পরিদর্শনকালে স্থানীয়দের মনোভাব জানতে চান চীনা রাষ্ট্রদূত।
Published : 09 Oct 2022, 09:24 PM
চীনের সহায়তায় তিস্তা নদী নিয়ে যে প্রকল্পের কথা কয়েক বছর ধরে আলোচনায় আছে, সেই প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিস্তা বাঁধ ও সেচ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
বাঁধ পরিদর্শন শেষে নীলফামারীর ডালিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে চীনা সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
“স্থানীয় জনগণের জন্য প্রকল্পটি সত্যিকার অর্থে প্রয়োজনীয় কি না, তা স্বচক্ষে দেখতে সহকর্মী ও চীনা কোম্পানিদের নিয়ে আমি এখানে এসেছি।”
বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের বরাতে বছর দুয়েক আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফরের সময় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয়ে চীনের সহায়তা চেয়েছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট।
এই প্রকল্পে তিস্তার উপকূল ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে সেই প্রতিবেদনে জানিয়েছিল বিবিসি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি রংপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী খুব সিরিয়াস। আন্তর্জাতিক একটা ছোট ঝামেলা আছে, এ কারণে বিলম্ব হচ্ছে। তবে এটা হলে নদীর দুই পাড়ে বিশাল অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। সব কিছু ব্যালেন্স করেই এটা করা হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই চাইছেন তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন হোক।”
স্থানীয় মানুষের সমর্থন থাকলেই কেবল এ প্রকল্পে চীন থাকবে জানিয়ে রোববার চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমি জানি, এ প্রকল্পে কিছু সংবেদনশীল বিষয় আছে, কিন্তু আমরা দেখব স্থানীয় মানুষের আগ্রহ আছে কি না এবং বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ আছে কি না। এরপর আমরা এ প্রকল্প নিয়ে আগানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা দেখাতে পারি।”
কিছু কূটনীতিবিদ তিস্তা প্রকল্পকে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-বিআরআই' প্রকল্পের অংশ হিসেবে বর্ণনা করছেন, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে লি জিমিং বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত অনেক দেশই প্রকল্পটি নিয়ে সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছে। আসলে এটি (বিআরআই) একটি বড় প্রকল্প, যেখানে সব সহযোগীদেরই অংশগ্রহণ প্রয়োজন।”
বিআরআই প্রকল্প থেকে সবাই সুবিধা পাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা সবাই একসঙ্গে সেই প্রকল্প গড়ব; সেখানে কেবল চীনা অর্থই থাকবে না, বাংলাদেশের জনগণের অর্থও থাকবে। বিআরআই নিয়ে যাতে ভুল ব্যাখ্যা না দেওয়া হয়, আমি সেটাই আশা করি।”
পরিদর্শনকালে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন ও স্থানীয়দের কাছে প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে মনোভাব জানতে চান চীনা রাষ্ট্রদূত।
চীনা দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি জিইউ ঝিকিং, কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) ওয়াং ঝিহং, নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুল ইসলাম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ আমিরুল হক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার, নীলফামারী ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা প্রিন্স, পাউবো সৈয়দপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মেহেদী হাসান, পাউবো লালমনিরহাট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ও পাউবো রংপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব উপস্থিত ছিলেন এ সময়।