সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ
সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অধরা রইল বাংলাদেশের।
Published : 30 Sep 2024, 08:06 PM
প্রায় এক ঘণ্টা পার করে দেওয়ার পর রক্ষণের দৃঢ়তায় ধরল চিড়। ভারতের বিপক্ষে প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলা বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ার পর খুঁজে পেল না ঘুরে দাঁড়ানোর পথ। সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন অধরা থেকে গেল এবারও।
ভুটানের চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে সোমবার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের দেখায় তাদের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল সাইফুল বারী টিটুর দল।
‘ফাইনাল হবে ফাইনালের মতো’, বাংলাদেশ কোচের এই ঘোষণার প্রতিফলন দেখা গেল না আক্রমণভাগে। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভারতের রক্ষণে তেমন কোনো ভীতি ছড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। অল্প-স্বল্প সুযোগ যা এসেছিল, তাও কাজে লাগাতে পারেননি মোর্শেদ-মানিকরা।
প্রথমার্ধে আক্রমণে ভারত আধিপত্য করলেও রক্ষণে দৃঢ়তা ধরে রাখে বাংলাদেশ। শিরোপাধারীরা প্রথম আক্রমণ শাণায় তৃতীয় মিনিটে; সতীর্থের ক্রসে ভারত লাইরেঞ্জামের হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
চতুর্দশ মিনিটে ইকরামুল ইসলামের দূরের পোস্টে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে আটকান ভারত গোলকিপার। একটু পর লাইরেঞ্জামের দূর্বল শট সহজেই গ্লাভসে জমান নাহিদুল ইসলাম।
৩০তম মিনিটে বক্সের ঠিক ওপরে ফ্রি কিক পায় ভারত। লেভিস জ্যাংমিনলুনের শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়।
বাংলাদেশের পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পর ৩৫তম মিনিটে সুযোগ পায় ভারতও, কিন্তু লেভিসের শট এবারও খুঁজে পায়নি ঠিকানা।
একই ধাঁচে এগিয়ে চলা ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে এগিয়ে যায় ভারত। অধিনায়ক মাতের কর্নারে হেডে নাহিদের প্রতিরোধ ভাঙেন মোহাম্মদ কাইফ।
চার মিনিট পর দুটি পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশ কোচ। অপু রহমান ও শফিক রহমানকে তুলে জয় রহমান ও মোহাম্মদ মানিককে নামান টিটু। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন মানিক।
৬৭তম মিনিটে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল জয়ের সামনে। সতীর্থের থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে তিনি শট নেওয়ার আগেই পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্লাইডে ক্লিয়ার করেন গোলরক্ষক।
এরপর সময় যত গড়াতে থাকে, বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর আশাও তত ফিকে হতে থাকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে টাইব্রেকারে জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার ছয় মিনিট যোগ করা সময়ে আর চমক দেখাতে পারেনি তারা।
বরং অন্তিম সময়ে আবারও গোল হজম করে বাংলাদেশ। বক্সের ওপরে জায়গা করে নিয়ে দৃষ্টিনন্দন শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মোহাম্মদ আরবাস। নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের মুকুট ধরে রাখা।
বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতা এ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬ ও ১৭ ক্যাটাগরিতে হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৬ ক্যাটাগরিতে একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৭ তে এই প্রথম রানার্সআপ হলো তারা।
২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ ক্যাটাগরিতে হওয়া প্রথম আসরে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। সেবার সেমি-ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ।
ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ কোচ টিটু বলেন, মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তার দল। দ্বিতীয়ার্ধে মনোযোগের ভুলে হজম করা প্রথম গোলের কারণে সবকিছু কঠিন হয়ে পড়েছিল বলেও মনে করেন তিনি।
“আমাদের পরিকল্পনা ছিল, মাঝমাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ পেলে আমরা পাল্টা আক্রমণে যাবো, সেটা অনুপস্থিত ছিল। দেখা যাচ্ছে, অনেক সময় আমরা বল পেলেও আবার তা হারিয়েছি। রোটেশন-পজিশন, লং পাস, অনন্য সাধারণ ডিফেন্ডার- এসব দিকে আমার মনে হয়েছে, ভারত খুবই ভালো দল।”
“আগেই বলেছিলাম, প্রতিপক্ষ (ভারত) শক্তিশালী। তবে আমরা ম্যাচটা যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম, তাহলে সেটা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হত, মানে এগিয়ে নিতে পারলে খেলাটা টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া যেত। আমার মনে হয়, মনোযোগ, শৃঙ্খলার অভাবেই কর্নার থেকে গোলটা খাই। সুযোগ তৈরি করার বিষয় ছিল, খেলোয়াড় বদলে অনেকভাবেই চেষ্টা করেছি, রাইটব্যাক তুলে ফরোয়ার্ড নামিয়েছিলাম ম্যাচের প্রভাব রাখার জন্য, কিছু সুযোগও এসেছিল কিন্তু হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে যখন দ্বিতীয় গোলটি হয়, তখন আর কিছু করার ছিল না। ভারত আমাদের চেয়ে শ্রেয়তর দল।”