুটবল দেখছি ১৯৫০ সাল থেকে। এনায়েত দেশের ফুটবলের বড় অলংকার ছিলেন।”
বিএসজেএর পক্ষ থেকে সংগঠনের প্রধান এটিএম সাইদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান অতিথিদের ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সিনিয়র ক্রীড়া সংবাদিক দিলু খন্দকার।