দুই অর্ধেই দেখা মিলল তিনটি করে গোল, কখনও রেয়াল মাদ্রিদ কখনও ম্যানচেস্টার সিটি এগিয়ে গেল; অপেক্ষা এবার ফিরতি লেগের লড়াইয়ের।
Published : 10 Apr 2024, 03:07 AM
চল্লিশ সেকেন্ডের মধ্যে ফ্রি কিক পেল ম্যানচেস্টার সিটি, পরের মিনিটে গোল। শুরু হলো অসাধারণ, রোমাঞ্চকর এক লড়াই। ওই ধাক্কা সামলে পাল্টা জবাবে দুই মিনিটে দুবার জালে বল পাঠাল রেয়াল মাদ্রিদ। ফুটবলের গতি মাঝে-মধ্যে কিছুটা কমল বাড়ল; কিন্তু উত্তেজনা আর উন্মাদনায় ঘাটতি পড়ল না মুহূর্তের জন্যও। শেষ পর্যন্ত চলা গোল-পাল্টা গোলের লড়াইয়ে হার-জিতের দেখা মিলল না।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগ ড্র হয় ৩-৩ গোলে। অপেক্ষা এখন ফিরতি লেগের।
বের্নার্দো সিলভার দারুণ ফ্রি কিকে সিটি এগিয়ে যাওয়ার পর তাদেরই আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফেরে রেয়াল। এরপরই স্বাগতিকদের এগিয়ে নেন রদ্রিগো। দ্বিতীয়ার্ধে ফিল ফোডেন ও ইয়োশকো ভার্দিওলের চমৎকার দুটি গোলে ফের এগিয়ে যায় পেপ গুয়ার্দিওলার দল। খানিক পরই অবশ্য সমতা টানেন ফেদেরিকো ভালভের্দে।
ম্যাচের ঠিক আগে একটি ধাক্কা আসে সিটির জন্য। ড্রেসিং রুমে গিয়ে অসুস্থ অনুভব করায় খেলতে পারেননি কেভিন ডে ব্রুইনে।
রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শিরোপাধারীদের লড়াই কতটা রোমাঞ্চকর হতে পারে, কতটা উত্তেজনা ছড়াতে পারে, তার প্রমাণ মিলে যায় ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটেই।
শুরুটা হলো ৪০তম সেকেন্ডে; গতি আর ড্রিবলিংয়ে রেয়াল শিবিরে ভীতি ছড়ালেন জ্যাক গ্রিলিশ। তাকে আটকাতে ছুটে গিয়ে ফাউল করে বসলেন অহেলিয়া চুয়ামেনি, দেখলেন হলুদ কার্ড। কার্ডের খাড়াতেই ফিরতি লেগে তাকে পাবে না রেয়াল।
ওই ফ্রি কিকেই গোল আদায় করে নেয় সিটি। ২৫ গজ দূর থেকে জোরাল নিচু শট নেন বের্নার্দো সিলভা, একটু দেরিতে ঝাঁপিয়ে পড়া গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিনের হাতে লেগে বল চলে যায় গোললাইন পেরিয়ে!
দুই মিনিটের মধ্যে কামাভিঙ্গার হলুদ কার্ড এবং পিছিয়ে পড়ার চরম ধাক্কা লাগে রেয়াল শিবিরে।
সপ্তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারতো। তবে এবার আর ভুল করেননি লুনিন। আর্লিং হলান্ডের দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।
এরপরই যেন তেতে ওঠে রেয়াল। খানিক বাদেই দুই মিনিটে দুই গোল করে প্রতিপক্ষকে হতভম্ব করে দেয় তারা।
ভাগ্যের সহায়তাও যথেষ্ট পায় তারা। দ্বাদশ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শট নেন কামাভিঙ্গা, বল সামনে সিটির ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াসের গায়ে লেগে দিক পাল্টে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়।
ম্যাচের আগে হাই-লাইন ডিফেন্স কৌশল নেওয়ার পরিকল্পনার আভাস দিয়েছিলেন সিটি কোচ গুয়ার্দিওলা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই এগিয়ে যায় রেয়াল।
ভিনিসিউসের দারুণ পাস ধরে দারুণ ক্ষিপ্রতায় এগিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন রদ্রিগো। শট নিতে অবশ্য সামান্য দেরি করেন তিনি। শটে তেমন গতিও ছিল না; কিন্তু বল শুরুতে এক ডিফেন্ডারের পা ছুঁয়ে গোলরক্ষকের প্রসারিত পায়ে লেগে গড়াতে গড়াতে চলে যায় গোললাইন পেরিয়ে।
পরপর দুই গোল খেয়ে সিটি কিছুটা হলেও খেই হারিয়ে ফেলে। দুই দলের খেলার গতিও কমে একটু। এর মাঝেই ৩৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর নিশ্চিত সুযোগ পেয়েও নষ্ট করেন রদ্রিগো। সতীর্থের কাটব্যাক বক্সের মুখে ফাঁকায় পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় বুলেট গতির শট নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, কিন্তু লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না বল।
প্রথমার্ধে আক্রমণে আধিপত্য করে গোলের উদ্দেশ্যে আটটি শট নিয়ে চারটি লক্ষ্যে রাখতে পারে। বিরতির পরও তারা আক্রমণের ধারা ধরে রাখে। তিন মিনিটের ব্যবধানে দারুণ দুটি সুযোগও পায় তারা; কিন্তু সাফল্য মেলেনি।
৫৩তম মিনিটে ডি-বক্সে দুজনের বাধা এড়িয়ে জুড বেলিংহ্যামের নেওয়া শট দূরের পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। আর বক্সের মধ্যে থেকেই ভিনিসিউসের শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে যায়।
রেয়ালের ওই দুই ব্যর্থ প্রচেষ্টার মাঝে ভালো একটি সুযোগ পায় সিটি। কিন্তু, ছয় গজ বক্সের বাইরে বল পেয়ে রদ্রির নেওয়া লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না।
দারুণ ছন্দে থাকা ফোডেন ৬৬তম মিনিটে চমৎকার নৈপুণ্যে দলকে সমতায় ফেরান। ডান দিক থেকে সিলভার পাস বক্সের বাইরে ডান পায়ে ধরেই বাঁ পায়ে জোরাল শট নেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি লুনিন।
গত মৌসুমে লাইপজিগ থেকে আট কোটি ইউরোর বেশি ট্রান্সফার ফিতে সিটিতে নাম লেখানো ডিফেন্ডার ভার্দিওলের দলটির হয়ে ছিল না কোনো গোল, তিনিই পাঁচ মিনিট পর অসাধারণ এক গোলে দলকে এগিয়ে নেন। বক্সের মধ্যে থেকে গ্রিলিশের কাটব্যাক ধরে, একটু জায়গা বানিয়ে ২০ গজ দূর থেকে বাঁকানো শট নিলেন ক্রোয়াট ডিফেন্ডার, বল দূরের পোস্ট ঘেঁষে খুঁজে পায় ঠিকানা।
তবে, এমন রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের নাটকীয়তার যে শেষ নেই, তারই আরেক দফা প্রমাণ মেলে ৭৯তম মিনিটে। বাঁ দিক থেকে ডি-বক্সে ডান দিকে মাপা ক্রস বাড়ালেন ভিনিসিউস, আর ছুটে এসে বুলেট গতির ভলি করলেন ভালভের্দে। গোলরক্ষকসহ সবাইকে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট বল জড়ায় জালে।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে গিয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওযার সুযোগ পেয়েছিল রেয়াল; কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি দানি কারভাহাল।
আগামী বুধবার সিটির মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে হবে ফিরতি লেগ। যেখানে গতবার সেমি-ফাইনালের ফিরতি লেগে রেকর্ড ১৪ বারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল সিটি। পরে প্রথমবারের মতো তারা জিতে নেয় এর ট্রফি।