কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত: ছাত্রলীগ নেতা ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত

৩০ জানুয়ারি এক সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে এ দুই শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়; কিন্তু তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2023, 01:20 PM
Updated : 7 March 2023, 01:20 PM

কর্তব্য পালনে বাধা, শিক্ষককে হেনস্তা এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক দুই বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

এ দুই শিক্ষার্থী হলেন লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. সালমান চৌধুরী হৃদয়। 

মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মো. সালমান চৌধুরী হৃদয় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। 

গত সোমবার ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩০ জানুয়ারি আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রক্টরিয়াল বডির কর্তব্য পালনে বাধা, শিক্ষককে হেনস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ ও মো.সালমান চৌধুরী হৃদয়কে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। 

গত ৩০ জানুয়ারি মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ ও মো. সালমান চৌধুরী হৃদয়ের বিরুদ্ধে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় এই দুই শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাদের সাময়িক বহিষ্কার করে।    

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বেশ কয়েক বছর ধরেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস ও তার অনুসারীরা ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার সমর্থকরা পদ পেতে ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। ছাত্রলীগে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় রেজার অনুসারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের সংগঠনের ব্যানারে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।  

Also Read: ‘অন্যদের বার্তা দিতে’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি বিলুপ্ত ছাত্রলীগের

Also Read: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাধ্যক্ষকে শাসানোর অভিযোগ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য থাকা একটি কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কয়েকজন নেতাকর্মী। অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীরা হলে অবস্থান করছে- এমন খবর পেয়ে ইলিয়াসের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে ছুটে যায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিসহ সৃষ্টি হয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণসহ দুই পক্ষের সমস্যা সমাধানে হলের প্রাধ্যাক্ষের কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রাধ্যক্ষ। 

আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের রুম থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ঘটনা সামাল দিতে এগিয়ে যান প্রক্টরিয়াল বডি। তখন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত কে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে শহীদ ধীরেন্দনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী মারতে তেড়ে যান বলে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান। 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য শিক্ষকরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ এ দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। 

এ ঘটনায় ১ ফেব্রুয়ারি এ দুই শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।  

এ ব্যাপারে ওইদিন সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, “আমরা প্রক্টরিয়াল টিম দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের বাধার সম্মুখীন হয়েছি। দুই পক্ষের উত্তেজনা থামাতে গেলে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর বেশি আর কী বলব?” 

ঘটনার পরবর্তীতে ‘তুই’ সম্মোধন করে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা এনায়েত উল্লাহ বলেন, “আমি এ রকম কিছুই করিনি। স্যার আমাদের দুই পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। সেখানে অনেকেই ধাক্কাধাক্কি ও আওয়াজ করছিল। স্যার হয়তো ভুল বুঝেছেন, তাই এমন কথা বলছেন।”

সালমান চৌধুরীর বলেন, “এগ্রেসিভ মুডে স্যারের সাথে কথা বলা যাবে না? এখন আমি যদি বলি- স্যার আমাদেরকে মারতে এসেছিলেন? সবকিছু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। আর স্যার যদি বলে থাকেন আমরা তাকে মারতে গিয়েছি, তাহলে এটা উনার ব্যক্তিগত কথা। আমরা এমন কিছু করিনি।” 

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মো. আমিনুর রহমান বলেন, “আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য কিছুদিনের মধ্যে হলে কমিটি ঘোষণা করব। তারই কার্যক্রম হিসেবে ওইদিন আমরা হলে গিয়েছিলাম। এ সময় কিছু উশৃঙ্খল অনুপ্রবেশকারী আমাদের কার্যক্রমে বাধা দেয়। তারা শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে।”