“প্রধান আসামি ফজলে রাব্বিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করা হয়।”
Published : 17 Mar 2024, 05:46 PM
কুমিল্লায় লেগুনাস্ট্যান্ডের দখল ও আধিপত্য বিস্তারের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজছাত্র মো. জামিল হাসান অর্ণব নিহতের ঘটনায় এক ডজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শনিবার রাতভর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামিসহ সাতজনকে পুলিশ এবং আরও পাঁচজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন- প্রধান আসামি কুমিল্লা শহরতলীর (আদর্শ সদর উপজেলা) শাসনগাছা এলাকার ফজলে রাব্বি (৩০), তার বাবা খলিলুর রহমান (৬০), রফিকের ছেলে মো. সুমন (২৮), মনু মিয়ার ছেলে রাশেদ (৩৮), আনোয়ার মিয়ার ছেলে কাউছার (২০), হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু মিয়ার ছেলে রিয়াজ (২৬) ও আবদুর রশিদের ছেলে সোলেমান (৩৮)।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন- কুমিল্লা শহরতলীর (আদর্শ সদর উপজেলা) শাসনগাছা এলাকার মনু মিয়ার ছেলে মো. হালিম (৫৫), আবদুর রশিদের ছেলে মো. সজল (৩০), কালু মিয়ার ছেলে মো. ওমর ফারুক (২৪), রাজ্জাকের ছেলে মো. বাচ্চু মিয়া (৩৫) ও চান্দিনার বেলাশ্বর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. ইব্রাহীম (২৫)।
শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে কুমিল্লা শহরতলীর (আদর্শ সদর উপজেলা) শাসনগাছা লেগুনাস্ট্যান্ডে এ সংঘর্ষে প্রাণ হারান অর্ণব। এ ঘটনায় তার মা ঝর্ণা আক্তার বাদী হয়ে শনিবার রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ এবং পরিচয় অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ঘটনার পর সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে খলিলুর রহমানকে শাসনগাছা মোল্লা বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে গ্রেপ্তার করা হয় রিয়াজকে।
“তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রধান আসামি ফজলে রাব্বিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের বিষ্ণুপুরে সীমান্ত এলাকা থেকে শনিবার রাত ১টার দিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।”
পরে রাব্বির দেওয়া তথ্যে শাসনগাছা মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন খলিলুর রহমানের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের পূর্ব পাশের পরিত্যক্ত রান্না ঘরের সিলিংয়ের ওপর থেকে দুটি ম্যাগাজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল এবং ছয় রাউন্ড লোড করা গুলি উদ্ধার করা হয় বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
আব্দুল মান্নান বলেন, “আরেক আগ্নেয়াস্ত্রধারী মো. সুমনকে কুমিল্লা সদর উপজেলার উত্তর দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক নারী মেম্বার লিপির শাসনগাছার ভাড়া বাসা থেকে শনিবার রাত ৩টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে বিদেশি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া আসামি রাশেদকে বুড়িচংয়ের নিমসার, কায়সার এবং সোলেমানকে শাসনগাছা মোল্লা বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
মামলার বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংঘর্ষের ঘটনাটি দেখেছেন এমন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাসনগাছা লেগুনা ও সিএনজি অটোরিকশাস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে শাসনগাছা মধ্যমপাড়া দফাদার বাড়ি ও মোল্লা বাড়ির দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর মধ্যমপাড়ার আবুল কাশেমের দলের সঙ্গে মোল্লা বাড়ির রাব্বি ও আলাউদ্দিনের দলের সংঘর্ষ এবং গোলাগুলি হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তত চারজন। তাদের মধ্যে অর্ণবের বুকের বাম পাশে গুলি লাগে।
পরে গুলিবিদ্ধ চারজনসহ আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অর্ণবকে মৃত ঘোষণা করেন।
২৭ বছরের অর্ণব শাসনগাছা মধ্যপাড়া এলাকার আজহার উদ্দিনের ছেলে এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিএসএস (ডিগ্রি পাস) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন শিবলু জানিয়েছেন, অর্ণব ছাত্রদল করতেন এবং জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন।
এছাড়া অর্ণব শাসনগাছা বাস টার্মিনালের ‘সততা বাস সার্ভিসের’ ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করতেন বলে তার বাবা আজহার উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এদিকে বিকালে র্যাব-১১ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান অর্ণব হত্যায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান।
মাহমুদুল বলেন, শাসনগাছা লেগুনা ও সিএনজি অটোরিকশাস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে শাসনগাছা মধ্যপাড়া দফাদার বাড়ি ও মোল্লা বাড়ির দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার দুপুরে মধ্যপাড়ার আবুল কাশেমের দলের সঙ্গে মোল্লা বাড়ির ফজলে রাব্বি ও আলাউদ্দিনের দলের সংঘর্ষ এবং গোলাগুলি হয়।
ঘটনাস্থলে এক নম্বর আসামি ফজলে রাব্বি এবং দু্ই নম্বর আসামি খলিলুর রহমানের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তল দ্বারা গুলি বর্ষণ করে এবং অন্য সহযোগীরা ইট-পাটকেল দিয়ে আক্রমণ করে। এ ঘটনায় নিহতের মা কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, “কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।”