দুর্গম পাহাড়ে জ্বর-রক্তবমিতে ৫ মৃত্যু: কাজ শুরু করেছে চিকিৎসক দল

“যারা মারা গিয়েছেন তাদের লক্ষণ ও উপসর্গ শুনে বুঝতে পারছি ঘনঘন বমি হওয়ার কারণে তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করায় মৃত্যুবরণ করেছে।”

রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 12:59 PM
Updated : 21 March 2024, 12:59 PM

রাঙামাটির দুর্গম বরকল উপজেলায় তীব্র জ্বর, রক্তবমি ও পেট ব্যাথায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদল। 

রাঙামাটির সিভিল সার্জন নিহার রঞ্জন নন্দী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের চান্দবী ঘাট গ্রামে সাত সদস্যের মেডিকেল দল পৌঁছায়। 

এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চের ১৭ তারিখ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি জানার পর বুধবার স্বাস্থ্য বিভাগ দুর্গম ওই গ্রামে চিকিৎসকদল পাঠায়। 

সিভিল সার্জন বলেন, “বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মং ক্যছিং সাগরের নেতৃত্বে এই দলের সাত সদস্য তিন ভাগে হয়ে জ্বর, রক্তবমি ও পেটে ব্যাথায় আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা সেবা শুরু করেছেন। 

“মেডিকেল টিমের সদস্যরা রোগের উপসর্গ ও লক্ষণ বুঝে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে উপসর্গ ও লক্ষণ শুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তারা পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে। যেহেতু বমি হচ্ছে, তাই বলা যাচ্ছে এটি খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়ে থাকতে পারে। 

“যারা মারা গিয়েছেন তাদের লক্ষণ ও উপসর্গ শুনে বুঝতে পারছি ঘনঘন বমি হওয়ার কারণে তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করায় মৃত্যুবরণ করেছে।” যোগ করেন তিনি।   

বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মং ক্যছিং সাগর জানান, জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। এদের মধ্যে প্রথম মৃত্যু হয় জানুয়ারির ১০ তারিখে। চান্দিনাঘাট গ্রামের লবিন্দর চাকমা এবং স্নেহবালা চাকমার ছেলে পত্তরঞ্জন চাকমা (২৫) মারা যান। 

এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি বিমলেশ্বর চাকমা (৫৫), ২৬ ফেব্রুয়ারি ডালিম কুমার চাকমা (৩৫), ১৫ মার্চ চিত্তি মোহন চাকমা (৬০) এবং সবশেষ চলতি মাসের ১৭ তারিখ সোনি চাকমা নামের ৮ বছর বয়সী এক শিশু মারা যায়। 

এলাকাটি অতিদুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সেখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই এবং আশপাশে কোনো চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র নেই। স্থানীয় কবিরাজির মাধ্যমে

আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মং। 

সিভিল সার্জন বলেন বলছেন, “স্থানীয় বৈদ্য কিংবা কবিরাজের ওপর নির্ভর না করে যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করতো, তাহলে কারও মৃত্যু হতো না। মেডিকেল টিমকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যারা গুরুতর অসুস্থ তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য। আমরা চাই না, আর কারও প্রাণহানি ঘটুক।” 

ভুষণছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রীতিশংকর দেওয়ান ও গ্রাম প্রধান (কার্বারি) শিব রতন চাকমা বলেন, চান্দবী ঘাট গ্রামে ৮৬ টি পরিবার রয়েছে। তাদের অনেকেই জ্বর, রক্তবমি, পেটব্যাথায় আক্রান্ত হয়েছেন। গ্রামের আশপাশে কোনো ক্লিনিক কিংবা চিকিৎসা সেবার কেন্দ্র নেই। তাই গ্রামবাসীর মনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরকান অনুপম এলাহী বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও ওই এলাকাটি সীমান্তবর্তী হওয়াতে বিজিবি’র সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

Also Read: দুর্গম পাহাড়ে জ্বর-রক্তবমিতে ৫ মৃত্যু, যাচ্ছে চিকিৎসাদল