ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে তিন দিন আগে সমাগম শুরু

শনিবার এই সমাবেশ হবে শহরতলীর কোমরপুরে আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট মাঠে।

শেখ মফিজুর রহমান শিপন. ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2022, 02:47 PM
Updated : 10 Nov 2022, 02:47 PM

বিএনপির ফরিদপুরের সমাবেশের নির্ধারিত তারিখের তিন দিন আগে থেকে কর্মী-সমর্থক-নেতারা আসতে শুরু করেছেন।

এদিকে এই সমাবেশের একদিন আগে জেলা শ্রমিক লীগ শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে।

আগামী শনিবার [১২ নভেম্বর] ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগীয় এই সমাবেশ হবে শহরতলীর কোমরপুরে আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট মাঠে।

বুধবার রাতে প্রথম দল হিসেবে শরীয়তপুর থেকে কয়েকশ নেতাকর্মী আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট মাঠে পৌঁছেছেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপি দশটি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে তাদের কর্মসূচি। তার আগে সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হবে।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খোকন তালুকদারের নেতৃত্বে বুধবার রাত ১০টার দিকে শরীয়তপুরের দলটি সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছে। এ সমাবেশে আগতদের জন্য খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করেছেন আয়োজকরা।

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সদস্য গাউসুর রহমান জানান, বুধবার রাত ৮টার দিকে তারা চারটি ট্রাকযোগে শরীয়তপুর থেকে রওনা দিয়ে রাত ১০টার দিকে গণসমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেন। তাদের সঙ্গে খোকন তালুকদার ছাড়াও শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহানদার আলীসহ নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।

নেতা খোকন তালুকদার জানান, প্রথম দল হিসেবে রাতে শরীয়তপুরের নেতা-কর্মীদের একটি মাত্র অংশ এখানে যোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আরও নেতারা আসবেন। প্রায় ৫/৬ হাজার নেতা-কর্মী শরীয়তপুর থেকে এই সমাবেশে যোগ দেবেন। তারা সভাস্থলেই রাতযাপন করছেন।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইসতিয়াক আরিফ বলেন, “বিএনপি তাদের কর্মসূচি পালন করবে; আমরা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি করব। এখানে তাদের সমাবেশেকে আমরা কেনোভাবে বাধাগ্রস্ত করব না।”

তিনি অভিযোাগ করেন, বিএনপির কাজই হলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। তাই তারা প্রতিদিন ভুলভাল তথ্য গণমাধমে দিচ্ছে।

১১ নভেম্বর শহরের শেখ রাসেল স্কায়ার থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে তারা রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে গিয়ে সমাবশে করবেন বলে জানান।

ফরিদপুরের সমাবেশের সমন্বয়ক শামা ওবায়েদ বলেন, সরকার এই গণসমাবেশে আসা জনস্রোত বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। এজন্য নেতা-কর্মীরা আগেভাগেই সমাবেশস্থলে আসছেন।

তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে জেলা বাস-মালিক শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের সকল ধরনের পরিবহন ধর্মঘটে চলে গেছেন। এটা এই সমাবশকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা। তবে সরকারি দলের এই নোংরা চেষ্টা সফল হবে না।”

সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন এর আগে সাংবাদিকদের বলেন, ১২ নভেম্বর বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হবে। তবে যেহেতু পথে পথে নানা বাধা এবং গণসমাবেশে ‘জনসমাগম সংকুচিত করতে সরকার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে’ তাই নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই এই গণসমাবেশ চলবে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চলবে ফরিদপুরের এই বিভাগীয় গণসমাবেশ। এরপর প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশের মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শুরু হবে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার জানান, সমাবেশকে ঘিরে পুলিশের তৎরপরতা বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা, জনগণের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক দায়িত্ব নির্বিঘ্ন রাখতে পুলিশ কাজ করছে।

সমাবেশের মাঠেই চলছে রান্নাবান্না

পরিবহন ধর্মঘটকে মাথায় রেখে এরই মধ্যে নেতা-কর্মীরা ফরিদপুরের কোমরপুরে সমাবেশস্থল আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট মাঠে আসতে শুরু করেছেন।

মাঠেই চলছে রান্নাবারা। আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউট ভবন ব্যবহার করছেন বিশ্রাম নিতে।

এদিকে, সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার থেকে ফরিদপুরে ৩৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে শ্রমিক লীগ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের মাঝখানে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। মাঠে হাজারো নেতাকর্মী। একেক জন একেক দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মুখে রয়েছে উৎসবের আমেজ।

মাঠের পশ্চিম পাশে দেখা যায় টিন দিয়ে একটি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন মহিলাকে দেখা যায় পেঁয়াজ কাটছেন। পাশেই দশটি সসপেন প্রস্তুত করছেন বাবুর্চি। সসপেনগুলোতে পানি গরম করা হচ্ছে।

একসঙ্গে দুই হাজার লোকের জন্য খাবার প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রান্নার কাজে নিয়োজিত হেলানা বেগম।

সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, এই গণসমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। সমাবেশস্থল থেকে শহর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হবে এমন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।