হবিগঞ্জে গ্রাম্য শালিসে গৃহবধূকে বেত্রাঘাত: গ্রেপ্তার ৪

অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে শালিসে ৮২টি বেত্রাঘাত করা হয় গৃহবধূকে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2023, 08:50 AM
Updated : 8 April 2023, 08:50 AM

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এক গৃহবধূকে বেত্রাঘাত করে নির্যাতনের জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চুনারুঘাট থানার ওসি মো. রাশেদুল হক জানান, সোমবার নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর শুক্রবার সকালে নির্যাতনের শিকার ওই নারী স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন।

পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, হাফেজ নুরুল ইসলাম (৩০), বায়েজিদ হোসেন (৭০), আকবর আলী (৬৯) ও আতিক উল্লাহ (৫০)। ভুক্তভোগী নারী ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা।

ওসি জানান, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ওমান প্রবাসী। এক অটোরিকশা চালকের  অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে সোমবার গ্রাম্য শলিসের মাধ্যমে ৮২টি বেত্রাঘাত করা হয়।

বেত্রাঘাতের পর শালিস থেকে ওই নারীকে এক মাস ঘর থেকে বের হতেও নিষেধ করা হয় এবং বলা হয়, ঘর থেকে বের হলে শাস্তি আরও ভয়াবহ হবে। ভুক্তভোগী নারী ভয়ে ঘরে আবদ্ধ থেকে চিকিৎসা নেন।

এ দিকে স্ত্রীর নির্যাতনের খবর পেয়ে ওমান প্রবাসী স্বামী বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসেন। নির্যাতনের বিষয়ে বিচারের জন্য তিনি আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে গ্রামবাসী ওই প্রবাসীকেও বাধা দেন।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, “অপরাধ যদি হয়, নারী-পুরুষ উভয়ই করেছেন। গ্রামবাসী শুধু নারীর বিচার করেছেন। অথচ যিনি ভিডিও ছড়িয়ে আমার স্ত্রীকে হেয় করেছেন, তার বিচার কে করবে?”

নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, “পূর্বপরিচিত হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন সময় তাঁদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন ওই অটোরিকশা চালক। তিনি বিভিন্ন সময় তাকে (ভুক্তভোগী) প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন।

“গোপনে কোনো এক সময় ওই ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত মুহূর্তের কয়েকটি ভিডিও করেন। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে প্রচার করেছেন, তার সঙ্গে ওই ব্যক্তির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার কারণেই তিনি সমাজে অভিযুক্ত হয়েছেন।

তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে লজ্জায় তিনি ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। খবর পেয়ে তার স্বামী দ্রুত বাড়িতে আসেন। কিন্তু গ্রামবাসী তাকেও ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

এ দিকে ঘটনার পর থেকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া ওই অটোরিকশাচালক এলাকা থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।

ওসি মো. রাশেদুল হক জানান বলেন, “ওই নারীর শরীরে বেত্রাঘাত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে কি না এবং কয়টি বেত্রাঘাত করা হয় তা জানা যায়নি।”

গ্রেপ্তার চারজনকে শুক্রবার সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে বলে জানান ওসি।