নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপি নেতা মসিউর

স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে থাকলেও ঝিনাইদহের বাড়িতে মসিউরের মৃত্যুর সময় তারা সবাই ঢাকায় ছিলেন।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2022, 03:16 PM
Updated : 1 Nov 2022, 03:16 PM

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান তার ঝিনাইদহের বাড়িতে মারা গেছেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়।

ওই সময় তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা ছিলেন ঢাকায়। অসুস্থ বোধ করায় মসিউর রহমান ড্রাইভারকে খবর দিলেও তার পৌঁছানোর আগেই সব শেষ হয়ে যায়।

ঝিনাইদহ শহরের স্বর্ণকার পট্টির বাড়িতে মঙ্গলবার সকালে ৭৩ বছর বয়সে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যান বলে স্বজনরা জানান।

মসিউর রহমানের প্রতিবেশী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান শেখর জানান, সকালে তার গাড়ির ড্রাইভারকে ফোন করে বাড়ি আসতে বলেন। ব্লাড প্রেশার মাপার জন্য পাশের পল্লি চিকিৎসককে আসতে বলেন। তারা এসে দেখেন গেটে তালা মারা। ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে মই এনে দোতলায় উঠে ভিতর থেকে রুম বন্ধ পান। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি।

“জানালা দিয়ে দেখেন সোফার উপর পড়ে আছেন। তখন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গায়ে হাত দিয়ে দেখেন হাত-পা ঠাণ্ডা। পরে ইজিবাইক ডেকে সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”

স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, ওই সময় তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে ঢাকায় ছিলেন।

গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর থেকে তিনি বাড়িতে একা ছিলেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার সকাল ১১টায় সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা হবে। এরপর সেখানে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। পরে তার নিজ গ্রাম হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কন্যাদহে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।

স্কুল জীবনেই মসিউর ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধ শুরু করেন। ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা, কুষ্টিয়া ও আলমডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।

সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল গঠনের সময় সঙ্গে ছিলেন মসিউর রহমান।

১৯৭৭ সালে তিনি হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে হেরে যান।

১৯৯১ সালে বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দুইবার অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। ২০০১ সালে জয় পান চতুর্থবারের মতো। ২০০৮ সালে নির্বাচন করলেও হেরে যান।

মসিউর জাতীয় সংসদের হুইপ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে। ২০১৭ সালে যশোরের একটি আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয়। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

আরও পড়ুন

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমানের মৃত্যু