পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার, চড়ে গেছে ভাড়া

“টানা ছুটিতে মানুষ বেশি এসেছে তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ এভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।“

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 04:14 PM
Updated : 7 Oct 2022, 04:14 PM

দুর্গাপূজা আর ঈদে মিলাদুন্নবীর সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে প্রায় পাঁচ দিনের বন্ধে লাখো পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত; তবে সব জায়গাতেই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। 

হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করলেও জেলা প্রশাসন বলছে, তারাও বিষয়টি জেনেছেন। যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। 

ঢাকা থেকে পাহাড় ও সাগর দেখতে বেরিয়েছেন পর্যটক রিফাত। তিনি বান্দরবান ঘুরে এসেছেন কক্সবাজারে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে কথা হয় কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে।

তিনি বলেন, “চার দিন আগে বান্দরবান থাকতে কক্সবাজারের ২৫টা হোটেলে অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো হোটেলই পাইনি। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার হিলটনে রুম পেয়েছি, তবে এক রুম এক রাতের জন্য চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

“কিন্তু এর আগে এই হোটেলে অনেকবার রাত্রিযাপন করেছি মাত্র দুই হাজার টাকা ভাড়ায়। টানা ছুটিতে মানুষ বেশি এসেছে তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ এভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।“

তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে হোটেল হিলটনের ব্যবস্থাপক ঊর্মি বড়ুয়া বলেন, “তাদের কক্ষ ভাড়া সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। এর বেশি নেওয়া হয় না। বেশি বললে এটা অপপ্রচার।”

তবে কক্সজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, “অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। বিষয়টি খুব অন্যায়। এ ব্যাপারে সমিতি ও প্রশাসন যৌথভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

দুর্গাপূজার দশমী উপলক্ষে গত বুধবার ছিল সরকারি ছুটি, শুক্র ও শনিবার সরকারি অফিসে সাপ্তাহিক ছুটি, রোববার রয়েছে ঈদে মিলাদুন্নবীর সরকারি ছুটি। মাঝখানে যারা বৃহস্পতিবারও অফিস থেকে ছুটি নিতে পেরেছেন তারা পাঁচ দিনের ছুটি পেয়েছেন।

এই ছুটি উপভোগ করতে অনেকেই পরিবার নিয়ে ছুটেছেন বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। অনেকে এখান থেকে যাচ্ছেন সেন্ট মার্টিনে। চলতি মৌসুমে এই পর্যটকদের নিয়েই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপে।  

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজারে ৫২৬টি হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন রাত্রিযাপন করতে পারে প্রায় সোয়া লাখ পর্যটক।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতজুড়ে দেখা যায় মানুষের ভীড়। গোটা এলাকা মানুষে ঠাসা।

তীব্র গরম উপেক্ষা করে পর্যটকরা শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছেন নোনাজলের ঢেউতে। সাগর কিছুটা শীতল আর ঢেউয়ের তীব্রতাও কম। তাই ঢেউয়ে মেতেছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা ইপ্সিতা ইয়াছমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এখানে প্রচণ্ড গরম। তারপরও টানা ছুটিতে কক্সবাজার আসলাম বাচ্চাদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য। খুব ভালো লাগছে। সমুদ্র যেন মন ও মনন জুড়িয়ে দিচ্ছে।”

আরেক পর্যটক ফরিদা বেগম জানালেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে খুব আনন্দ হচ্ছে।

“এই আনন্দ আরও বেশি উপভোগ করা যেত যদি হয়রানির শিকার হতে না হতো। এখানে যানবাহন থেকে শুরু করে খাবার হোটেল- সবখানে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে, ফায়দা লুটছে।”

লাবণী পয়েন্টে পর্যটক তৌহিদ হোসেন বলেন, “টানা ছুটি কিংবা কোনো উৎসব হলেও কক্সবাজারের হোটেল, রিসোর্ট বা গেস্ট হাউসগুলো কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বার্মিজ পণ্যের দোকান ও যানবাহনের চালকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে মেতে উঠেন।

“স্থানীয় বলে তারা আবার পর্যটকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেও ভুলেন না। তবে এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।”

‘হোটেল অভিসার’ নামের একটি আবাসিক হোটেলের দুই হাজার টাকার কক্ষের ভাড়া সাড়ে আট হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তৌহিদুল ইসলাম।

এই পর্যটকের অভিযোগ, “যেখানে তারকা মানের হোটেলের ভাড়া পাঁচ হাজার সেখানে সাড়ে আট হাজার টাকা নেওয়া অত্যন্ত খারাপ। তার সঙ্গে একদিনের জন্য রুম ভাড়া দিতে রাজী নন কর্তৃপক্ষ; দুই দিনের জন্য ভাড়া নিতে হবে। এটা অন্যায়।”

যদিও হোটেল অভিসারের প্রধান নির্বাহী জসিম উদ্দিন বলেন, “আমাদের একটি কক্ষের ভাড়া একদাম ছয় হাজার টাকা। এর কম-বেশি হবে না।”

সৈকতে আরও কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, হোটেল থেকে শুরু করে খাবার দোকান সব জায়গাতেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ দেখার নেই; কোথাও অভিযোগ দেওয়া যায় না। এই প্রবণতা পর্যটনের জন্য ক্ষতিকর।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেল ছাড়া অন্য কোনো আবাসিক হোটেল ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকার বেশি ভাড়া নেওয়ার কোনো তথ্য উল্লেখ্য করে না।

কক্সবাজারের শুল্ক বিভাগের (ভ্যাট) সুপার মুজিবুর রহমানের কাছে ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের কক্ষ ভাড়া কত উল্লেখ করা হয় তার তথ্য চাওয়া হলেও তিনি তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না বলে জানান।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, “টানা চার-পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। তাই এই ছুটিকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছে। সুনির্দিষ্টভাবে সংখ্যা না জানলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, কক্সবাজারে লাখো পর্যটক অবস্থান করছেন।”

তিনি আরও বলেন, “হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছেও এসেছে। এ ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত কোনো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। তবে ছাড় কম দেওয়া হচ্ছে এই ধরনের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা।”

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “তবে এ ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যদি সুনির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি-মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”