গত বছর সাবিনা-কৃষ্ণাদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর থেকে মেয়েদের ফুটবল নিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়তি আগ্রহ, উন্মাদনা। সেটাকে কাজে লাগিয়ে প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। লিগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উইমেন’স সুপার লিগ’।
বাফুফে ও স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কে-স্পোর্টস যৌথ উদ্যোগে এই লিগ আয়োজনের কথা সোমবার ঘটা করে জানিয়েছে। লিগ শুরুর সম্ভাব্য সময় মে মাস এবং ভেন্যু হিসেবে ঢাকা ও সিলেটের কথা লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে জানিয়েছে তারা।
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও প্রশ্ন আছে ঢের। মেয়েদের লিগেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। লিগে অংশ নেওয়া দলগুলো এবং খেলোয়াড়দের মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। লিগের পেশাদার কাঠামোও দাঁড়ায়নি সেভাবে। তবে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বিশ্বাস, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হলে উপকৃত হবেন মেয়েরা।
“নিশ্চিতভাবেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল আয়োজন করা কঠিন, কে-স্পোর্টস ও বাফুফের উইমেন’স কমিটি এটা করার সাহস করেছে। আমরা তাদেরকে সমর্থন দেব। এখানে অনেকগুলো বিষয় আছে, কোন সময় এটা হবে, কারা-কারা আসবে, খেলোয়াড়দের পেছনে ব্যয় কেমন হবে-সব মিলিয়ে এটা অনেক বড় ইস্যু।”
“মেয়েদের খেলার উন্নতি, এরকম আরও অনেক উদ্দেশ্য মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরেকটা বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হচ্ছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হলে মেয়েরা কিছু অতিরিক্ত অর্থ পাবে, যেটা অনেক বড় ফ্যাক্টর। আপনাদের এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে, সেখানে সব প্রশ্নের উত্তর থাকবে।”
ছেলেদের প্রিমিয়ার লিগে খেলা দলগুলোর মধ্যে একমাত্র বসুন্ধরা কিংসের দল আছে মেয়েদের লিগে। মোহামেডান, আবাহনীরে মতো বাকিদের কোনো প্রতিনিধিত্ব সেখানে নেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তারা আসবে কি-না, এমন প্রশ্নে অসহায়ত্ব ঝরল সালাউদ্দিনের কণ্ঠে।
“আমি তাদেরকে বারবার অনুরোধ করেছি। করব-করছি বলে তারা আর করে না। আমি তো কেবল অনুরোধই করতে পারি। আবারও তাদেরকে অনুরোধ করব মেয়েদের জন্য দল গড়ার।”
কে-স্পোর্টসের সত্বাধিকারী ফাহাদ এম এ করিম জানালেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের দল গোছানো নিয়ে তাদের প্রস্তাবনা। সেখানে স্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্যও থাকবে পুল প্রথা।
“আমাদের যেটা প্রস্তাবনা, তা হচ্ছে কমপক্ষে পাঁচটা দল থাকবে। ছয়টা হলে ভালো হয়। প্রতিটি দলে ১৮ জন খেলোয়াড় থাকবে, এর মধ্যে ১৩ জন দেশি এবং ৫ জন বিদেশি। এই ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা থাকবে হবে, অন্য দুজন হবে দক্ষিণ এশিয়ার জাতীয় দলে খেলা। স্থানীয় খেলোয়াড়দেরও থাকবে তিনটি বা চারটি পুল।”
এ অনুষ্ঠানে ছিলেন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রদের অনেকে। মারিয়া মান্ডা যেমন মনে করেন, লিগের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের খেলা।
“লিগে আমরা-আমরাই খেলি। তেমন একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে দল গড়তে হবে, বাইরে থেকেও খেলোয়াড় আসবে। খেলাটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেরও উন্নতি হওয়ার সুযোগ থাকবে।”
শিউলি আজিমের মনে হচ্ছে, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হলে তাদের আর্থিক সচ্ছ্বলতা যেমন বাড়বে, নতুনরাও মেয়েদের ফুটবলে আসতে আগ্রহী হবে।
“এই লিগ হলে মেয়েরা অবশ্যই ফুটবলে আসতে উৎসাহী হবে এবং ফুটবলকে পেশা হিসেবে নিতে পারবে। খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেরও উন্নতি হবে।”