বেনাপোলে স্নাতকোত্তর দুই বন্ধুর তন্দুরি চায়ের স্টল

তন্দুরে রেখে উত্তপ্ত করা মাটির ভাড়ে অর্ধেক তৈরি হওয়া চা ঢালা হয়। সেই চায়ে ফুটন্ত বুদবুদ উঠার পরই তৈরি হয় তন্দুরি চা।

আসাদুজ্জামান আসাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 05:38 AM
Updated : 30 Nov 2022, 05:38 AM

বেনাপোলে ‘এমবিএ চা-ওয়ালা’ নামে চায়ের স্টল দিয়ে সাড়া ফেলেছেন স্নাতকোত্তর করা দুই বন্ধু। তাদের স্টলে বানানো ‘তন্দুরি চা’-ও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চা প্রেমীদের মাঝে।

যশোরের বেনাপোল বাজারের পুকুরপাড় জামে-মসজিদ সংলগ্ন তন্দুরি চায়ের স্টলের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারিগরদের একজন আশিকুজ্জামান এ্যানি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং অপরজন রাশেদুজ্জামান রয়েল সরকারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এমবিএ) অর্জন করেছেন। 

বিশেষ ধরনের এই চায়ের স্টলের পেছনেও রয়েছে রোমাঞ্চকর গল্প। ভ্রমণপিপাসু এই দুই তরুণ জানান, ইউটিউবে তন্দুরি চায়ের ভিডিও দেখে কেবল সেই চায়ের স্বাদ নিতে দুই বন্ধু ভারতে চলে যান। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানকালে বেশ কয়েকবার সেই চায়ের স্বাদ নেন। এরপরই দু'জনে তন্দুরি চায়ের স্টল করার পরিকল্পনা করেন।

আশিকুজ্জামান এ্যানি বলেন, দুই বন্ধুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছে পড়াশোনা শেষে নিজেরা কিছু করবেন। চাকরির বাজারে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার একদমই ইচ্ছে ছিল না। এমন চাওয়া থেকেই ছোট পরিসরে ‘এমবিএ চা-ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছেন।  

“নতুন হলেও বেচা-বিক্রি ভাল। বিকেল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তন্দুরি চা এর স্বাদ নিতে আসছেন। প্রতি ভাড়/মটকা (কাপ) চা বিক্রি করছি ৩০ টাকায়। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য দামটি কমানো যায় কিনা সেটা ভাবছি।”

তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”

স্টলে তন্দুরি চায়ের 'কারিগর' হিসেবে কাজ করছেন অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী রিয়াজ মাহমুদ। তিনি বলেন, “পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতাম। তরুণ উদ্যোক্তা অ্যানি ও রয়েল ভাই আমাকে তন্দুরি চা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।”

বিশেষ এই চা তৈরির প্রণালী সম্পর্কে তিনি বলেন, “আগে থেকে গরম হওয়া তন্দুরে মাটির ভাড়গুলো রাখা হয়। এরপর সেই জলন্ত ফাঁকা মাটির ভাড়ে (কাপ) অর্ধেক তৈরি হওয়া চা ঢালা হয়। ঢালার সময় ফুটন্ত বুদবুদ উঠলেই চা তৈরি হয়ে যায়।

“গরম ভাড়ের এ তন্দুরি চায়ে পাওয়া যাবে ধুম্র স্বাদ- যা আপনাকে বারবার নিয়ে আসবে আমাদের কাছে। ”

অপর উদ্যোক্তা রাশেদুজ্জামান রয়েল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সব সময় শিক্ষিত বেকারদের চাকরির পেছনে না ছুটে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। সে কথা মাথায় রেখেই বন্ধু এ্যানির পরামর্শে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠা তন্দুরি চায়ের এই আইডিয়াটা গ্রহণ করি।”

তন্দুরি চায়ের স্বাদ নিতে আসা বারোপোতার আব্দুল মোমিন বলেন, “এটি চায়ের উপকরণে তৈরি চা, তবে চায়ে একটা আলাদা পোড়া পোড়া ফ্লেভার আসে এবং পানে আলাদা একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়। ”

বেনাপোলের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মশিয়ার রহমান বলেন, “বিভিন্ন সময় কলকাতায় তন্দুরে পোড়ানো চা পান করেছি। এখানেও স্বাদ নিলাম। মোটামুটি ভালই হয়েছে। চায়ের সঙ্গে হালকা একটু ধোঁয়ার ঘ্রাণ, গ্রামে খড়ির চুলায় রান্না খাবারে যেমন একটা সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যায়, এই তন্দুরি চাও খেতে কিছুটা সেরকমই।”

প্রকৌশলী রাফসান জানি রাব্বি বলেন, চাকরির পেছনে ছুটে সময় নষ্ট না করে এই দুই যুবক ছোট পরিসরে হলেও নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা খুবই ভালো লেগেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় তন্দুরি চায়ের এ আইডিয়া যাদের হাত ধরে এসেছে ভারতের পুনের সেই দুই চা ওয়ালা প্রমোদ বাংকার এবং অমোল রাজদেও। তাদের ঠাকুমা গ্রামের বাড়িতে কয়লার ওপর দুধ দিয়ে চা তৈরি করতেন। সেই একই পদ্ধতিতে চা তৈরি করছেন তারা। এরা নিজেদের ‘তন্দুরি চা’য়ের প্রথম কারিগর হিসেবে দাবি করেন।