পরিদর্শক বলেন, “তার তো আগে থেকেই কার্ডিয়াক সমস্যা ছিল, সেকারণে পুলিশ আসার খবর পেয়ে ঘরের মধ্যেই স্ট্রোক করে মারা গেছেন।”
Published : 26 Oct 2023, 11:32 PM
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গভীর রাতে পুলিশের উপস্থিতির কথা শুনে পালিয়ে পাশের বাড়িতে যাওয়া এক কৃষক দল নেতার মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার গভীর রাত ২টার দিকে উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে নিহতের পরিবার জানিয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তি ‘স্ট্রোক করে’ মারা গেছেন।
নিহত মেহেদি হাসান সাগর ওরফে সাকবর (৪৫) জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কুষ্টিয়া জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং ওই গ্রামের মৃত সিরাজ মিস্ত্রীর ছেলে। তিনি ঢাকাতে গার্মেন্ট ব্যবসা করতেন।
সাকবরের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কাজল (৩৫) অভিযোগ করে বলেন, বুধবার রাতে সাকবর নিজের ঘরেই ঘুমাচ্ছিলেন। রাত ২টার দিকে বাড়ির গেইটে কেউ জোরে জোরে ধাক্কা দেয়। তখন বেরিয়ে দেখেন পুলিশ বাড়ি ঘিরে রেখেছে। ঘরে এসে তিনি সেটি সাকবরকে বলেন।
“তখন সাকবর পেছনের দরজা দিয়ে পাশের বাড়ি চলে যান। বিষয়টি টের পেয়ে ওই বাড়ির লোকজন বিদ্যুতের বাতি বন্ধ করে দেন। পুলিশও তখন সেই বাড়িতে যায় এবং সাকবরকে ধরে ফেলে। বাড়ির গেইটেও ১৫-২০ জন পুলিশ ছিল।
কাজল অভিযোগ করে বলেন, “পাশের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাই, আমার স্বামী মাটিতে পড়ে আছেন। কয়েকজন পুলিশ তাকে ঘিরে রেখেছে। স্বামীর নিথর দেহের কাছে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর দৌলতপুর থানার এসআই মাসুম বিল্লাহ ও শামসুল আলম আমার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে সাকবরকে রেখেই চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, “রাত ৩টার দিকে পরিবারের সদস্যরা মিলে অটোরিকশায় প্রথমে সাকবরকে ডাঙ্গের বাজারে নিয়ে যাই। সেখান থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। তখন সেখানকার চিকিৎসক সাকবরকে মৃত ঘোষণা করেন।
“পরিবারের অভিভাবক ও স্বজনরা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি না করার কথা বলেন এবং তারপর আমরা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে আসি”, যোগ করেন কাজল।
সাকবরের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী অভিযোগ করে বলেন, “আমার আব্বু সুস্থ মানুষ, রাতে খেয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। পুলিশের ভয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ঘর থেকে বেড়িয়েছেন। হঠাৎ কী এমন ঘটনা ঘটল যে সেখানে তার মৃত্যু হল?
পুলিশের নির্যাতনে বাবার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি মেয়ের।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “রাত সোয়া ৩টার দিকে পরিবারের লোকজন মেহিদী হাসান সাগরকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর প্রায় সোয়া ঘণ্টা আগেই তার মৃত্যু হয়।”
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার বলেন, “সাকবর সুস্থ নাকি অসুস্থ এসব বলে পুলিশ এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। কোনো প্রকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ সাকবরের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
এ বিষয়ে ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত দৌলতপুর থানার এসআই মাসুম বিল্লাহর মোবাইলে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ হেফাজতে কেউ মারা যাননি। পুলিশ কি কাউকে ধরেছে? পরিবার বললে তো আর হল না? এলাকায় যান, এলাকায় গিয়ে খোঁজ-খবর নেন। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন, পুলিশ তারে ধরতেও যায়নি, ধরেওনি।
“ওই এলাকায় আমাদের কিছু ওয়ারেন্ট-টোয়ারেন্ট ছিল; তাদের খোঁজ-খবর বা ঠিকানা জানতে আশপাশের কিছু লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে না? এরকমই ঘটনা ছিল। তিনি (সাকবর) হয়ত মনে করেছেন, তাকে ধরতে গিয়েছে। কিন্তু তাকে তো আমরা ধরতে যাইনি।
“তার তো আগে থেকেই কার্ডিয়াক সমস্যা ছিল, সেকারণে পুলিশ আসার খবর পেয়ে ঘরের মধ্যেই স্ট্রোক করে মারা গেছেন”, যোগ করেন পরিদর্শক।
এ ব্যাপারে নিহতের পরিবার কোনো অভিযোগ দেয়নি বলে জানায় দৌলতপুর থানা পুলিশ।