লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রত্যাশায় নেত্রকোণায় ধান-চাল ক্রয় শুরু

সবশেষ আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান কেনা হয়নি এই জেলায়; এবার বোরো মৌসুমে ১৫ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 01:17 PM
Updated : 15 May 2023, 01:17 PM

অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ অভিযানের আওতায় সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা কার্যক্রম শুরু করেছে নেত্রকোণা জেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটি।

সোমবার দুপুরে শহরের বারহাট্টা রোডের খাদ্য গুদাম প্রাঙ্গণে ধান-চাল কেনা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

এবার নেত্রকোণায় ১৫ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন ধান এবং ৬১ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোয়েতাছেমুর রহমান।

এর আগে সবশেষ আমন মৌসুমে সরকারিভাবে এক ছটাক ধানও কেনা সম্ভব হয়নি এই জেলায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ৭ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু কোনো ধান কেনা সম্ভব না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা একেবারেই পূরণ সম্ভব হয়নি। তবে ১৯ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কেনা হয়েছিল ১২ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন।”

গত বোরো মৌসুমে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ৪৮৪ মেট্রিক টন, যার মধ্যে কেনা হয়েছিল এক হাজার ২৬৯ মেট্রিক টন। ৫৬ হাজার ২২ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি, সেসময় সরকারিভাবে ৫১ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন চাল কেনা গিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রম সফল করতে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে প্রচার চালানো হবে ।

চাল কিনতে মিলারদের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে জানিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, “আগামী ১৮ মে নাগাদ চুক্তি সম্পন্ন হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান কেনা হবে। এবার সদর, দুর্গাপুর ও মদন উপজেলায় অ্যাপসের মাধ্যমে নির্বাচন করে চাল কেনা হবে। তবে বাকি সাত উপজেলায় অ্যাপস ছাড়াই কার্যক্রম চলবে। এবার প্রতি কেজি ধান কেনা হবে ৩০ টাকায়। মিলারদের কাছ থেকে যে সেদ্ধ চাল কেনা হবে তার প্রতি কেজির দাম ধরা হয়েছে ৪৪ টাকা।”

সংগ্রহের প্রথম দিন সদর উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে এক মেট্রিক টন ধান কিনেছে খাদ্য বিভাগ।

এছাড়া জেলা শহরের দীনা আশরাফ, এ আর খান পাঠান ও মজুমদার আটোমেটিক চাল কলের কাছ থেকে ১০০ মেট্রিক টন করে মোট ৩০০ মেট্রিক টন চাল কেনা হয়েছে।

বাংলাদেশ অটোমেটিক মেজর অ্যান্ড হাসকিং চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান বলেন, “বাজারে ধানের দাম বেশি হলে চালের দামও বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে গুদামে চাল সরবরাহ করা মিলারদের পক্ষে কঠিন হয়। নেত্রকোণায় গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বর্তমানে খালি রয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন। গুদামের এই সামান্য পরিমাণ খালি স্থান মিলারদের জন্যে সমস্যা সৃষ্টি করবে।”

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাজারের যে অবস্থা তাতে মিলাররা গুদামে চাল দিতে পারবেন। কিন্তু যত দেরি হবে, দাম বাড়বে। সেক্ষেত্রে গুদামে চাল দেওয়া কঠিন হবে।

এ কারণে তিনি দ্রুত গুদামে খালিস্থান বাড়ানোর তাগিদ দেন।

গত আমন মৌসুমের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার পর এবার কার্যক্রম সফল করতে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, “নীতিমালা অনুযায়ী ধান এবং চাল ক্রয় করা হবে। সরকার ডিজিটালি অ্যাপসের মাধ্যমে ধান এবং চাল ক্রয় করছে। অ্যাপসের মাধ্যমে যাতে কৃষকেরা ধান দিতে পারে সেজন্য প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।”

খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সাংবাদিকদেরও এ বিষয়ে প্রচার চালাতে অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, “আমি ইউএনওদের নির্দেশনা দিয়েছি তারাও যেন প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে কৃষকদের সচেতন করেন। কৃষকদের পুরো প্রক্রিয়া বুঝিয়ে প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যাতে যুক্ত করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, ধানউদ্বৃত্ত জেলা নেত্রকোণার ১০ উপজেলায় হাওরাঞ্চল, সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চল মিলিয়ে এবার বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৬ হেক্টর জমিতে উফশি, ৪৫ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ১৭৪ হেক্টরে স্থানীয় জাতের বোরো ধান আবাদ হয়।

এ বছর বোরো ধানে নেত্রকোণায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে জানিয়ে উপ-পরিচালক বলেন, “হাওরে পানি আসার আগেই ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কাঠা প্রতি ছয়-সাত মণ করে ধান পাচ্ছেন কৃষকরা।”

নেত্রকোণায় এবার বোরো ধানের আশাতীত উৎপাদন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এতে ১১ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৫ টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত মোট আবাদের ৯৬ শতাংশ ধান কর্তন শেষ হয়েছে।”