‘জটিলতার’ পরও ইভিএমে খুশি ঢাকার ভোটাররা

যান্ত্রিক ত্রুটি, আঙুলের ছাপ না মেলাসহ কিছু জটিলতার পরও প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিতে পেরে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ঢাকার ভোটাররা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2018, 07:13 AM
Updated : 30 Dec 2018, 11:53 AM

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। এসব আসনের আট শতাধিক কেন্দ্রে ভোটার রয়েছে ২১ লাখের বেশি।

রোববার সকালে ঢাকা-১৩ আসনের মোহাম্মদপুরের বরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে হাসিমুখে বের হয়ে যাচ্ছিলেন ষাটার্ধ্বো জগৎ দাসী মণ্ডল।

মেশিনে ভোট দিতে কেমন লাগলো- প্রশ্ন করতেই বলেন, “সোজা, অনেক সোজা।”

এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জয়ন্ত চন্দ্র দেব জানান, তার কেন্দ্রে তিনটি মেশিন নষ্ট ছিল। পরে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। ভোটারারা ঠিকমত ভোট দিচ্ছেন।

এই কেন্দ্রে ভোট পড়ার হারও সন্তোষজনক বলে জানান তিনি।

বরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টের বাইরে শুধু হাতি মার্কার এজেন্ট ছিল।

লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলার পর এনআইডি নম্বর মিলিয়ে ভোট দিয়েছেন তিনি।

“ভোট দিতে কোনো সময়ই লাগেনি।”

লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সাবেক গ্রন্থাগারিক গাজী হোসেন এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আঙ্গুলের ছাপ মিলছিল না, দেরি হল, এটা তো ঝামেলাই।”

লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ে তিনটি কেন্দ্র ভোট হচ্ছে। ৭৯ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মাসুম বিন ওয়াহাব জানান, ইভিএমে ক্রটির বিষয়টি যারা কারিগরি সাপোর্ট দিচ্ছেন তাদের জানানো হয়েছে। রাতে যখন ডেমো ভোট পরীক্ষা করেছি তখন কোনো সমস্যা হয়নি।

লালমাটিয়া মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ৮০ নম্বর কেন্দ্রে শুধু নারীদের ভোট নেওয়া হচ্ছে।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট জটিলতার বিষয় জানতে চাইলে এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. রাজীব শেখ বলেন, “আঙ্গুলে সমস্যা থাকতে পারে।”

মোহাম্মপুরের চাঁদ কমিউনিটি সেন্টারে ভোট দিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিমল চন্দ্র।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ইভিএমে চাপ তো দুটো। মার্কা আর সবুজ বাটন, দুই টিপেই ভোট শেষ, ১০ সেকেন্ডের কাজ। ভোটার চিহ্নিত হতেই যা সময়। ভোট শেষ তো কাউন্টও শেষ। সব কেন্দ্রের ফল কালেক্ট করতে ২০ মিনিট। এটাই ভালো।”

শিয়াপাড়া এলাকার গ্রিনউডস স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন এই এলাকার একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী শহীদুল ইসলাম। ইভিএমে ভোট দিতে এক সেকেন্ডও সময় লাগেনি জানিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি।

এই কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ফরিদুর রহমান নামে আরেকজন ভোটার বলেন, “এটাই সব থেকে সহজ পদ্ধতি।”

এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার উজ্জাল সাহা জানান, তার কেন্দ্রে কোনো মেশিনে সমস্যা দেখা দেয়নি। ধানের শীষের এজেন্ট না থাকলেও নৌকা, কাস্তে এবং হাতপাখার এজেন্ট রয়েছেন তার কেন্দ্রে।

ঢাকা-১৩ আসনের বেগম নুরজাহান মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট দিয়েছেন কোহিনূর ইসলাম। ভোট দিতে গিয়ে তার বুথে ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভোট দিতে ৪৫ মিনিট সময় লেগেছে বলে জানান তিনি। তারপরও সব ভোট ইভিএমে নেওয়ার পক্ষে তিনি।

“এই পদ্ধতিতে লুটপাটের ভোট বন্ধ হবে। কারো এজেন্ট না থাকলেও চলবে।”

এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা স্বপন কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খেটে খাওয়া মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলতে সমস্যা হতে পারে। যাদের এমন সমস্যা হচ্ছে প্রার্থীদের এজেন্টদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এনআইডি নম্বর যাচাই করে তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

ইভিএমে পোলিং কার্ড, এসডি কার্ড এবং অডিট কার্ড থাকে জানিয়ে স্বপন বলেন, পোলিং কার্ড অর্থাৎ, যে কার্ডে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের ভোটারদের তথ্য থাকে তাতে ঝামেলা দেখা দিলে ভোট নেওয়া যায় না।

এই কেন্দ্রে নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের এজেন্টও দেখা গেছে।

বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকার সেন্ট মার্টিন মিশন স্কুলে ভোট দিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপন হাসান বলেন, “যারা ইভিএমে ভোট নেওয়ার বিরোধীতা করেন তারা মুর্খ। এই পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া যেমন সহজ তেমনি নিরাপদ বলেই আমি মনে করি।”

এই কেন্দ্রে ভোট দেওয়া বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুশরাত জাহান বলেন, “এবারই প্রথম ভোট দিলাম তাও ইভিএমে, ভোট দিতে এক মিনিটও লাগেনি।”