স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেছেন, গ্রেপ্তারের সময় এক পুলিশ সদস্য আঘাত করলে রমিজ মিয়া নামের ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
Published : 17 Apr 2024, 12:01 AM
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকা বুরুঙ্গাছড়ায় পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়াভুক্ত এক আসামির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেছেন, গ্রেপ্তারের সময় এক পুলিশ সদস্য আঘাত করলে রমিজ মিয়া নামের ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
তবে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ বলছেন, গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে রমিজ ‘পালিয়ে’ যান। পরে ‘অসুস্থ হয়ে’ তার মৃত্যুর খবর তারা পেয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের বুরুঙ্গাছড়া এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই এলাকাতেই রমিজের বাড়ি। তার বাবার নাম এরাব আলী।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন খন্দকার লিটন বলেন, তাহিরপুর থানার ট্যাকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই মো. জিয়াউর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য পরোয়ানাভুক্ত আসামি রমিজকে গ্রেপ্তার করতে সন্ধ্যায় বুরুঙ্গা ছড়া গ্রামে যান।
“পুলিশ দেখে ওই আসামি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন নারিকেলের ডাউগু দিয়ে আসামির পিঠে আঘাত করে এএসআই জিয়ার সঙ্গের এক পুলিশ সদস্য। তাতে রমিজের নাকমুখ দিয়ে রক্ত আসে। সাথে সাথে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায় বলে স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছে।”
নিহত রমিজ মিয়ার স্ত্রী জোসনা বেগম বলেন, "আমার স্বামী বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে দোকানে ছিল। বিকালে মোটরসাইকেলে দুইজন লোক আইয়া দোকানের সামনে নামে। পরে একজন তাকে নাম জিগাইলে আমার স্বামী নাম কওয়ার পরেই বুকে জুড়ে থাপা মাইরা শার্টের কলারে ধরে।"
তার অভিযোগ, "পরে তারে কেন ধরা হইছে কইলেই, ওই লোক আমার স্বামীরে চড়থাপ্পড় মারতে মারতে টানতে টানতে গাড়িতে তুলতে চায়। এ সময় আমার স্বামীর নাকেমুখে রক্ত আইয়া অজ্ঞান হইয়া মাটিতে পড়ে গেলে ওই লোক পুলিশ কইয়া মোটরসাইকেলে উইঠা ফালাইয়া যায়। এই পুলিশের মারধরের আমার স্বামী মারা গেছে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।"
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, তিনি খবর পেয়ে রমিজের মরদেহ দেখতে বুরুঙ্গা ছড়ায় গিয়েছিলেন। রমিজ ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন বলে তিনি ‘শুনেছেন’।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এএসআই জিয়াউর রহমান আসামিকে আঘাত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, রমিজ মিয়ার নামে তাহিরপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলায় একটি ওয়ারেন্ট রয়েছে।
“ধরতে গেলে ঘটনাস্থল থেকে রমিজ মিয়া পালিয়ে যায়। তাকে ধরতে না পেরে আমি থানায় চলে আসি।”
তাহিরপুর থানার ওসি মো. নজিম উদ্দিন বলেন, “রমিজ মিয়ার নামে তাহিরপুর থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে কীভাবে মারা গেল আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।”
পুলিশের ধাওয়ায় বা পুলিশের মারধরে রমিজের মৃত্যু হয়নি দাবি করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন দাস বলেন, “গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে বিকেলে ধাওয়া করে পুলিশ। তিনি পালিয়ে যান। পরে তিনি মারা গেছেন।”
জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহও একই কথা বলেন। তার ভাষ্য, “পুলিশের আঘাতে বা ধাওয়ায় আসামি মারা যায়নি।”
পরে রাত পৌনে ১১টায় জেলা পুলিশের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশ বুরুঙ্গা ছড়া গ্রামে রমিজের চায়ের দোকানে যায় তাকে ধরতে।
“পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে উক্ত আসামি দৌঁড়ে তার বাড়ির/দোকানের পেছন দিকে পালিয়ে গেলে পিছু পিছু এএসআই জিয়াউর রহমান সঙ্গীয় ফোর্সসহ বুরুঙ্গাছড়া গ্রামে আসামির বাড়িতে উপস্থিত হলে আসামিকে আর খুঁজে না পেয়ে ট্যাকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে চলে আসে। পরবর্তীতে জানা যায় যে, উল্লেখিত আসামি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
তাহিরপুর থানার ওসি মো. নজিম উদ্দিন মৃত রমিজের মৃতদেহ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানোর কথা বললেও রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত লাশ পৌঁছায়নি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম।