নেছাভান বিবির সরকারি ঘর কবে হবে?

বসবাসের অনুপোযোগী কুঁড়েঘরে সীমাহীন কষ্টে বসবাস করেন, আর ভিক্ষা করে জীবন চালান বিধবা নেছাভান বিবি।

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 03:33 AM
Updated : 27 Feb 2023, 03:33 AM

রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বছরের পর বছর পার করলেও কুড়িগ্রামের ভূমিহীন বিধবা নেছাভান বিবির ভাগ্যে সরকারের ঘর জোটেনি।

তার কুঁড়েঘরে বৃষ্টিতে পানি পড়ে; রোদের তেজ আর শীতের হাওয়া দুটোই ঢোকে বিনা বাধায়।

নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নগরপাড়া গ্রামের এই হতদরিদ্র নারী অন্যের জমিতে তোলা এই কুঁড়েঘরে থাকেন দীর্ঘদিন থেকে। বসবাসের অনুপোযোগী হলেও চরম কষ্ট সহ্য করে সেখানে থাকেন, আর ভিক্ষা করে জীবন চালান।

ভিতরবন্দ ইউনিয়নের অনেকেই সরকারের দেওয়া ঘর পেলেও এই বিধবার কপালে তা জোটেনি। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে তার জন্য ঘরের কথা বলা হলেও কী কারণে পাননি তা স্থানীয় জনপ্রতনিধিরা বুঝতে পারছেন না। তিনি ঘর পাবেন কিনা তা কেউ জানেন না।

সম্প্রতি কয়েকজন সেচ্ছাসেবী জীর্ণশীর্ণ ঘরটি মেরামত করতে গেলে জমির মালিকের বাধায় তা ভেস্তে যায়।

এলাকাবাসী জানান, দশ বছর আগে ভিতরবন্দ বাজারের পাশের গ্রাম নগরপাড়ার সাইফুল ইসলাম নামে বিজিবির সাবেক সদস্যের বাড়ির পিছনে পরিত্যক্ত জায়গায় ১২ হাত লম্বা এবং ৮ হাত প্রস্থের কুঁড়েঘরটি নির্মাণ করেন নেছাভানের প্রয়াত স্বামী জোনাই ফকির। সেখানে এক ছেলেসহ বসবাস করতেন তারা। কয়েক বছর আগে জোনাই ফকির মারা গেলে পেট চালাতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয় নেছাভানকে।

এরই মধ্যে থাকার ঘরটি বয়সের ভারে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় ঘরের বাঁশের খুঁটি, বেড়া এবং চালের টিন। এক বছর আগে ঘরটি একদিকে হেলে পড়ে। পাশের কলাগাছের সঙ্গে কোনোমতে ঠেস লেগে আটকে আছে। চালের ফুটো দিয়ে রাতের চাঁদ তারা সবকিছুই গোনা যায়। ঘরটির জীর্ণ বেড়া ছেঁড়া কাপড় আর চট দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া। ঘরে ঘুমানোর চৌকি কিংবা অন্য কোনো আসবাবপত্র নেই। শীতে তীব্র ঠান্ডা আর বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে এই ঘরের মাটিতেই শয়ন আর এক কোণে চলে রান্নার কাজ।

নেছাভান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনেক কষ্টে এই ঘরে বাস করেন তিনি। কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। বৃষ্টি হলে ঘরের কাঁথা-বালিশসহ সবকিছু ভিজে যায়। রাতে বৃষ্টি হলে তাকে ভিজতে হয়। ভারি বৃষ্টিপাত হলে সবকিছু রেখে বাজারের দোকানের বারান্দায় রাত পার করতে হয়।

সরকারি ঘরের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি বলে আক্ষেপ তার।

ঘরটির দুরবস্থা দেখে সম্প্রতি স্থানীয় কয়েকজন সেচ্ছাসেবী তা মেরামতের উদ্যোগ নেন। এ জন্য তারা অর্থ যোগাড় করেন। কিন্তু ঘর মেরামত করতে গেলে জমির মালিকের বাধায তা সম্ভব হয়নি।

অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য রফিকুলের জায়গার উপর নেছাভানের এই জরাজীর্ণ ঘর।

স্থানীয় সেচ্ছাসেবী আশরাফুল আলম বলেন, “ঘরটি মেরামতের জন্য আমরা ৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঘরটি মেরামতের জন্য গেলে জমির মালিক বিজিবি সদস্য সাইফুল ইসলাম নিষেধ করেন। পরে ঘরটি আর ঠিক করা হয়নি।”

তিনি আরও জানান, ঘরটি যে পরিস্থিতিতে আছে তাতে সামান্য ঝড়েই পড়ে যাবে। তখন নেছাভান বিবির থাকার কোনো জায়গা থাকবে না। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের তালিকাতেও তার নাম নেই।

ভিতরবন্দ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল হক খন্দকার বাচ্চু বলেন, নেছাভান বিবি হতদরিদ্র অসহায়। ভিক্ষা করে জীবনযাপন করেন। এর আগেও (২ বছর আগে তিনি যখন চেয়ারম্যান ছিলেন) তার নামের তালিকা ইউএনও অফিসে দেওয়া হয়েছিল আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের জন্য; কিন্তু ‘রহস্যজনক’ কারণে বারবার তার নামটি বাদ পড়ে যায়।

ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি বলেন, “নেছাভানের মতো দরিদ্র আমার ইউনিয়নে আর কেউ নেই। তারপরও কী কারণে আশ্রয়ন প্রকল্পের তালিকা থেকে নামটি বাদ যাচ্ছে আমার বোধগম্য নয়।”

এবার ভিতরবন্দ ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে উপজেলা প্রশাসন তিন জনের ঘর প্রাপ্তি চূড়ান্ত করেছে; কিন্তু এর মাঝে নেছাভানের নাম নেই বলে জানান চেয়ারম্যান শফি।

নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলায় মোট ১১৮ জন সুবিধাভোগী এবার ঘর পাবেন। তার মধ্যে ভিতরবন্দ ইউনিয়নে রয়েছে দুইজন। এদের মাছে নেছাভান বিবির নাম নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান বলেন, নেছাভান বিবির বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি প্রকৃত ভূমিহীন হলে আগামীতে তাকে জমি ও ঘর দেওয়া হবে।