অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছেন বরিশালের বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ।
ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, “মূল শঙ্কা থাকে চরের মানুষকে নিয়ে। এরই মধ্যে ভোলার বিভিন্ন চরের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালীর রাঙাবালী, গলাচিপা ও দশমিনার চর অঞ্চলের প্রচুর মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ও ঘূর্ণিঝড় শেল্টার সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিপত্র ১৫ অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “বায়ুতাড়িত ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। আমরাও শতভাগ প্রস্তুত রয়েছি।”
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় শনিবার বিকালে বরিশাল বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, “আশা করছি, প্রতিবারের মতো এবারও আমরা রক্ষা পাব। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব না। আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি আছে। বিভাগের প্রতিটি দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।”
মো. আমিন উল আহসান জানান, বরিশাল জেলায় ৫৪১টি, পটুয়াখালীতে ৭০৩, ভোলায় ৭৪৬, বরগুনায় ৬৪২, পিরোজপুরে ৪০৭ ও ঝালকাঠিতে ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে বিভাগের ৩৫টি মুজিব কিল্লাও। এসব কেন্দ্রে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৬ জন মানুষ ও ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪৯০ গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নগদ অর্থ রয়েছে ৫৯ লাখ ২০ হাজার ৮০৪ টাকা, কম্বল ২০ হাজার ৭০০টি, টিন রয়েছে ৫৪৩ বান্ডেল।
এ ছাড়া প্রস্তুত রয়েছেন ৩৯ হাজার ৪২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৪৮টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং ৩৫৭টি মেডিকেল টিম। সরকারের পাশাপাশি ২০ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও মোখা মোকাবেলায় মাঠে রয়েছে।
সভায় উপস্থিত শেখ হাসিনা সেনানিবাসের লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাবিবুর রহমান জানান, উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য তাদের পাঁচটি রেসকিউ টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া ৩৭টি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিমও রয়েছে। দুর্গম এলাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর জন্য সব ধরনের যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সমুদ্র থেকে সব ধরনের মাছ ধরার ট্রলার ফিরে এসেছে বলে জানান মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, “দুর্যোগে মাছ বেশি ধরা পড়ে। এই কারণে কিছু জেলে সাগর ও নদীতে থাকে। এবারও রয়েছে কিনা নিশ্চিত নই।”
যদি কোনো জেলে এই পরিস্থিতিতেও মাছের জন্য সাগর বা নদীতে অবস্থান করে থাকেন তাহলে তাদের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি থানার মাধ্যমে আমার চেষ্টা করেছি জেলেরা অন্তত তীরে ফিরে আসুক।”
যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
সভায় মহানগর পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ কবির খান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হুমায়ন শাহিন খান, র্যাব-৮ এর উপ- অধিনায়ক মেজর জাহাঙ্গীর আলম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম, কোস্ট গার্ডের চিফ পেটি অফিসার বাবুল আক্তার, নৌ-পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।