সম্পত্তি বেহাতের অভিযোগ নোয়াখালীর নিহত আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2024, 01:44 PM
Updated : 14 March 2024, 01:44 PM

নোয়াখালীতে ১০ বছর আগে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত এক আওয়ামী লীগ নেতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার বুঝে পাওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পরিবার।

বুধবার জেলা শহর মাইজদীর একটি রেস্তোরাঁয় এ সংবাদ সম্মেলন করেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ইউসুফ আলী সেলিম ওরফে নিশাত সেলিমের স্ত্রী ও পাঁচ মেয়ে।

মৃত্যুর ১০ বছর পরও তার মেয়েরা ন্যায্য পাওনা বুঝে পায়নি দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিশাত সেলিমের তৃতীয় মেয়ে নাহিদ সাহেলা আলী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন তার বাবা নিশাত সেলিম। এরপর বিভিন্ন স্থানে বাবার রেখে যাওয়া একক এবং যৌথ মালিকানার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন চাচা ইউনুস আলী মিলন, ইয়াকুব আলী লিটন, ইকবাল হোসেন স্বপন ও ফুফু হাসিনা আক্তার সুমি।

“ঢাকার হাজারীবাগে কে টি লেদার ও নিশাত ট্যানারি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বায়না করে পরবর্তীতে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রি ছাড়াই দখল হস্তান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন অভিযুক্তরা।”

সাহেলা আরও বলেন, “ঢাকার হেমায়েতপুরে আমার বাবার একটি ট্যানারি আছে, যা আমার ছোট চাচা ইকবাল হোসেন স্বপন ও তার শ্যালক টিটুসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যবসা ও ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।”

অভিযোগে বলা হয়েছে, “বাবার মৃত্যুর পর চাচা ইউনুস আলী মিলন ও ইয়াকুব আলী লিটন মাইজদীর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের নিশাত প্লাজা মার্কেটের নিচতলা দখল করে রেখেছেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করে মার্কেটের ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করছেন।

“এর বাইরে লক্ষ্মীপুরের তিতিরকান্দি, ফাজিলপুর ও কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নিশাত সেলিমের সম্পত্তি গত ১০ বছর ধরে দখলে রেখেছেন অভিযুক্তরা।”

সাহেলা বলেন, বর্তমানে মা এবং তাদের পাঁচ বোনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নিশাত সেলিমের রেখে যাওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে গত ১০ বছর ধরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত নিশাত সেলিমের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার, মেয়ে নাহিদ সালমা আলী, নাহিদ সায়মা আলী, নাহিদ সুমাইয়া আলী ও নাহিদ সাহেবা আলী।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

নিশাত সেলিমের স্ত্রী ও মেয়েদের এমন অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে ইউনুস আলী মিলন বলেন, “সংবাদ সম্মেলনে আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। সেলিম ভাইয়ের মেয়েরা তাদের পাওনা নিচ্ছে।

“যখন যেখানে জমি বিক্রি হচ্ছে তাদেরকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও তারা কেন এসব অভিযোগ তুলছে জানি না।”

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্লাহ খান সোহেল বলেন, “ইউসুফ আলী সেলিম সাহেবের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও কন্যারা তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাক আমরা এমনটাই কামনা করি।

“এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তা দুঃখজনক। তবে, বিষয়টি যেহেতু আইনি তাই কোনো অভিযোগ থাকলে তা আইনগতভাবে নিষ্পত্তি হবে।”

এদিকে, নিশাত সেলিম হত্যা মামলার বিষয়ে তার জামাতা জেলা জজ আদালতের এপিপি তারিকুল ইসলাম রিপন জানান, এ মামলার ৪৪ জন আসামির মধ্যে একজন কারাগারে, ১৭ জন পলাতক।

মামলার ৪২ আসামির বিচার হচ্ছে অতিরিক্ত জেলা জজ প্রথম আদালতে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই আসামির বিচার হচ্ছে শিশু আদালতে। দুই আদালতে মামলাটির এখন সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে একজন সাক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা জজ প্রথম আদালতের অতিরিক্ত পিপি দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, “এখন পর্যন্ত মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীর স্ত্রী কোহিনূর বেগম ও দুইজন আসামির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।”

বেশিরভাগ সাক্ষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন এবং অনেকে আসামি পক্ষের শিখিয়ে দেওয়া সাক্ষী দিতে চায় বিধায় মামলাটি পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান এই আইনজীবী।