আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় চিকিৎসক।
Published : 30 Oct 2023, 03:45 PM
ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় আন্দোলনরত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় ইটপাটকেল, কাঁদুনে গ্যাস ও পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে শ্রমিক ও পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ও সাভারের হেমায়েতপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে শিল্প পুলিশ-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুর বারী জানান।
এদিকে আন্দোলনের মুখে বেশ কয়েকটি কারখানা একদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত এনভয় গার্মেন্টসের শ্রমিক নজরুল ইসলাম, ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের শ্রমিক সীমা আক্তার, পথচারী বিমল শীল ও মজনু মিয়ার পরিচয় জানা গেলেও অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, সকাল ৮টার দিকে কাজে যোগদানের পরপরই কারখানার ভেতরে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। এ সময় কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা সড়কে বের হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে ১০টার দিকে ফের সড়ক অবরোধ করে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
জামগড়া এলাকার ভার্চুয়াল গার্মেন্টসের অপারেটর মোসাম্মত লাইলী বলেন, “বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে আর আমরা যে মজুরি পাই তাতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
“বাসা ভাড়া, বাজার খরচ, চিকিৎসা ও সন্তানদের লেখাপড়া খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কারখানার মালিকরা আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো কথা না বলায় শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেছে।”
তিনি আরও জানান, শ্রমিকরা সকালে কারখানায় প্রবেশ করে বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের কারখানাসহ সেতারা, এনভয়, দি রোজ, এম ডিজাইন, হলিউড, উইন্ডি, পাইওনিয়ারসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। পরে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুর বারী বলেন, “সকাল থেকেই কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসে। আমরা একপাশ থেকে তাদের সড়ক থেকে তুলে দেই। আবার অন্য পাশ থেকে তারা নেমে পড়ে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
বেরণ এলাকার নারী ও শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক জয় ভট্টাচার্য বলেন, “গুলিবিদ্ধসহ আহত অবস্থায় অন্তত ২০ শ্রমিককে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। এদের মধ্যে চার থেকে পাঁচজনকে গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট) অবস্থায় পেয়েছি।
“তাদের মধ্য নজরুল ইসলাম নামে এক শ্রমিকসহ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে আশুলিয়ার বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ করে আসছিল। দাবি আদায়ে সকালে ১০ থেকে ১৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিক সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে।
এ সময় পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে; এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে সকালে সাভার হেমায়েতপুরের পদ্মারমোড় এলাকায়ও বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক কাজে যোগদান না করে ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায় তারা।
সাভার চামড়া শিল্পনগরী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রাসেল হোসেন মোল্লা বলেন, বেতন ভাতার দাবিতে কয়েক দিন ধরেই হেমায়েতপুর পদ্মার মোড়ের দীপ্তা অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা আন্দোলন করছে।
“সকাল ৮টার দিকে ওই কারখানার কিছু শ্রমিক আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন। এ সময় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, ব্যাবিলন গ্রুপ গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেন।
“পরে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বেশ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সড়কে সাঁজোয়া যানসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান।