রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “কোনোভাবেই কোনো প্রার্থী বা তার কোনো লোক প্রকাশ্যে বা গোপনে কাউকে টাকা দিতে পারেন না।”
Published : 28 Dec 2023, 09:06 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এক সভায় কর্মীদের খিচুড়ি খাওয়ার জন্য টাকা দিচ্ছেন–এমন একটি ভিডিও ছড়িয়েছে সোশাল মিডিয়ায়।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভাঙ্গা থানা সংলগ্ন এলাকায় টেম্পু স্ট্যান্ডের শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নিক্সন চৌধুরী। সেখানেই একজনের হাতে তাকে নগদ টাকা দিতে দেখা যায়।
ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিক্সন চৌধুরী দুইবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি তৃতীয়বারের মত নির্বাচন করছেন। এই আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ।
৪৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নিক্সন চৌধুরী একটি জায়গায় সাদা হ্যান্ডমাইক হাতে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তার মাথায় ফুলের পাপড়ি দেখা যাচ্ছে। তার ডান পাশে ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়াম্যান এবং তার প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী শাহাদাৎ হোসেন আর বাঁ পাশে রয়েছেন সোনাখোলা গ্রামের নজরুল শিকারী।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সংসদ সদস্য বলছেন, “আগামী শনিবার ভাঙ্গার আলগীতে আপনারা একটা বড় শোডাউন করবেন। আমাদের ডাক্তার ভাই এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলল। কিন্তু নির্বাচনের আচরণবিধির জন্য আমরা আপনাদের কিছু বলতে পারতেছি না।
“তবে আপনারা খিচুড়ি খাবেন সে ব্যবস্থা আমি করে দেব। সবাইকে ধন্যবাদ, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
এ সময় জনতা ‘ধন্যবাদ’ ‘ধন্যবাদ’ বলে হাততালি দেয়।
এরপর তিনি আবার বলেন, “আর খিচুড়ি যে খাবেন সেই ব্যবস্থা আমি করে দিয়ে গেলাম। আমি যাওয়ার পরে আপনারা সেইটা (টাকা) দেইখেন।”
তখন তিনি নিজের প্যান্টের পকেট থেকে টাকা বের করে বাঁ পাশে দাঁড়ানো নজরুল শিকারীর হাতে টাকা তুলে দেন। উপস্থিত কর্মীরা তখন নিক্সনের মার্কা ‘ঈগল’ ‘ঈগল’ বলে স্লোগান দেন।
অন্যদের মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান হাবিবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালার ১(৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা, অনুদান, ইত্যাদি প্রদান নিষিদ্ধ। কোনো প্রার্থী কিংবা তাহার পক্ষ হইতে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে উক্ত প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা উক্ত এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো প্রকার চাঁদা বা অনুদান প্রদান করিতে বা প্রদানের অঙ্গীকার করিতে পারিবেন না।
এ ছাড়া আচরণ বিধির ১৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, বিধিমালার বিধান লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।- (১) কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে এই বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফরিদপুরের ডিসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তথ্য-প্রমাণসহ কেউ অভিযোগ দিলে আইননুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভিডিওতে কী দেখা গেছে, সেটা জানিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কোনোভাবেই কোনো প্রার্থী বা তার কোনো লোক প্রকাশ্যে বা গোপানে কাউকে টাকা দিতে পারেন না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।”
এ ব্যাপারে জানতে রাতে নিক্সন চৌধুরীর মোবাইলে ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আর ঈগল প্রতীকের প্রধান নির্বাচনি সমন্বয়ক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “এমন ঘটনা হয়েছে কি না জানি না।”