‘নিয়মের বেড়াজালে’ ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা

কোপা আমেরিকা সামনে রেখে খেলোয়াড়দের জন্য গান-বাজনা, ফোন ব্যবহার, কানের দুল না পরার মতো আরও অনেক কিছু করতে নিষেধ করেছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)।

ইয়ান কুতোকে দিয়ে শুরু; ব্রাজিলের এই ডিফেন্ডার চুল গোলাপি রঙ করেছিলেন। লা লিগায় খেলার সময় তার ক্লাব জিরোনার তাতে কোনো আপত্তি ছিল না। বিপত্তি বাঁধল, যখন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) তাকে রঙ করা চুল ছেঁটে ফেলতে বলল। তবে প্রতিবাদের পথে হাঁটেননি কুতো; মেনে নেন ফেডারেশনের নির্দেশনা।

এমন আরও বেশ কিছু নিয়মের বেড়াজালে খেলোয়াড়দের বাঁধতে চাইছে সিবিএফ। আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম টিওয়াইসি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে বিস্মিত খেলোয়াড়রাও।

কুতো অবশ্য এনিয়ে ক্ষোভ, উষ্মা কিছুই প্রকাশ করেননি। বলেছেন, সিবিএফ তাকে ‘অনুরোধ’ করেছিল এবং বিষয়টি মেনেও নিয়েছেন তিনি।

“মূলত এটা অনুরোধ ছিল। তারা আমাকে বলেছিল গোলাপি রঙ অসংযত ধরনের বা এরকম কিছু একটা। আমি এটা বিশ্বাস করি না, কিন্তু তাদের মতকে আমি শ্রদ্ধা করব। তারা আমাকে বলেছে ফেলে দিতে এবং আমি সেটাই করব। আমি মৌসুমজুড়েই গোলাপি রঙ করা চুল নিয়ে খেলেছি। এটা আসলে আমার পছন্দ। ভালোই চলছিল, মজার ছিল।”

“কিন্তু বিষয়টি জিরোনায় ভিন্ন রকম ছিল, সেখানে অনেক মানুষ তাদের চুল রঙিন করে; এটা ফ্যাশনের মতো। এখানে, জাতীয় দলে সেই চক্রের শেষ। আমি কালো চুলের ইয়ান, তাতে কোনো কিছুই বদলাবে না। আমি আছি আগের মতোই।”

কেবল চুলের রঙ করা ইস্যু নয়, আরও অনেক বিষয়ে সিবিএফ নির্দেশনা জারি করেছে বোর্ডের পরিচালক ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে বসে; যদিও বিষয়গুলো লিখিত নিয়ম নয়।

নিয়মের যে তালিকা অনুসরণের নির্দেশনা সিবিএফ দিয়েছে, তার সবগুলো না হলেও কিছু কিছু তৈরি করা হয়েছে, খেলোয়াড়দের ‘ইমেজ’র ক্ষতি রোধ করতে। নিকট অতীতে বড় টুর্নামেন্টগুলোতে ব্রাজিলের বিবর্ণ পারফরম্যান্স ও অপ্রত্যাশিত ব্যর্থতার বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে ব্রাজিল ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটি।

২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে এ মুহূর্তে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের টেবিলে ষষ্ঠ স্থানে আছে ব্রাজিল। সপ্তম স্থানে থাকা প্যারাগুয়ের চেয়ে ২ পয়েন্ট বেশি নিয়ে সরাসরি মূল পর্বের টিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে থাকার স্বস্তি অবশ্য আছে তাদের।

কিন্তু বাছাইয়ের ছয় ম্যাচে বিশ্বকাপের রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা জিতেছে মাত্র দুটি। বাকি চার ম্যাচের মধ্যে হার তিনটি, ড্র একটি। ঘরের মাঠে ঐতিহাসিক অজেয় যাত্রাও তাদের থেমেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেরে।

উল্টোরথে ছোটা দলকে পথে ফেরাতে, আগামী ২০ জুন শুরু হতে যাওয়া কোপা আমেরিকায় ভালো ফলের ভাবনা মাথায় রেখে নির্দেশনাগুলো তৈরি করেছে সিবিএফ।

‘রুলস অব কনডাক্ট’-এ যে বিষয়গুলো সংস্থাটি রেখেছে, তার মধ্যে আছে মাঠের বাইরেও খেলোয়াড়দের ‘ইমেজের’ ব্যাপারে সচেতন থাকা, চটকদার কানের দুল, গলার মালা (নেকলেস) পরিহার করা, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচক্ষণ হওয়া, আহারের সময় ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা (খাবারের শেষে ব্যবহার করা যাবে) ইত্যাদি।

এছাড়াও আছে হেডফোন ব্যবহার বা জোরাল মিউজিক শুনতে শুনতে স্টেডিয়ামে আসা থেকে বিরত থাকা, লকার রুমে খেলোয়াড়দের গান শোনা কিংবা (গেম) খেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে না দেওয়া, অনুশীলন সূচি ও খাবারের বিষয়ে মনোযোগী হওয়া, সময়ানুবর্তী হওয়া এবং সিবিএফের পরিকল্পনাগুলোকে সম্মান করার নির্দেশনা।

আগামী ২৪ জুন কোস্টা রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে কোপা আমেরিকার এবারের আসরে যাত্রা শুরু করবে সবশেষ ২০১৯ সালে এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জেতা ব্রাজিল। ‘ডি’ গ্রুপে তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া ও প্যারাগুয়ে।