অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে খেই হারিয়ে ফাইনালে হেরে গেল পল থমাস স্মলির দল।
Published : 05 Aug 2022, 08:36 PM
দুঃস্বপ্নের হানা ২৫ সেকেন্ডেই। পেনাল্টি থেকে গোল হজম করল বাংলাদেশ। সে ধাক্কা সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল দল। ভারত সমতা ফেরানোর পর ম্যাচ গেল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। একের পর এক গোল হজম করে আবারও স্বপ্ন ভঙ্গের বিষাদে নীল হলো বাংলাদেশ।
ভুবনেশ্বরের কালিংগা স্টেডিয়ামে শুক্রবার সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৫-২ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের জয়ে ৪ গোল করেছেন গুরকিরাত সিং, অন্য গোলটি হিমাংশু জাংরার।
২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীদের নিয়ে হওয়া এ প্রতিযোগিতার ফাইনালে ভারতের কাছে ২-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার রাউন্ড রবিন লিগের সেরা দল হওয়ার পথে ভারতকে একই ব্যবধানে হারিয়েছিল দল। ফাইনাল নিয়ে তাই আশার পারদও চড়েছিল উঁচুতে। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের ব্যর্থতার মিলিয়ে গেল তা।
নেপাল ম্যাচে শহীদুল ইসলাম লাল কার্ড পাওয়ায় ফাইনালের একাদশে পরিবর্তন আসে। সুযোগ পান শাহীন মিয়া। রাউন্ড রবিন লিগে চার গোল করা মিরাজুল ইসলামকে বেঞ্চে রাখেন কোচ পল থমাস স্মলি।
কিক অফের পর প্রথম মিনিটেই আক্রমণ শানায় ভারত। বক্সের বেশ বাইরে থেকে হিমাংশুর জোরাল শট আটকালেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি মোহাম্মদ আসিফ। আগলা বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ছুটে যান গুরকিরাত ও বাংলাদেশ গোলরক্ষক দুজনেই। আসিফের চার্জে গুরকিরাত পড়ে গেলে পেনাল্টি পায় ভারত। এই ফরোয়ার্ডই এগিয়ে নেন স্বাগতিকদের। চলতি আসরে কোনো ম্যাচে এই প্রথম আগে গোল হজম করল বাংলাদেশ।
শুরুর গোলে তাল-লয় কিছুটা হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ প্রথম আক্রমণ করে দশম মিনিটে। কিন্তু রফিকুল ইসলামের শট দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
এরপর খেলা হতে থাকে ঢিমেতালে। ব্যবধান বাড়ানোর ভালো সুযোগটি ভারত তৈরি করে ৩১তম মিনিটে। এবার গুরকিরাতের শট অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়। একটু পর সতীর্থের পাস ধরে বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেন ভারতের এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু পোস্টের বাইরে মেরে ব্যবধান দ্বিগুণের ভালো সুযোগ নষ্ট করেন তিনি।
৩৮তম মিনিটে ইমরানকে কাটিয়ে জায়গা করে নিয়ে জোরাল শট নেন হিমাংশু। আসিফ লাফিয়ে ফিস্ট করে ব্যবধান বাড়তে দেননি।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে সমতায় ফিরে বাংলাদেশ। পায়ের কারিকুরিতে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন রফিকুল। তার পাস প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে চলে যায় রাজনের সামনে। বুলেট গতির শটে জাল খুঁজে নেন তিনি।
তিনটি পরিবর্তন এনে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে বাংলাদেশ। মঈনুল ইসলাম মঈন, রাজন ও আক্কাস আলিকে তুলে জুম্মন হাসান নিঝুম, মিরাজুল ইসলাম ও মজিবর রহমান জনিকে নামান স্মলি। শুরুতে এগিয়ে যাওয়া গোলও পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
মাঝমাঠ থেকে ইমরানের ফ্রি কিক এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি পুরোপুরি। বক্সেই বল পেয়ে যান শাহীন। প্রথম স্পর্শে বল একটু ফাঁকায় বের করে নিয়ে বাঁ পায়ের দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ডিফেন্ডার।
বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ উবে যায় ৫৯তম মিনিটে। বক্সের ঠিক উপর থেকে গুরকিরাতের বুলেট গতির শট জালে জড়ালে সমতায় ফিরে ভারত। পাঁচ মিনিট পর বক্সের ভেতরে হিমাংশু পা বাড়ালেও বলের নাগাল পাননি, ছুটে এসে বিপদমুক্ত করেন আসিফ।
খানিক পর ডিফেন্ডার শাহীনকে ছিটকে দিয়ে হিমাংশু শট নিয়েছিলেন। তেমন গতি না থাকলেও আটকাতে পারেননি আসিফ। তবে গোললাইনের একটু উপর থেকে ক্লিয়ার করেন আজিজুল হক অনন্ত।
৮৯তম মিনিটে ভিবিন মোহান্নার পাসে ব্রিজেশ গিরির ব্যাক হিল ঝাঁপিয়ে কোনোমতে আটকান আসিফ। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে এবং শুরুতে বাংলাদেশের রক্ষণের দেয়াল ধসিয়ে দেয় ভারত।
শুরুতেই সতীর্থের পাস ধরে আগুয়ান আসিফের পাশ দিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন হিমাংশু। ৯৩তম মিনিটে সতীর্থের লং বল অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষকে কাটিয়ে কোনাকুণি শটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন গুরকিরাত।
৯৮তম মিনিটে বক্সের বেশ বাইরে থেকে তার শট লাফিয়ে ওঠা আসিফের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়ালে জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের।
বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতার ছয় আসরের শিরোপাই জিতল ভারত। দ্বিতীয়বারের মতো রানার্সআপ হলো বাংলাদেশ।