চলমান আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন শহরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লীর হ্যাচারি মালিকরা।
Published : 23 Apr 2024, 11:39 AM
যশোরে প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে মৎস্যপল্লী খ্যাত চাঁচড়ায় রেনুপোনা উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে ঝরে পড়ছে আম-লিচু। দাবদাহে পুড়ে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে সবজি।
এভাবে তীব্র তাপপ্রবাহে সবজি, ফল ও মাছ উৎপাদন ব্যাপক হুমকির মুখে পড়ায় শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন যশোরের চাষিরা।
তবে জেলার বোরো ধান এর মধ্যেই পেকে উঠার কারণে চলমান আবহাওয়া তেমন একটা ক্ষতি করতে পারেনি বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু ধান কাটার আগ পর্যন্ত ক্ষেতে পানি রাখার কথা বলেছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরের দু’ দিন তাপমাত্রা কম রেকর্ড হলেও প্রখর রোদ আর গরম অনুভূত হয়েছে আগের দিনের চেয়ে অসহনীয়। মঙ্গলবারও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চলমান আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে শহরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লীর হ্যাচারি মালিকরা।
জেলা মৎস্য চাষি ও হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চাঁচড়ার মাতৃফিস হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, পুকুর-খাল, ডোবা-নালায় কোনো পানি নেই। যেটুকু আছে তা এই গরমে আগুন হয়ে যাচ্ছে। পানিতে থাকা মাছ মরে ভেসে উঠছে।
মাছ চাষের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতির মুখে কখনও পড়েননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “গরমের কারণে হ্যাচারিতে মাছের রেনু পোনা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। যে কারণে দেশের বাইরে থেকেও কোনো ক্রেতা আসছে না।”
তিনি বলেন, “এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে আমাদের পথে বসতে হবে।
একই কথা বলেন, জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান।
তিনি বলেন, সাধারণত ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা হলে মাছের রেনুপোনা উৎপাদনে সমস্যা দেখা যায়। সেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৪৩ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। এ পরিস্থিতিতে মাছ রক্ষা করা কোনো রকমে সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিকরা শুধু বসে বসে টাকা নিচ্ছে।
চলমান গরমে এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। সহসা বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে শঙ্কার কথা জানান এই হ্যাচারি মালিক।
মাছের পাশাপাশি তীব্র গরমে সবজি ও ফলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। পর্যাপ্ত পানির অভাবের পাশাপাশি তীব্র খরার কারণে আম ও লিচু গাছ থেকে ঝরে যাচ্ছে। দাবদাহে ক্ষেতের বিভিন্ন জাতের সবজি নষ্ট হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, বিদ্যমান তাপমাত্রার কারণে লিচু ও আম ঝরে গিয়ে ফলন কমে যেতে পারে। তাছাড়া সবজির উৎপাদনও কম হবে। জেলার ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ রয়েছে। আর আম রয়েছে ৫০০ হেক্টর ও লিচু ২৫০ হেক্টর।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে সবজি ক্ষেত রক্ষা করতে সূর্য ডোবার পর ক্ষেতে বেশি বেশি সেচ দেয়া ও আম-লিচুসহ অন্যান্য ফল গাছে গোড়ায় গর্ত করে সেচ দেওয়াসহ মালচিং পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্যে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তবে চলমান আবহাওয়ায় বোরো আবাদের তেমন ক্ষতি করতে পারছে না বলে জানান তিনি ।
এই তাপমাত্রা বরং ধান দ্রুত পাকতে সহায়তা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলায় ৭ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি ধান আগামী ১৫ দিনে কাটা হয়ে যাবে। তবে ধান কাটার আগ পর্যন্ত আবহাওয়া এমন থাকলে ক্ষেতে ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত পানি ধরে রাখতে হবে।