ভবদহ আন্দোলনের সংগঠক রণজিৎ বাওয়ালীকে সম্মাননা
Published : 24 Feb 2023, 09:00 PM
দেশে এখন ‘দুঃশাসন’ চলছে বলে অভিযোগ করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা রফিউর রাব্বি বলেছেন, তাদের আয়োজনের ব্যানারে লেখা ‘দুঃশাসন’ ঢাকতে গিয়ে তা আরও ‘প্রকটভাবে প্রকাশ করেছে পুলিশ।’
২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে খুনের শিকার কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা বলেন, “দুঃশাসনে তাদের লজ্জা নাই। কিন্তু তাদের দুঃশাসক বললে তাদের লজ্জা হয়।
“চোরকে চোর, ডাকাতকে ডাকাত, ধর্ষককে ধর্ষক বললে যেমন লজ্জা হয় তেমনি দুঃশাসককে দুঃশাসক বলাতে তাদের লজ্জা হয়েছে। তাদের লজ্জা যে হয় এই ব্যাপারটা একদিক থেকে ভালো।’
শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে একুশের অনুষ্ঠানে ‘পুলিশি বাধার’ অভিযোগে এক আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন।
মহান ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এই শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তার ব্যানারে লেখা ছিল ‘একুশের উচ্চারণ দূর হ দুঃশাসন’।
সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীদের অভিযোগ, ব্যানারের এই লেখা দেখে সেটি খুলে ফেলতে চাপ দেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান। এরপর লেখাটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান করেন তারা।
রফিউর রাব্বি বলেন, “শাসকগোষ্ঠী কালো কাপড় দিয়ে তাদের দুঃশাসন ঢাকতে চায়। এইটা হয় না। …সাংস্কৃতিক জোটের একুশের অনুষ্ঠানের ব্যানার কালো কাপড় দিয়ে ঢাকতে গিয়ে দুঃশাসন আরও তীব্রভাবে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’
‘সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়। এতে যশোরের ‘ভবদহ আন্দোলন’ এর সংগ্রামী সংগঠক রণজিৎ বাওয়ালীকে সম্মাননা প্রদান ও ‘তারুণ্য তাড়নার গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন রফিউর।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর সকল দেশে সংস্কৃতি ও রাজনীতি হাত ধরাধরি করেই অগ্রসর হয়েছে। পথ হারিয়ে ফেলা রাজনীতিকে পথ দেখিয়েছে রাজনীতি। আমাদের দেশেও তাই হয়েছে। সেই কারণে সংস্কৃতির প্রতি শাসকগোষ্ঠীর প্রচণ্ড ভয় রয়েছে।”
পাকিস্তান শাসনামলে ষাটের দশকের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই সময়ের রাজনীতিই ছিল সংস্কৃতির রাজনীতি। সংস্কৃতির দায় হচ্ছে দুঃশাসকের নৃশংসতা প্রকাশ করা, তাদের জঘন্য, বর্বর চেহারা তুলে ধরা।
“চোর, ডাকাত, দুঃশাসককে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই। এই দেশটি তাদের লুণ্ঠনের একটি জায়গা। লুণ্ঠন, লুটপাট তাদের চরিত্র।”
স্বাধীনতাপূর্বের ‘স্বৈরশাসকদের’ সঙ্গে ‘আজকের স্বৈরশাসকদের’ চরিত্রের কোনো পার্থক্য দেখতে না পারার কথাও বলেন রাফিউর। তিনি বলেন, “উন্নয়নের ঢোল যেমন আইয়ূব খানও পিটিয়েছে, তেমনি এই সরকারও পেটাচ্ছে।
“এই চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য পাল্টাতে হবে। রাজনীতি কখনও একভাবে চলে না। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাস্তবায়ন আমরা ঘটাবই।”
‘নদী শাসনের নামে দেশটাকে ধ্বংস করা হচ্ছে’
যাকে ঘিরে এই আয়োজন, সেই রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, “এই দেশ নদীর দেশ, সাগরের দেশ। নদী শাসনের নামে দেশটাকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
“যেই জায়গায় জাহাজে, নৌকায় যেতে হত, সেইখানে হেঁটে যাওয়া যায়। পদ্মা কানতেছে। অচিরেই পদ্মা ব্রিজের নিচে গরু ঘাস খাবে।”
নদী বাঁচানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “নদীকে বাঁচাতে হবে। নদী না বাঁচলে মানুষ বাঁচবে না, এই দেশ থাকবে না। নদীকে শাসন করা যায় না। নদী বাঁচলেই আমরা বাঁচব।”
যশোরের ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার নিরসনের দাবিতে যুগ যুগ ধরে যে আন্দোলন হয়ে আসছে, তার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন এই রনজিৎ কুমার বাওয়ালী।
৮৩ বছর বয়সী রনজিৎ একজন কৃষক। পাকিস্তান আমলে তিনি ‘পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি’র আহ্বায়ক।
কৃষক, শ্রমিকদের আন্দোলনের নামার পর এক পর্যায়ে তিনি স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করতে গণসংগীত রচনা করা শুরু করেন। নিজেও হয়ে উঠেন শিল্পী। তার তিন শটি গান নিয়ে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে।
রনজিৎকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন লেখক লিটু মণ্ডলও, এর নাম ‘কৃষির ভূমিপুত্র।’
‘সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ’র কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান দীনা তাজরিনের সঞ্চালনায় এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর আসরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রথীন চক্রবর্তী ও শিল্পী অমল আকাশ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপ্রধান আলী আশরাফ।
আলোচনা পর্ব শেষে ‘তারুণ্য তাড়নার গান’ শিরোনামে গান পরিবেশন করে কণ্ঠশিল্পী সায়ান, গানের দল লীলা, সর্বনাম, নিষিদ্ধ, গঙ্গাফড়িং ও সমগীত।