দেশের ফুটবলের প্রত্যাশিত উন্নয়নের জন্য ক্লাবগুলোকে আরও পেশাদার হতে হবে বলে একটি আলোচনা সভায় মত রেখেছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।
Published : 24 Jun 2016, 11:17 PM
ঘরোয়া ফুটবলের মান কিছুটা বাড়লেও মাঠে ফেরেনি দর্শক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় দল। এর কারণ আর ফুটবলের ভবিষ্যত নিয়ে শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির (বিএসপিএ) আয়োজনে ‘বিপিএল-বিএসএল: নতুন সম্ভাবনার সন্ধানে’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই মত প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুত সদ্য প্রয়াত ক্রীড়া লেখক রণজিৎ বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএসপিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক সনৎ বাবলা।
আলোচনায় ফুটবলের সোনালী অতীতের সঙ্গে বর্তমানের হতশ্রী চেহারাটা উঠে আসে বক্তাদের কথায়। বিএসপিএ সভাপতি মোস্তফা মামুন বলেন, “বাংলাদেশই বোধকরি বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে প্রধান খেলা পরিবর্তিত হয়েছে। ২০ বছরের ব্যবধানে ফুটবল কেন এ পর্যায়ে নেমে এল তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।”
প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক দিলু খন্দকার ফুটবলের পেছন দিকে যাওয়ার দায়টা দিয়েছেন দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনী লিমিটেডের ওপর।
“আবাহনী-মোহামেডানের সমর্থক সংখ্যা এক সময় কোটি ছাড়িয়েছিল। কিন্তু ক্লাবগুলো জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কোন উদ্যোগ নেয়নি। অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগও তাদের ছিল না। তাদের ভুলের খেসারত দিচ্ছে এ দেশের ফুটবল।”
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বরাবরের মতো জাতীয় দল নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন। সব সুবিধা নিশ্চিত করার পরও জাতীয় দলের ব্যর্থতার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনিও।
“আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আট বছরে কোন লিগ বন্ধ থাকেনি। আমি কোচ নই; নিজে খেলতেও পারব না। সংগঠক হিসেবে আমার কাজ খেলা আয়োজন করা, জাতীয় দলকে সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং আমি সেটা করি।”
“বিদেশি এবং স্থানীয় কোচ মিলিয়ে প্রতি মাসে আমাকে ২০ লাখ টাকা বেতন গুণতে হয়। তাজিকিস্তানের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সেখানে তো আমি চার দিন আগে দল পাঠিয়েছি। তারপরও ৫ গোলে হেরে আসলে আমি কী করতে পারি?”
“ক্লাবগুলো পেশাদার না হলে কোন উদ্যোগই কাজে আসবে না। ক্লাবগুলো মোট আয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকে ব্যয় করে। এছাড়াও অন্যান্য কাজ, বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও যুব উন্নয়নে কোনো উদ্যেগ নেই।”
ক্লাবগুলোকে পেশাদার করার উদ্যোগটা যারা নেবেন, সেই ক্লাব কর্মকর্তারাদের অনেককে অনুষ্ঠানে না দেখে হতাশ বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায়। খেলোয়াড়দের নিষ্ঠা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই সাবেক ফুটবলার।
“টাকা নেওয়ার সময় খেলোয়াড়রা পেশাদার বাকি সময় তারা কিছু না।”
লম্বা বিরতির পর প্রিমিয়ার লিগ এবার যাচ্ছে ঢাকার বাইরে। ভারতের আইএসএলের আদলে বাংলাদেশ সুপার লিগ আয়োজনের পরিকল্পনাও চলছে। দুটি টুর্নামেন্ট নিয়ে আশাবাদী সবাই।
এ দুটি আসর আয়োজনে বাফুফের সহযোগী সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন বলেন, “গত চার বছরে ফুটবলের মান বাড়লেও মাঠে দর্শক নেই। মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনা, ফুটবলের হারানো গৌরব ফেরানোর লক্ষ্য আমাদের। বিপিএল দিয়ে শহরগুলোতে ফুটবল উৎসবের আবহ নিয়ে আসব।”
বিপিএল ও বিএসএল সাফল্য না পেলে ঘরোয়া ফুটবল আরও পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কার কথা জানান বক্তারা। এ দুটি আসরের সাফল্য নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চান বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী।
“ফুটবলের উন্নয়নে সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। মন্ত্রীকে বলব, এ সরকার ক্রীড়াবান্ধব সরকার, আপনারা মাঠটা ঠিক করে দেন, সংস্কার করে দেন, ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থা করে দেন।”
সাবেক ফুটবলার ও যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় স্টেডিয়ামের সংস্কারসহ অনান্য সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
“বলা হয়, মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করে না; এটা ঠিক না। মন্ত্রণালয়ের লোকজন গিয়েই বিপিএল ও বিএসএলের ভেন্যুগুলো পরিদর্শন করে এসেছে; আশা করি এবার কাজও হবে।”