যিনি ছিলেন মূলত দলের তৃতীয় পছন্দের গোলকিপার, মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমি-ফাইনালেও অসাধারণ খেলে রেয়ালের জয়ের নায়ক তিনি।
Published : 18 Apr 2024, 10:39 AM
ম্যান অব দা ম্যাচের পুরস্কার পেলেন ফেদে ভালভের্দে। ম্যাচজুড়ে মাঠময় ছুটে বেরিয়েছেন তিনি বরাবরের মতোই। তবে ম্যাচ-সেরার ট্রফিটি অনায়াসে উঠতে পারত আন্দ্রি লুনিনের হাতেও। ১২০ মিনিট ধরে রেয়াল মাদ্রিদের দেয়াল হয়ে ছিলেন তিনি গোলবারের নিচে। পরে টাইব্রেকারের রোমাঞ্চেও তিনিই দলের জয়ের ত্রাতা।
মৌসুমজুড়েই অসাধারণ পারফর্ম করে চলেছেন ২৫ বছর বয়সী এই গোলকিপার। তবে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বুধবার তিনি যেন মেলে ধরলেন ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স।
এই মৌসুমে অবশ্য বারবারই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার ক্যারিয়ারের মোড় বদলের মৌসুম বলা যায় এটিকে।
মূলত রেয়ালের রিজার্ভ গোলকিপার ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে রেয়ালে আসার পর ধারে বিভিন্ন ক্লাবে খেলানো হয় তাকে তিন মৌসুম। পরে মূল স্কোয়াডে রাখা হলেও বিকল্প গোলকিপার হয়েই ছিলেন। এই মৌসুমের আগেও দলের খুব একটা ভরসা আদায় করে নিতে পারেননি তিনি। গুরুতর চোটে থিবো কোর্তোয়া লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর উদ্বিগ্ন রেয়াল তাই ধারে এই মৌসুমের জন্য নিয়ে আসে গোলকিপার কেপা আরিসাবালাগাকে। লুনিনকে তখন তৃতীয় পছন্দের গোলকিপার বললেও ভুল হয় না।
তবে এটিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন লুনিন। তাকে ও কেপাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাচ্ছিলেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি। সেই সুযোগটাই দুহাত ভরে গ্রহণ করে এমনভাবে নিজেকে মেলে ধরেন যে, দলের প্রথম পছন্দের গোলকিপার হয়ে ওঠেন। কোর্তোয়ার মতো অসাধারণ একজনের অভাব তিনি বুঝতেই দেননি এই মৌসুমে। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে এই ম্যাচে তো এমন পারফরম্যান্স করলেন, যেটি করতে পারলে গর্বিত হতেন স্বয়ং কোর্তোয়াও।
প্রচণ্ড চাপ, প্রতিপক্ষের মাঠ ও দর্শক, দলের রক্ষণাত্মক কৌশল, এত বড় ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথমবার ১২০ মিনিট ধরে খেলা এবং এরপর টাইব্রেকারের পরীক্ষা, সবকিছু মিলিয়ে এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি লুনিনের। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ দুর্দান্তভাবে জয় করে লুনিন বার্তাটা দিয়ে রাখলেন, তিনি খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন না কোর্তোয়া ফেরার পরও।
ম্যাচ শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে লুনিন শোনালেন তার তৃপ্তির কথা।
“আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। ক্লান্তিতে প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গেছি আমি। ক্যারিয়ারের প্রথমবার এরকম ম্যাচ খেললাম… ১২০ মিনিট মাঠে থাকা, এরপর টাইব্রেকার, এত এত চাপ আর এরকম দায়িত্ব… সবকিছু ভালোভাবে করতে পারার অনুভূতি ব্যাখ্যা করার মতো নয়।”
ম্যাচজুড়ে দলকে বারবার রক্ষা করার পর টাইব্রেকারে বের্নার্দো সিলভা ও মাতেও কোভাচিচের শট ঠেকান লুনিন। সিলভার শটটি ছিল বিস্ময়কর। আগের লেগে দুর্দান্ত গোল করা ফুটবলার এবার টাইব্রেকারে অতি দুর্বল এক শট নেন লুনিনের সোজাসুজি। জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই অনায়াসে বল ঠেকিয়ে দেন রেয়াল গোলকিপার।
লুনিন জানালেন, কোচিং স্টাফের পরামর্শে সিলভার শটের ক্ষেত্রেই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
“কোনো একটি শটের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিটা আমাকে নিতেই হতো (মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা)। আমরা এটিকেই বেছে নেই (সিলভার শট) এবং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, এটি আমাদের পক্ষে চলে আসে।”
রেয়াল এ দিন যেরকম রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নিয়েছিল, তাতে লুনিনের এরকম বিরোচিত পারফরম্যান্স জরুরি ছিল দলের জন্য। সিটির আক্রমণের স্রোত সামলে গেছেন তিনি ম্যাচজুড়ে। পেপ গুয়ার্দিওলার দলকে থামাতে কার্লো আনচেলত্তির কৌশলই ছিল এরকম।
নিজে নায়ক হলেও ম্যাচ শেষে সতীর্থদেরকে কৃতিত্ব দিলেন লুনিন।
“অনেক খেলা আছে, যেগুলোতে লড়াইয়ের পথ বেছে নিতে হয়, অনেক চ্যালেঞ্জ জিততে হয়। সবসময় তো বল পায়ে খেলা যায় না এবং মাঠে সেরা দল হওয়া যায় না। আজকের রাতটি ছিল সেরকমই।চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে খেলার চ্যালেঞ্জ এটি… অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের এবং আমরা তৈরিই ছিলাম।”
“সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি, মাঠে যেভাবে সবকিছুর জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে তারা। আমার সতীর্থরা যেভাবে ১২০ মিনিট ধরে মাঠে ছুটে বেরিয়েছে, নিজেকে দিয়ে এমন কিছু চিন্তাও করতে পারি না আমি।”
সেমি-ফাইনালে রেয়াল মাদ্রিদ খেলবে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে।