টেকনাফে আরও আটজনকে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি

শতাধিক ব্যক্তিকে গত এক বছরে অপহরণের তথ্য মিলেছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2024, 03:51 PM
Updated : 27 March 2024, 03:51 PM

কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়ানো ও চাষের কাজ করতে যাওয়া তিন কিশোরসহ আট জনকে অপহরণ করে জিম্মি করার তথ্য মিলেছে। 

আগের দিন অপহরণের শিকার হওয়া দুইজন ফিরে না আসার মধ্যে বুধবার দুপুর ২টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাংয়ে ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাহাড়ি এলাকা থেকে ছয় জনকে এবং পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে ২ জনকে অপহরণ করা হয়। 

হোয়াইক্যং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজালাল জানিয়েছেন, তার এলাকা থেকে অপহৃত একজনের বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণও চাওয়া হয়েছে।

অপহৃতরা হলেন- হোয়াইক্যং এর করাচি পাড়া এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪) ও শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২)। 

পুটিবুনিয়ায় অপহৃত দুইজন হলেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল (৩৩) এবং রইক্ষ্যং দক্ষিণ পাড়ার কালা মিয়া ওরফে লম্বা কালুর ছেলে ফজল কাদের (৪৭)।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, “সকালে গরু চড়াতে গিয়ে তার ইউনিয়নের আরও দুই বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছে। বুধবার রাত ৯ টার পরও তারা বাড়ি ফেরেনি।” 

হোয়াইক্যং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজালাল বলেন, পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়ানো ও চাষের কাজ করতে গিয়ে ছয়জন নিখোঁজ হয়। পরে শাকিল মিয়ার বাবা লেদু মিয়ার মোবাইল নম্বরে কল করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। 

ফোন কলের সময় অপহৃতদের মারধর করে চিৎকার শোনানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। পুলিশকে জানালে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। 

লেদু মিয়া বলেন, তিনি আতঙ্কে আছেন। 

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানান, ঘটনাস্থল ও স্বজনদের পরিবারে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। 

এর আগে মঙ্গলবারও টেকনাফের হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু আনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন দুইজন। 

এরা হলেন রোজার ঘোনা এলাকার অলি আহমদ ও কম্বনিয়া এলাকার নুর মোহাম্মদ। 

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হাসান বলেন, “পাহাড়ি এলাকা থেকে দুজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।” 

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, ২ জনের পরিবারের কাছেই বুধবার সকালে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে।

টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনি বলেন, “অপহরণের বিষয়টি শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরা কোনো তথ্য দিচ্ছে না। একাধিকবার চেষ্টার পরও লিখিত অভিযোগও দিচ্ছে না।” 

এর আগে ২১ মার্চ ভোররাতে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী পাহাড়ি এলাকা থেকে পাঁচ কৃষককে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। পরে ২৪ ও ২৫ মার্চ মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আসেন তারা। 

গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক মানুষকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা। 

ভুক্তভোগীদের পরিবারের তথ্য বলছে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে। 

গত ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ ফেরেননি ১৯ দিনেও। 

পুলিশ এই ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্যসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে। তারা সবাই রোহিঙ্গা।

আরও পড়ুন: 

Also Read: টেকনাফে অপহৃত ৫ কৃষকের মধ্যে মুক্তি মিলেছে চারজনের

Also Read: টেকনাফে ৫ কৃষক ‘অপহরণ’, ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি