নানা কারণে এবার একটু পর্যটক সমাগম কম। তবে পর্যটকরা যেন হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
Published : 30 Dec 2023, 11:44 PM
খ্রিষ্টীয় নতুন বছর বরণে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে’ দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ কিংবা হোটেল-মোটেলে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। ফলে পর্যটক প্রায় নেই বললেই চলে বলে জানিয়েছেন হোটেল মালিকরা।
তারা জানিয়েছেন, এবার ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ পড়েছে রোববার। সরকারি ছুটি নেই, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনের কড়াকড়ি, আবার আউটডোর-ইনডোর কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন না থাকায় এবার পর্যটকদের সাড়া নেই। অথচ অন্যান্য বছর এদিনে লাখো পর্যটকের সমাগম হত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে।
হোটেল মালিকরা জানান, ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে টানা দেড় মাস পর্যটকশূন্য ছিল কক্সবাজার। এ কারণে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ খালি পড়েছিল। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর থেকে পাঁচদিনের ছুটিতে ব্যবসা কিছুটা চাঙা হলেও পরে আবার পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে সমুদ্র সৈকত।
শনিবার সকালে সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সী-গাল, লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও পর্যটকের তেমন ভিড় নেই। প্রতিদিনের মত কিছু পর্যটক সেলফি ওঠানো, বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ, সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে সৈকতে ভিড় কম থাকাতে আনন্দ বেশি হচ্ছে বলে জানালেন দিনাজপুর থেকে আসা নবদম্পতি মিরাজ আহম্মেদ ও সুস্মিতা আহম্মেদ।
সুস্মিতা বলেন, “আমি সব সময় কোলাহল কম পছন্দ করি। যে কারণে এই সময়টা খুব ভাল লাগছে। এবার অসাধারণ সময় পার করছি। যেহেতু বিয়ের পর বরের সঙ্গে এসেছি একটু অন্যরকম ভালো লাগা তো আছেই।”
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন নবম শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া খানম।
তিনি অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল, কক্সবাজার সৈকতে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করব। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, পড়ালেখার চাপ নেই। এবার বাবা-মায়ের সঙ্গে এখানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করব। এখানকার পরিবেশও অসাধারণ।”
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, “নির্বাচন নিয়ে মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছে, আবার আতঙ্কও আছে। এ ছাড়া এখনও পর্যন্ত স্কুলগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম চলমান, সবমিলে এবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে পর্যটকদের সাড়া নেই।”
অথচ গত বছর এই দিনে হোটেল মোটেলগুলোতে কোনো কক্ষ ফাঁকা ছিল না কিন্তু এ বছর তিনভাগের দুইভাগ কক্ষই ফাঁকা বলে জানান তিনি।
নির্বাচনের কারণে উন্মুক্ত মঞ্চে কনর্সাট আয়োজনে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু পর্যটক নেই, সে কারণে পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে ইনডোর কোনো আয়োজনও এবার হচ্ছে না।
কক্সবাজারে পর্যটকদের আবাসনের জন্য রয়েছে সোয়া ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ ও কটেজ। যেখানে প্রায় এক লাখ পর্যটকের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে জানান তিনি।
শহরের পাঁচ তারকা হোটেল কক্স-টুডে’র সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব শাহ বলেন, “নানা কারণে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। অন্যান্য বছর রুমের জন্য হাহাকার তৈরি হলেও এবার ওইদিন ৩৫ ভাগ বুকিং আছে।”
নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো বুকিংই নেই।”
কলাতলীর হোটেল সী উত্তরার প্রধান নির্বাহী মো. ওসমান গণি বলেন, সংসদ নির্বাচন, ছেলে-মেয়েদের ভর্তি, উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্ট আয়োজনে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা কারণে এবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজারে পর্যটক আসছেন না। যে কারণে প্রতিটি হোটেল-মোটেল প্রায় ফাঁকা।
তিনি বলেন, এ হোটেলে ৬০ কক্ষের মধ্যে ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর দুই দিনের জন্য সাতটি কক্ষ বুকিং ছিল, তাও বাতিল করা হয়েছে।
কক্সবাজারের সৈকতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিচকর্মী মো. বেলাল হোসেন বলেন, “অন্যান্য বছর আগের দিন থেকে সৈকতে পর্যটকের ভিড় শুরু হয়। দায়িত্ব পালনে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এবারে সেই চাপ নেই। সৈকতের কোনো পয়েন্টে নেই পর্যটক।”
থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতসহ উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট বা অনুষ্ঠানের আয়োজন বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার আগে উন্মুক্ত স্থানের সব আয়োজন শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে হোটেল মোটেলে ইনডোর আয়োজনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এই সময়ের পর আতশবাজি প্রজ্বলন, বাজি ফুটানো যাবে না। এমনকি হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন স্থানের বারও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, নানা কারণে এবার একটু পর্যটক সমাগম কম হচ্ছে। তবে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয় তা দেখভাল করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে তৎপর রয়েছে।
সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হয়রানির শিকার পর্যটকেরা সেখানে অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, “আমাদের কাছে পর্যটকদের নিরাপত্তাই প্রধান। ভ্রমণে এসে কোনো পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”