“প্রশাসনও সরকারের আজ্ঞাবহ থাকে, কারণ সংবিধানের ৪৮ এর ‘গ’ ধারা অনুযায়ী এই দেশের একমাত্র ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী।”
Published : 10 Jan 2024, 06:58 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘সাজানো’ বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত সোনালী আঁশ প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, “এটি সরকার বনাম সরকার নির্বাচন। নৌকা এবং স্বতন্ত্র দুটোই সরকারের। এই রকম সাজানো নির্বাচনে আর যাব না।”
বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তৃণমূল বিএনপির এক নারী কর্মীর বাড়িতে হামলার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এসপি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তৈমুর।
তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে দেশটা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলছে।”
তৃণমূল বিএনপির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা রাজপথে থাকব। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা যিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, তৃণমূল বিএনপিরও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাটা জনগণের কাছে শোনাই ছিলেন।
“আমরা সব ক্যান্ডিডেটকে ঢাকায় ডাকব, তাদের নিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে বসব। তারপর রিপোর্ট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করব।”
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নেই বলে মন্তব্য করে তৈমুর বলেন, “নির্বাচনটাকে যেভাবে কুক্ষিগত করা হয়েছে তাতে মূলত নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের কোনো জনবল নেই, তারা প্রশাসনের উপর নির্ভর করে।
“প্রশাসনও সরকারের আজ্ঞাবহ থাকে, কারণ সংবিধানের ৪৮ এর ‘গ’ ধারা অনুযায়ী এই দেশের একমাত্র ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী।”
বিএনপির এই সাবেক নেতা বলেন, “ইসি সচিবের বক্তব্য আপনারা শুনেছেন, তার বক্তব্যে কী মনে হয় দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হইছে? তিনি তো বলছেন, ডিসিদের কাছে তো ম্যাসেজ চলে গেছে। সিইসি থেকেই সব প্রকাশ পেয়ে গেছে।”
দেশে বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় রাজপথে না থাকলে টিকে থাকতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “তৃণমূল বিএনপি রাজপথে সক্রিয় থাকবে। আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম কারণ, একটা কিছু না ঘটলে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া তো কথা বলা যায় না।
“যখন চোখের সামনে দেখলাম সবকিছু... সায়েদুল হক সুমন তার বক্তব্যে বলছে, সরকার বনাম সরকার নির্বাচন হয়েছে, আমরাই নৌকা, আমরাই স্বতন্ত্র। তারাই তো বলতেছে। আমাদের তো বলা লাগবে না।”
নির্বাচনকালীন নেতা-কর্মীর ওপরে হামলা ও হুমকি-ধমকির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কার্যকর সমাধান পাননি বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, “রূপগঞ্জের চনপাড়া মাদকের আখড়া। এখানে দুই শতাধিক স্পটে মাদক বিক্রি হয়, সেখানে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী বেড়ে উঠেছে। মাদক ও সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছে সমসের আলী (ইউপি সদস্য)।
“আরেকজন মহিলা আছেন যার নাম রিতা মেম্বার। এই বিষয়ে প্রশাসন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বারবার বলার পরেও কোনো কাজ হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “চনপাড়াতে ফলাফল ঘোষণার পর আমার নারী কর্মীর বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়েছে। আমি এসপি সাহেবের কাছে এই পরিবারটিকে নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি।”
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন তৈমুর আলম। এই আসনে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী। আসনটিতে তৃতীয় হয়েছেন তৈমুর, হারিয়েছেন জামানতও।
তৈমুর আলম বলেন, “রূপগঞ্জে সব ভূমিদস্যুরা আমার বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। তারা মনে করছে, তৈমুর আলম খন্দকার আসলে তাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। কারণ শুরু থেকেই আমি ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অবস্থানে ছিলাম।
“দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যাদের জমিজমা নিয়ে গেল তারাও তো ভয়ে-আতঙ্কে আর আগাইয়া আসলো না। আমি যখন গণসংযোগে গিয়েছিলাম, তখন মহিলারা বলছে, টাকা দিলে ভোট দেব। আমি বলছি, আপনাদের জমিজমা রক্ষা করতে গিয়েই তো আমার বিপদ হইছে।”
তৃণমূল বিএনপির এই নেতা বরেন, “দেশে আমাদের প্রজন্মের পক্ষে সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব না। আগামী প্রজন্মও পারবে না। যদি সম্ভব হয় তৃতীয় প্রজন্ম আইসা দেশটাকে ঠিক করতে পারে।
“কারণ যারা সরকারে আছে তারা মনে করে, নির্বাচনে হেরে গেলেই তাদের জেলে যেতে হবে। বাংলাদেশে সিস্টেমই এইটা। যে ক্ষমতায় যায় তার প্রতিপক্ষকে জেলে দিয়ে দেয়।”