রেয়াল মাদ্রিদ সভাপতি মনে করেন, উয়েফা ও লা লিগা ফুটবলকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
Published : 11 Nov 2023, 10:27 PM
বিদ্রোহী ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে এখনও হাতেগোনা যে কয়েকজন আশবাদী ব্যক্তি আছেন, তাদের একজন এই লিগের চেয়ারম্যান ফ্লোরেন্তিনো পেরেস। শুরু থেকেই বিতর্কিত এই লিগকেই ফুটবলের ভবিষ্যৎ হিসেবে উল্লেখ করে আসছেন তিনি। প্রতিযোগিতাটি মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা দিনকে দিন কমে গেলেও পেরেস হাল ছাড়তে নারাজ। রেয়াল মাদ্রিদের সভাপতি বলেছেন, ফুটবলকে বাঁচাতে পারে কেবল সুপার লিগই।
রেয়ালের বার্ষিক সাধারণ সভায় শনিবার দীর্ঘ এক বক্তৃতায় সুপার লিগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার পাশাপাশি উয়েফা এবং লা লিগাকে ধুয়ে দিয়েছেন পেরেস। তার মতে, দুটি সংস্থাই ফুটবলের ক্ষতি করছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে মূলত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিল শুরুতে এতে যোগ দেওয়া ১২টি ক্লাব।
তবে ফিফা ও উয়েফাসহ এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের প্রবল বাধা ও সমর্থকদের কড়া সমালোচনার মুখে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরে দাঁড়ায় ৯টি ক্লাব। টিকে থাকে কেবল রেয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও ইউভেন্তুস। তবে গত জুলাইয়ে ইউভেন্তুস জানায়, এই লিগ থেকে সরে যেতে চায় তারাও।
ইউরোপিয়ান সুপার লিগের বিরুদ্ধে আগাম নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর ব্যবস্থা করতে শুরুতেই আদালতের আশ্রয় নেয় লিগ কর্তৃপক্ষ। আগামীর পথচলা মসৃণ করার লক্ষ্যে পরে লুক্সেমবার্গ ভিত্তিক ‘কোর্ট অব জাস্টিস অব দা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’-এ আবেদন করে তারা। আগামী ২১ নভেম্বর এটির রায় আসবে।
রেয়ালের সাধারণ সভায় পেরেস সাফ জানিয়ে দেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইউরোপিয়ান ফুটবলে একটা বড় পরিবর্তন আনতেই হবে।
“স্পেন ও ইউরোপের প্রতিটি ধাপে ফুটবল একটি নজিরবিহীন প্রাতিষ্ঠানিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতিটা গুরুতর। আমাদের অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে, নাহলে আমরা জানি যে ফুটবল টিকতে পারবে না। মূল সমস্যাটা হলো, আয়োজকরা দর্শকদের কথা ভাবছে না... ইউরোপিয়ান ফুটবল উয়েফা সভাপতির (আলেকসান্দের চেফেরিন) একার নয় এবং স্প্যানিশ ফুটবল লা লিগা সভাপতির (হাভিয়ের তেবাস) সম্পত্তি নয়।
পেরেসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এক্স বা সাবেক টুইটারে তেবাস লিখেছেন, পেরেস লা লিগা সম্পর্কে ‘গুরুতর মিথ্যা’ বলেছেন, যেটা একটি ‘গণতান্ত্রিক সংগঠন’।
২০২৪ সাল থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা হবে নতুন ফরম্যাটে। গ্রুপ পর্ব বাদ দিয়ে খেলা হবে লিগ পদ্ধতিতে, প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে ৩৬টি দল।
পেরেস মনে করেন, দর্শকদের কথা বিবেচনা না করে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নতুন ফরম্যাটে আয়োজন করতে চায় উয়েফা। আর এই আগ্রাসন থেকে ফুটবলকে রক্ষার জন্য তার হাতিয়ার স্রেফ ইউরোপিয়ান সুপার লিগই।
“উয়েফা নির্বাহীরা উল্টো দিকে যাচ্ছে। তাদের নতুন মডেলে বেশি ম্যাচ হবে এবং (দর্শকদের) আগ্রহ কম থাকবে। এটি অযৌক্তিক প্রতিযোগিতা... তারা দর্শক, খেলোয়াড় বা ক্লাবগুলোর চাহিদা বিবেচনায় নেয় না। উয়েফা নতুন কিছুর শুরু করে না। যুক্তরাষ্ট্রের খেলাধুলা ছাড়াও অন্যান্য খেলার হুমকির সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তারা সেটা জানে না। আমরা অনেক বড় কর্পোরেশনের উদাহরণ দেখেছি, যাদের অজেয় বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে, কারণ তারা (পরিবর্তনের সঙ্গে) মানিয়ে নিতে পারেনি।”
“আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সুপার লিগের এখন অনেক বেশি প্রয়োজন। আমাদের ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে-কে সম্মান করতে হবে। সুপার লিগের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাগুলোকে শক্তিশালী করা। এটি দেশগুলোর নিজ নিজ লিগের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এটি একটি যোগ্যতা ভিত্তিক প্রতিযোগিতা হবে।”
আগামী ২১ নভেম্বর ‘কোর্ট অব জাস্টিস অব দা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’-এর রায় নিজেদের পক্ষে আসবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস পেরেসের।
“এটা ভালোই হতো যদি না আমরা এই (সুপার লিগ) প্রকল্পের নেতৃত্ব না দিতাম, কিন্তু (রেয়াল মাদ্রিদের) ইতিহাসই এটা দাবি করে... আমি ইইউ বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি ইউরোপীয় ফুটবলে উয়েফার একচেটিয়া আধিপত্য থাকা উচিত নয়। ২১ নভেম্বর আমরা এই মামলার রায় শুনব। এই রায়ের ওপর ইউরোপীয় ফুটবলের ভবিষ্যত নির্ভর করছে... আমরা আশা করি ২১ নভেম্বর ফুটবলে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে।”