আমি আর মা ‘জন্মগত আওয়ামী লীগ’: জাহাঙ্গীর

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি আমার বিষয় না, দলের বিষয়। দল যা ভালো বুঝবে সেটাই করবে।”

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2023, 09:14 AM
Updated : 28 May 2023, 09:14 AM

আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা ‘ডুবিয়ে’ মা জায়েদা খাতুনকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতিয়ে আনা জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, তারা মা-ছেলে ‘জন্মগতভাবে’ আওয়ামী লীগার। 

ভোটে জয়ের তিন দিনের মাথায় রোববার সকালে গাজীপুর থেকে বিরাট একটি গাড়িবহর নিয়ে জায়েদা ও জাহাঙ্গীর যান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে গাজীপুরের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন চান তারা। 

ঢাকার লাগোয়া গাজীপুর মহানগরের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন বলেন, “গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে আমি সকলের সহযোগিতা নেব। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে, সহযোগিতা নিয়ে উন্নয়নের কাজ করব। উন্নয়নের কাজে আমার ছেলে জাহাঙ্গীরও সঙ্গে থাকবে।” 

জাহাঙ্গীর বলেন, “আমি জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ। এটা কেউ মানুক আর না মানুক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমার মাও জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ। আমরা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে এসেছি, নেত্রীর বাড়িতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা সহযোগিতা চাই।” 

গত ২৫ মের ভোটে জায়েদা অংশ নেবেন, সেটি এক মাস আগে কল্পনাতেও ছিল না। তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম আগের নির্বাচনে নৌকা নিয়ে জিতেছিলেন গাজীপুরে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই ছিলেন পিছিয়ে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঘরোয়া এক আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও একাত্তরে শহীদদের নিয়ে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন জাহাঙ্গীর। তিনি বঙ্গবন্ধুর অবমাননা করেছেন– এমন অভিযোগ এনে বিক্ষোভে নামে আওয়ামী লীগেরই একটি পক্ষ। 

এ নিয়ে গাজীপুরে নিয়মিত বিক্ষোভ ও পাল্টা কর্মসূচির মধ্যে নভেম্বরে জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে। 

তবে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম দিন জাহাঙ্গীর পান সুখবর। দলের শৃঙ্খলা মেনে চলার শর্তে তাকে ক্ষমা করে ক্ষমতাসীন দল। 

তবে চার মাস না যেতেই নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিদ্রোহ করেন জাহাঙ্গীর। নিজের পাশাপাশি মায়ের নামেও মনোনয়নপত্র কিনে তৈরি করেন চমক। 

কেন জাহাঙ্গীর এই কাজ করতে গেলেন, সে নিয়ে আলোচনার মধ্যে যাচাই বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাদ হয়ে যায়। পরে জানা যায়, তিনি একটি পোশাক কারখানার শত কোটি টাকা খেলাপি ঋণের জামিনদার। ফলে তিনি ভোটে অযোগ্য।

আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে না পেয়ে জাহাঙ্গীর তার মাকে নিয়ে এগিয়ে যান। গাজীপুরে তার যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে, তা এর আগেও বোঝা গিয়েছিল। এবার রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ মাকে জিতিয়ে তিনি তার অবস্থান আরও পোক্ত করলেন। 

ভোটের প্রচারের সময়ই জায়েদা বলেছেন, তিনি জিতলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার ছেলের নামে ক্ষমা চাইবেন। আওয়ামী লীগ প্রধানের সাক্ষাৎ চেয়ে তিনি আবেদন করেছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তবে শেখ হাসিনা সময় দিয়েছেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। 

জাহাঙ্গীর বলেন, “আমরা জন্মগত আওয়ামী লীগ করেছি, আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবেই আছি। অন্যরা কী বলল তাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না।” 

বহিষ্কারের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি আমার বিষয় না, দলের বিষয়। দল যা ভালো বুঝবে সেটাই করবে।” 

এর আগে জাহাঙ্গীর ও তার মা বঙ্গবন্ধুর সমাধি বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতও করেন।