ফেদেরারের সঙ্গে চলে যাচ্ছে নাদালের ‘জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ’

প্রিয় বন্ধু রজার ফেদেরারের অবসরের দিনে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না রাফায়েল নাদাল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2022, 11:27 AM
Updated : 24 Sept 2022, 11:27 AM

টেনিস ইতিহাসের সেরা কিছু ম্যাচের জন্ম হয়েছে রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালের লড়াইয়ে। তাদের দুজনের দ্বৈরথ চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছে টেনিস রুপকথায়। শুধু টেনিসে নয়, একটা দিক থেকে তাদের এই লড়াই অনন্য বিশ্ব ক্রীড়া ইতিহাসেই। কোর্টে যেমন দুজন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী, কোর্টের বাইরে তাদের বন্ধুত্ব তুমুল। ফেদেরারের বিদায় বেলায় তাই আবেগের উথালপাথাল ঢেউ নাদালের হৃদয়ে। সুইস কিংবদন্তির বিদায় মঞ্চে জুটি বেঁধে খেলার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না স্প্যানিশ তারকা।

চোটের কারণে প্রায় এক বছর কোর্টের বাইরে থাকার পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর অবসরের ঘোষণা দেন ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী তারকা ফেদেরার। শুক্রবার লন্ডনের ওটু অ্যারেনায় সেটাই আনুষ্ঠানিক রূপ পায়। লেভার কাপের দ্বৈতে টিম ইউরোপের হয়ে নাদালের সঙ্গে কোর্টে নামেন শেষবারের মতো। 

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ে ম্যাচে টিম ওয়ার্ল্ড’সের জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস টিয়াফো জুটির বিপক্ষে ৪-৬, ৭-৬(৭-২), ১১-৯ গেমে হেরে যান ফেদেরার-নাদাল জুটি।

ম্যাচ শেষে দুই প্রতিপক্ষকে হাসি মুখে অভিনন্দন জানানো ফেদেরার প্রথমে হাসিমুখে আলিঙ্গন করেন নাদালের সঙ্গে। কিন্তু এরপরই বিদায়ের কষ্ট চেপে ধরে ৪১ বছর বয়সী ফেদেরারকে। টিম ইউরোপের সতীর্থদের মাঝে যেতেই আর নিজেকে পারেননি আটকাতে। ভেজা চোখে নাদালকে জড়িয়ে ধরেন। প্রিয় বন্ধুকে বিদায় জানাতে গিয়ে নাদালও কেঁদে ফেলেন। কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারিতে তখন দর্শকদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, ‘ফেদাল’…. ‘ফেদাল’। দুই গ্রেটকে একসঙ্গে এই নামেই ডাকা হয়ে আসছে।

বিদায়বেলায় ফেদেরারের চোখের জল ঝরতে থাকে ক্রমাগত। পাশে বসে নাদালের চোখে বাঁধ মানে না অশ্রু। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, দুই গ্রেট, দুই বন্ধুর এমন দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপিংস তোলপাড় ফেলে দেয় সামাজিক মাধ্যমে।

ম্যাচের পর নাদাল বলেন, প্রিয় বন্ধুকে বিদায় জানানো তার জন্য ছিল ভীষণ কঠিন ।

“আমাদের খেলার ইতিহাসে অসাধারণ এই মুহূর্তের অংশ হতে পারাটা আমার জন্য বড় এক সম্মান, পাশাপাশি এত বছর ধরে অনেক কিছু ভাগ করে নেওয়াটাও (ফেদেরারের সঙ্গে)।”

“রজার যখন কোর্ট ছেড়ে যাচ্ছে… হ্যাঁ তখন আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও তার সঙ্গে চলে যাচ্ছে। কারণ আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তগুলোতে সে আমার পাশে বা সামনেই ছিল। তাই তার পরিবার, দর্শকদের দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। আসলে এটা বর্ণনা করা কঠিন। তবে হ্যাঁ, অসাধারণ একটা মুহূর্ত।”

১০৩টি এটিপি একক শিরোপা ও রেকর্ড আটবারের উইম্বলডন জয়ী ফেদেরার প্রায় ৪০ বার খেলেছেন নাদালের বিপক্ষে। ইতিহাসের সেরা কিছু মহারণ উপহার দিয়ে কখনও শেষ হাসি হেসেছেন ফেদেরার, কখনও নাদাল। ব্যক্তিগত জীবনে সময়ের পরিক্রমায় দুই কিংবদন্তির বন্ধুত্বের গভীরতা কেবলই বেড়েছে। ক্যারিয়ায়ের শেষ ম্যাচে জুটিতে সঙ্গী হিসেবে নাদালকে পছন্দ করে তারই একটি নমুনা দেখান ফেদেরার।

ফেদেরারের বিদায়মঞ্চে একসঙ্গে খেলতে পেরে ভীষণ গর্বিত নাদাল।

“আমি মনে করি, প্রতি বছর ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিন দিন ভালো থেকে আরও ভালো হয়। আমার মনে হয়, কোনো না কোনো উপায়ে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, শেষ পর্যন্ত আমাদের অনেক কিছু মিল রয়েছে। আমরা সম্ভবত একইভাবে জীবনকে দেখি।”

“কোনো একটা ভাবে তার ক্যারিয়ারের অংশ হতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কোর্টে এতকিছু হওয়ার পর বন্ধুর মতো আমাদের ক্যারিয়ার শেষ করতে পেরে আমি আরও বেশি খুশি।”