‘ক্লিক কেমেস্ট্রির’ গবেষণায় ৩ বিজ্ঞানীর নোবেল

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ক্যারোলিন আর বের্তোজি, ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কে. ব্যারি শার্পলেস পাচ্ছেন এ পুরস্কার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2022, 10:04 AM
Updated : 5 Oct 2022, 10:04 AM

দুটো অণুকে কীভাবে খুব সহজে জোড়া দেওয়া যায় এবং জীবন্ত কোষে কী করে সেই কৌশল খাটানো যায়, সেই পথের দিশা দেখিয়ে চলতি বছর রসায়নে নোবেল পেলেন তিন গবেষক।

রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস বুধবার এ পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ক্যারোলিন আর বের্তোজ্জি, ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কে. ব্যারি শার্পলেসের নাম ঘোষণা করে।

নোবেল পুরস্কারের এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার সমানভাবে ভাগ করে নেবেন এই তিন বিজ্ঞানী।

রসায়নবিদরা পরীক্ষাগারে জটিল অণু তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। ফার্মাসিউটিক্যালস গবেষণায় প্রায়ই প্রাকৃতিক অণুগুলোকে কৃত্রিমভাবে যুক্ত করা হত। কিন্তু সেটা ছিল সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।

নোবেল কমিটি বলছে, ব্যারি শার্পলেস ও মর্টেন মেলডাল দুটো অণুকে খুব সহজে দ্রুত ও কার্যকরভাবে যুক্ত করার কৌশল উদ্ভাবন করেন, যাকে বলা হচ্ছে ক্লিক কেমেস্ট্রি। 

আর ক্যারোলিন বের্তোজ্জি এই ক্লিক কেমেস্ট্রিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যান এবং প্রাণীদেহে সেই কৌশল ব্যবহার শুরু করেন কোষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে বিঘ্নিত না করেই। এর মধ্য দিয়ে ‘বায়োঅর্থোগনাল কেমেস্ট্রি’ ভিত্তি পায়।

ক্লিক কেমেস্ট্রির কৌশল ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে এখন। ডিএনএ ম্যাপিং কিংবা নির্দিষ্ট ওষুধ তৈরির জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপাদানগুলো বাছাই করার কাজকে সহজ করে দিয়েছে ওই কৌশল।

বায়োঅর্থোগনাল রসায়নের জ্ঞান ব্যবহার করে গবেষকরা এখন ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির কাজ করছেন। সেসব ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে এখন।

তিন বিজ্ঞানীর কাজের প্রশংসা করে রসায়নে নোবেল কমিটির সভাপতি জোহান অ্যাকভিস্ট বলেন, তাদের গবেষণা রসায়নকে আরও সহজ ও কার্যকর রূপ দিয়েছে, বিজ্ঞানের জগতে ফেলেছে বিপুল প্রভাব। তাদের দেখানো পথ আগামী দিনে ওষুধ শিল্পকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।

১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় জন্ম নেওয়া ব্যারি শার্পলেস এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত নোবেল পেলেন। এর আগে ২০০১ সালেও তিনি রসায়নেই নোবেল পেয়েছিলেন।

আর নোবেলের ইতিহাসে শার্পলেস দ্বিতীয় বিজ্ঞানী, যিনি রসায়নে এ কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছেন। তার আগে ১৯৫৮ এবং ১৯৮০ সালে রসায়নে দুবার নোবেল পান ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক স্যাঙ্গার।

এক বিজ্ঞানীর একই বিষয়ে দুটো নোবেল পাওয়ার নজির আছে কেবল আর একটি। ১৯৫৬ ও ১৯৭২ সালে জন বার্ডিন পদার্থবিজ্ঞানে দুবার নোবেল পান।

নোবেলের ইতিহাসে আরও দুজন বিজ্ঞানী দুইবার নোবেল পেয়েছেন, তাবে দুবার আলাদা দুটো বিষয়ে।

মাদাম কুরি ১৯০৩ সালে পদার্থবিদ্যায় এবং ১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আর ১৯৫৪ সালে রসায়নে নোবেল পাওয়া লিনাস পলিং পাউলিং ১৯৬২ সালে নোবেল পান শান্তিতে।

নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে ১৯০১ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১১৬ জন রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা ক্যারোলিন বার্তোজ্জি হলেন তাদের মধ্যে অষ্টম নারী। 

২০২০ সালে নোবেলের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো একটি বিভাগে একসঙ্গে দুই নারীর পুরস্কার জয়ের ঘটনা ঘটেছিল এই রসায়নেই। সেবার এমানুয়েল শার্পেন্টার ও জেনিফার এ ডৌডনা যৌথ ভাবে নোবেল পান।

বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। জিন গবেষণার মাধ্যমে মানব বিবর্তনের অজানা অধ্যায়ে আলো ফেলা সুইডিশ বিজ্ঞানী স্ভান্তে প্যাবো এবার চিকিৎসায় নোবেল জিতেছেন।

সোমবার ঘোষণা হয় পদার্থবিদ্যার নোবেল। বিজড়িত ফোটন কণা নিয়ে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ‘যুগান্তকারী’ গবেষণার স্বীকৃতিতে এবছর পুরস্কার পেয়েছেন বিজ্ঞানী অ্যালেইন আস্পেক্ট, জন এফ ক্লজার এবং অ্যান্টন জেলিঙ্গার।

এরপর বৃহস্পতিবার আসবে সাহিত্যের নোবেল ঘোষণা। শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুবছর এই আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়েছিল ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।