দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারল না অস্কার ব্রুসনের দল।
Published : 11 Dec 2023, 09:23 PM
এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল প্লে-অফ সেমি-ফাইনালসে খেলতে দরকার ছিল ড্র। কিন্তু সাবধানী শুরুর পর বিরতির আগে আসরোর গফুরভের লাল কার্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হলো বসুন্ধরা কিংস। দ্বিতীয়ার্ধে গোলও হজম করে বসল তারা। ঘটনাবহুল ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হেরে অস্কার ব্রুসনের দল ছিটকে গেল গ্রুপ পর্ব থেকেই।
‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচটি ওড়িশা জিতেছে ১-০ গোলে। কিংসের মাঠে প্রথম দেখায় ৩-২ ব্যবধানে হারের মধুর প্রতিশোধও নিয়েছে ভারতের দলটি। ১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে ইন্টার জোনাল প্লে-অফ সেমি-ফাইনালসে উঠেছে তারা।
১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে স্বপ্ন ভাঙল কিংসের। হার দিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করা ভারতের ঐতিহ্যবাহী দল মোহন বাগান ৭ পয়েন্ট নিয়ে হয়েছে তৃতীয়। মালদ্বীপের দল মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে তলানিতে থেকে।
‘অলিখিত ফাইনাল’ হয়ে ওঠা ম্যাচে দুই দলই ছয় বিদেশি নিয়ে সাজায় সেরা একাদশ। ওড়িশা শুরু থেকে চাপ দিতে থাকে কিংসের রক্ষণে। ঘর সামলে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করতে থাকে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নরা। পরিষ্কার সুযোগ অবশ্য তৈরি করতে পারছিল না কেউই।
সপ্তদশ মিনিটে ডিফেন্ডার কাজী তারিক রায়হানের ভুলে বল পেয়ে যান দিয়েগো মাওরিসিও; তবে এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের শট পোস্টের বাইরে গেলে বেঁচে যায় কিংস। ১০ মিনিট পর কর্নারে কার্লোস হাভিয়ের দেলগাদোর হেড উপরের জাল কাঁপায়।
২৯তম মিনিটে ডান দিক দিয়ে একক প্রচেষ্টায় আক্রমণে ওঠেন রাকিব হোসেন। কিন্তু বক্সে ঢুকে দূরূহ কোণ থেকে এই ফরোয়ার্ড শট নেন গোলরক্ষক বরাবর। পোস্টে এটাই ছিল কিংসের প্রথম প্রচেষ্টা।
৩৬তম মিনিটে ওড়িশার ডি-বক্সের বাইরে মিগেল ফিগেইরা দামাশেনো ফাউলের শিকার হলে ফ্রি কিক পায় কিংস। কিন্তু ৩০ গজ দূর থেকে দামাশেনোর শট যায় পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে।
রেফারিং নিয়ে পূর্বের যে তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্য ম্যাচের আগে ক্ষোভ জানান অস্কার ব্রুসন; প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সেই অতীত ফিরে আসে। ওড়িশার আহমেদ জাহুকে মাঝমাঠে পেছন থেকে ফাউল করেন কিংসের গফুরভ। গফুরভকে ছুটে এসে ধাক্কা মেরে বসেন স্বাগতিক দলের ফরোয়ার্ড জেরি, তাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
গফুরভের ট্যাকল অতটা মারাত্মক যদিও ছিল না, কিন্তু ভিয়েতনামের রেফারি এনগু দাই ল্যান তাকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। রেফারির সিদ্ধান্তে অবিশ্বাসে অশ্রুসিক্ত চোখে বারবার হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় উজবেকিস্তানের এই ডিফেন্ডারকে। কিংসের ডাগআউটেও দেখা যায় অসন্তোষ। পরে রেফারি এসে আপত্তি জানানো কিংস কোচ অস্কার ব্রুসনকেও দেখান হলুদ কার্ড।
এরপর অন্যরকম এক দৃশ্যের অবতারণা হয় কিংসের ডাগআউটে। কোচিং স্টাফসহ সবাই কিছু না বলে দুই হাত উঁচিয়ে আত্মসমর্পনের ভঙ্গিতে যেন ‘প্রতিবাদ’ জানাতে থাকেন।
২০২১ সালেও ‘এমন রেফারিংয়ের শিকার’ হয়েছিল কিংস। ভারতের দল মোহন বাগানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে জিততেই হতো তাদের, সেই ম্যাচের প্রথমার্ধে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন সুশান্ত ত্রিপুরা। পরে ম্যাচটি ১-১ ড্র করে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় কিংস।
১০ জনের দল নিয়ে রক্ষণে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া কিংস ৫৪তম মিনিটে ভালো সুযোগ পায়। কিন্তু দোরিয়েলতন গায়ের সঙ্গে সেঁটে থাকা ডিফেন্ডারকে কাটাতে গিয়ে শট নিতে দেরি করে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত দূরূহ কোণ থেকে তিনি শট নিলেও বল উড়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
৬০তম মিনিটে রয় কৃষ্ণর কাছের পোস্টে নেওয়া শট এক হাতে আটকান গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। পরের মিনিটেই কর্নার থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন সেনেগালের ডিফেন্ডার মুরতাদা ফল।
৭৩তম মিনিটে সতীর্থের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন রবিনিয়ো, কিন্তু সতীর্থের উদ্দেশে কাট ব্যক বাড়াতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। একটু পর কৃষ্ণ বাম দিকে দিয়ে কিংসের বক্সে ঢুকে পড়েন। বিশ্বনাথ ঘোষের কড়া পাহারা ভেদ করে শট নিলেও কর্নারের বিনিময়ে আটকান শ্রাবণ। কর্নার মাওরিসিওর হেড ড্রপ খেয়ে যায় বাইরে।
৭৬তম মিনিটে বিশ্বনাথকে তুলে শেখ মোরসালিনকে নামান কিংস কোচ। এরপর চার্লস দিদিয়েরের জায়গায় নামেন সোহেল রানা।
৮৬তম মিনিটে আরেকটি ‘অদ্ভূত’ দৃশ্যের দেখা মেলে। ব্যথা পেয়ে মাঠে শুয়ে পড়েন জাহু। কিছুক্ষণ স্ট্রেচারে বসে চিকিৎসা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন খেলা চালিয়ে যাওয়ার। ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করায় ওড়িশার মিডফিল্ডারকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। তখন আবার জাহু স্ট্রেচারে শুয়ে পড়েন এবং স্ট্রেচারে চেপেই মাঠ ছাড়েন; একটু পর খেলতেও নামেন।
৯০তম মিনিটে রবিনিয়োর শট পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে যায়। শুরু হয় যোগ করা সময়ের ৭ মিনিটের খেলা। পঞ্চম মিনিটে বক্সের বাইরে ফাউলের শিকার হন দোরিয়েলতন। ২৫ গজ দূর থেকে রবিনিয়োর শট রক্ষণ দেয়ালে লেগে কর্নার হয়। মোরসালিনের ও দামাশেনোর পর পর দুটি কর্নার থেকেও কিংস পায়নি সমতায় ফেরা গোলের দেখা।